বোকার বেহেশতে সারাক্ষণ আনন্দ থই থই করছে। “আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী” এমন ঘোষণা আসার পর; বোকার বেহেশতের লোকেরা করোনা ভাইরাসকে ধমক দিয়ে বলে, রাখে নেতা মারে কে; অই করোনা গেলি; গেট আউট করোনা!
বোকার বেহেশতের প্রমোদনগরীতে স্থাপিত জীবাণু নাশক টানেল দেখে স্বাস্থ্য বিষয়ক কবি বলেন, করোনা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি; জীবাণু নাশক টানেল যেন ছাগল বাঁধা খুঁটি।
করোনা বিদায় আনন্দযজ্ঞে; উন্নয়নের কবি রাস্তা দিয়া হাঁইটা গেলে; বিরিয়ানি রান্নার জন্য কয়েকটি ছাগল বান্ধা হয় জীবাণু নাশক টানেলে।
শিক্ষা কবি বলেন, করোনা করোনা করে পড়ালেখার এতো ক্ষতি কী হতে দেয়া যায়; স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি বরং খুলে দেয়া যাক; একদিন শিক্ষকরা আসবেন; পরদিন শুধু শিক্ষার্থীরা আসবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; তাহলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলাও হবে; পড়ালেখা করে বোকার বেহেশত হয়ে উঠবে বোকাশ্রেষ্ঠ।
বোকাবাক্সের লোকেরা দেখে, সবাই করোনা বিদায়ে উল্লসিত; এখন তাহলে কী নিয়ে টকশোর কুস্তি করা যায়!
ইতিহাসান মামারা ইয়া বড়ো একটা “টাইম মেশিন” নিয়ে চলে আসে। তাতে সব বিভিন্ন নরকের গল্প ঠাসা। কেউ বোকার স্বর্গের সুখ অস্বীকার করলেই তাকে হাবিয়াহ দোজখের গল্প শুনিয়ে দিতে বোকা বাক্সগুলোতে ডাক পড়ে হাঞ্জব্যাক অফ গতরডাম্বদের।
এই গতর ডাম্বেরা উন্নয়নের ফাস্ট ফুড খেয়ে তা হজমের জন্য কারণে-অকারণে নরকের গল্প মেলে ধরে। যন্ত্র একটাই “ষড়যন্ত্রে’র গল্প হাজির করে তারা। বোকার বেহেশতের বিরুদ্ধে দোজখের ষড়যন্ত্র কতটা সাংঘাতিক ব্যাপার; সেটা বোঝাতে বোকা সিংহ এসে চোখ গোল গোল করে ষড়যন্ত্রের গল্প বলে। করোনা বিদায় আসরটি ষড়যন্ত্রের গল্পে গা ছম ছম করা রোমান্টিক রাত হয়ে পড়ে।
করোনা যখন নেই; তখন ইতিহাসানের ভাটের গল্পের পিঠাপুলির আসর আবার হোক; কতদিন রঙ্গভবনের পিঠাপুলি খাই না গো! আবদার করে বসে বোকার স্বর্গের জিডিপি রহমত ভাইয়েরা।
ভাস্কো ডা গামার ছোট ভাই মাস্কো ডা গামা; মস্কো থেকে খুশিজলের করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে তা মানবদেহে প্রয়োগের জন্য বোকার স্বর্গ উপমহাদেশের বন্দরে বন্দরে ঘুরতে থাকে। কোথাও দেখা যায় উটের মুত্রের ভ্যাকসিনে করোনা পালাবে এমন প্রচারণা চলছে। কোথাও বা গোরুর মুত্রের ভ্যাকসিনে করোনা দূর হবে এমন প্রচারণা চলছে। কোথাওবা বোকা বাক্সে কেঁদে কেঁদে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গর্বের গল্প চলছে।
করোনাও সুযোগ বুঝে জেঁকে বসেছে। ‘তাবদিলি’, ‘আচ্ছে দিন’ আর ‘দিন বদল’-এর মাদকাসক্তিতে বোকার স্বর্গ পাগল পারা। করোনা আমগো লগে পারলো না; আমরা করোনাকে এক হাত নিয়ে নিয়েছি; এমন পরমানন্দে গলাগলি ও ঢলাঢলি করে ঘুরতে থাকে বোকার স্বর্গের লোকেরা। আসমুদ্র হিমাচল আনন্দের খই ফুটছে। নিও নরমাল নয় এবার প্যারানরমাল জীবনের বারতা নিয়ে ডাক পিয়ন রঙ্গভবনে যায়। ডাকপিয়নের করোনা অসুখ করলেও সে; বুকে দেশপ্রেমের বল নিয়ে ঢুকে পড়ে বিদূষক-চক্রে।
সেখানে সবাই করোনা তাড়ানোর আত্মতুষ্টিতে আত্মহারা। চ্যালেঞ্জিং টাইম পার করা সেলফি কবি গর্বের সঙ্গে বলেন, কী বলেছিলাম না; আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী।
রাজ-ডাকপিয়ন প্রস্তাব রাখে, পরিস্থিতি স্বাভাবিকের বার্তা বোকা বাক্সে প্রচার না করে; বোকা খামে করে কবুতরের ঠোঁটে বোকাদের ঘরে ঘরে পাঠাই; যদি হুকুম দেন।
মাস্কো ডা গামা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়, বোকার স্বর্গে এই যে সুখের মাদকতা; সুখে মাতাল এই যে জনপদগুলো; এখানে তো খুশিজলের ভ্যাকসিন কাজ করবে না; এমনিতেই মাতাল যারা; তারা আর মাতাল হবে কীসে।
পথিমধ্যে মাস্কো ডা গামাকে মাস্ক পরে দেখে, এক পথিক কটাক্ষ করে, করোনা তো ডরে পলাইছে; তুই মাস্ক পইরা কেনরে গাধা।
অন্য বোকারা বিশ্বজয়ীর ভঙ্গিতে রগড় করে, এইডা তো দেখতেছি ফরেনার; এই জন্যে এতো বোকা। আমরা বাদ দিয়া বাকি দুনিয়াটা হইলো গবেট।
বোকার স্বর্গের চাঁদা শিল্পীরা করোনা-হামলায় শুকিয়ে মরছিলো যারা; তারা আবার বেরিয়ে পড়ে বোকার স্বর্গের সুখের কর আদায়ে।
বোকার স্বর্গের আচ্ছে দিন অঞ্চলের করোনাকালে প্রেম উথলে পড়ে দিন বদল অঞ্চলের জন্য। প্রেমের ভ্যাকসিন নিয়ে প্রেম দূত পৌঁছে যায়। গান গায়, যদি হিমালয় আল্পসের সমস্ত জমাট বরফ করোনায় গলেও যায়; তবুও তুমি আমার।
বোকার স্বর্গে প্রেমে আলুথালু হয়ে প্রেমিকের আত্মহত্যা করা একটা নিয়মিত ঘটনা। ফলে প্রেমিকের বেচায়েন দশা দেখে প্রেমিকা বলে, বিশ্বাস করো লক্ষীটি, আই লাভ ইউ। আমার মাথা খাও; তবু আত্মহত্যা করোনা তুমিটি।
করোনা শব্দটি শুনে প্রেমিক ফ্যাকাশে চোখে তাকায়। করোনা বিদায়ের এই ক্ষণে করোনা শব্দটি মুখেও এনো না লক্ষীটি।
বোকার স্বর্গের নিয়মিত ধর্ম ও রাজনীতির ক্যাসিনোগুলো করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায়; বোকাদের সময় আর কাটছিলো না যেন। ঘৃণার দোকানগুলোর ‘হটডগ’ বিক্রিও প্রায় বন্ধ হবার জোগাড় হয়েছিলো। করোনা বিদায়ের খবর পেয়ে জিডিপি জুয়াড়ি আর ঘৃণা-মামারা মিলে ঝুলে আবার ধান্দা শুরুর জোগাড় যন্ত্র করে; যন্ত্র ঐ একটাই “ষড়যন্ত্র” চেপে ধরে।
মাস্কো ডা গামা এই বোকার স্বর্গের খোয়াড়ি দেখে মস্কোতে ফোন করে জানায়, এইখানে প্রেমের ভ্যাকসিন আর ভক্তির মাস্কে এরা করোনাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এরা নিজেরাই নিজেদের তৈরি উষ্ঠ্রমূত্র-গোমূত্রের ভ্যাকসিনে স্বয়ংসম্পূর্ণ গিনিপিগ সমাজ গড়েছে। এইখানে খুশিজলের ভ্যাকসিন প্রয়োগের মতো মানবদেহ আর কোথায়!
– মাসকাওয়াথ আহসান
সাংবাদিক, সাংবাদিকতার শিক্ষক
এডিটর-ইন-চীফ, ই সাউথ এশিয়া