বাংলাদেশে ফুটবল আজ মৃত প্রায়। নতুন খেলোয়ার উঠে আসছে না। দেশের ক্লাবগুলো নির্ভর করছে বিদেশি খেলোয়ারদের উপর, আর দেশের জাতীয় দলের প্রধান ভরসা প্রবাসী বাঙালীদের সন্তানরা। যাদের জন্ম এবং বেড়ে উঠা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাদেরকে ঢাকায় এনে নাগরিকত্ব দিয়ে খেলানো চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে জাতীয় দলে। বর্তমান জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া এদের মধ্যে অন্যতম। পাইলাইনে আছে আরো কয়েক জন।
কাজী সালাউদ্দিনের পর আসলাম, মোমেন মুন্না, সাব্বির, নকীব, আলফাজ হয়ে মামুনূলেই কি শেষ বাংলাদেশে ফুটবল তারকা? এর জবাব দিয়েছেন,বাংলাদেশে প্রথম সার্ক চ্যাম্পিয়ান দলের অন্যতম সদস্য বাল্যবন্ধু মিজানুর রহমান ডন। জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা খেলোয়ারের মতে, যত দিন না বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা ডিএফএ তে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদবন্টন বন্ধ হবে, ততদিন বাংলাদেশে ফুটবলের উন্নতি হবে না। এর ব্যাখ্যায় ডনের ভাষ্য হলো, ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি কমিটিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় সভাপতি সাধারন সম্পাদক নির্বাচন করা হয়, যাদের অধিকাংশইকোন ক্রীড়াসংগঠক নন। এমনকি খেলাধুলাতেও তাদের তেমন আগ্রহ নাই। শুধু মাত্র বাফুফে নির্বাচনে কোন এক পক্ষের ভোট বাড়ানোর জন্য বাফুফের প্রভাবশালী কর্মকর্তাগণ এমনটি করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে অপেশাদার কতৃপক্ষের আধিক্যের কারণে অধিকাংশ জেলাতে ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হয় না। আর জেলায় জেলায় টুর্নামেন্ট না হলে, নতুন খেলোয়ারও তৈরি হবে না, এইটাই স্বাভাবিক। আবাহনী, মোহামেডানের অন্যতম সাবেক এই খেলোয়ারের মতে ৬৪ জেলায় যদি জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়ারদের দায়িত্ব দেওয়া হয় অথবা নির্বাচনের মাধ্যমে ডিএফএ কমিটিগুলো গঠন করাহয়, তাহলে দেশের ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব। কারন, একজন ফুটবলপ্রেমী খেলোয়ারের পক্ষেই সম্ভব জেলায় জেলায় ফুটবল লীগ বা টুর্নামেন্টগুলোর আয়োজন করা। অর্থ সংকটও তারা মোকাবেলা করতে পারবেনস্থায়ীভাবে স্পন্সর সংগ্রহের মাধ্যমে। তখন সচল হবে গ্রাম-বাংলায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ খেলা।এক সময় ঢাকা লীগের পর, চট্রগ্রাম, সিলেট, এমন কি রাঙ্গামাটি লীগও ছিল জমজমাট। ঐ সময়কার দেশসেরা খেলোয়ারেরা অংশগ্রহন করতেন এসব লীগে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনে (বাফুফে) ১৩৯ ভোটের মধ্যে মেজরিটি ভোট পেয়ে জয়ী হওয়ার আশায় ৬৪ জেলায় অদক্ষ, অসাংগঠনিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দিয়ে কমিটি করা ছাড়াও শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানিক কোটায়ও(বিশ্ব বিদ্যালয় ও বুয়েট) রয়েছে অপেশাদায়িত্বের মনোভাব। যেমন, ঢাকা আবহানীর ফুটবল প্রশিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি করানো হয় যেন, ঐ ক্লাব থেকে কেউ বাফুফেতে নির্বাচন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটটি নিশ্চিত হয়।
গত ৩০ এপ্রিল কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও ফিফা ও এএফসির অনুমতি নিয়ে এখনও তাঁরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকবার নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা করা যায়নি।
অবশেষে নির্ধারিত হয়েছে বাফুফের নির্বাচনের তারিখ। আগামী ৩ অক্টোবর নির্বাচন হবে হোটেল সোনারগাঁওয়ে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেই জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফিফা ইতিপূর্বে বলেছিল,পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্বাচনের আয়োজন করতে। সেই মোতাবেকনির্বাচনের তারিখ নির্ধারন হয়েছে বলে জানা যায়।
৩ অক্টোবর নির্বাচনে ১৩৯ জন ডেলিগেট বা ভোটার ভোট দিতে পারবেন। বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য এবারের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাংগঠনিক অদক্ষতার কারনে গত ১২ বছর ফুটবলের অবনতি ছাড়া কোন উন্নতি হয়নি। ফিফার বিশ্ব–র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ২০০তম এর কাছাকাছি।
অর্থসংকটে ভোগা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে উঠাতে হলে ডিএফএতে ব্যাপক রদবদল করার পাশাপাশি ফুটবলকে ঢাকা কেন্দ্রীক করতে হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ১০টি করে ২০টি খেলার মাঠ তৈরি করা (স্টেডিয়াম নয়, ৩০/৪০ শতাংশ খেলা উপযোগী খালি জায়গা যা সিটি কর্পোরেশন সহজেই করে দিতে পারে),।ঢাকা পাইওনিয়ার ফুটবল লীগ থেকে একশত জন ফুটবলার নিয়ে ইউরোপের যেকোন দেশ থেকে স্বল্প খরচেপ্রশিক্ষক এনে বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এভাবে একটু একটু করে এগোলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এবং দশ বছরের মধ্যে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পরবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সুশিক্ষার পাশাপাশি একমাত্র খেলাধুলাই পারে একটি জাতিকে সঠিক পথেরনির্দেশনা দিতে। সমাজে খেলাধুলার প্রসার ঘটলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকেও জাতি মুক্তি পাবে। ইউরোপে বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে খেলাধুলাকে পেশাদায়িত্বের মধ্যে নিয়ে আসার কারণে।
আগামী ৩ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনে যে, ১৩৯ জন ভোটার রয়েছেন,তাদের অধিকাংশকে দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব এবং সেই প্রতাশ্য করাটা ভুল হবে। কারন, তাদের ঐ পদগুলিতে বসানো হয়েছেএকটি বিশেষ গোষ্ঠি বা ব্যক্তিকে নির্বাচনে জয়ী করানোর জন্য।
দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিছন্ন পরিকল্পনার করে এগিয়ে গেলেই ১৬ কোটির উপরে বসবাস করা মানুষের দেশ বাংলাদেশ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সম্মানজনক অবস্থানে চলে আসাটা তেমন কোন কঠিন বিষয় হবে বলে আমি মনে করি না। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। এসব বিষয়গুলিতে যদি সরকার এবংসচেতন মিডিয়া যদি বিশেষ সুদৃষ্টি এবং ভুমিকা রাখে, তাহলে বাংলাদেশওপৌছুতে পারবে কাঙ্খিত অবস্থানে।
– হাফিজুর রহমান মিতু
অনলাইন এক্টিভিস্ট