মুক্তিযুদ্ধের পরপরই আমাদের প্রাইমারী স্কুলে যখন সাহায্য হিসেবে মার্কিন কাপড় বিলাতি পাউডার বা দুধ পাউডার দেয়া হতো ঠিক সেই সময়টাতে রিলিফ চোর কম্বল চোর আর চাটার দলের কথা খুব শুনতাম । ভাল করে বুঝতামনা । কিন্তু এটা জানতাম যে এরা চোর । এদের দলের হাতেগোনা দুই একজন বাদে প্রায় সবাই দেশের মানুষের জন্যে বিদেশ থেকে আনা রিলিফ চুরি করে খায় ।
কিছুটা বড় হয়ে জেনেছিলাম এদের এক নেতা নাকি লবণ চুরি করে বিক্রি করে দিত তাই তাকে লবণ চোরা বলে ডাকা হতো । সেই নেতা নাকি ভোটে দাঁড়ালে এলাকার মানুষ বটগাছে লবণের বস্তা বেঁধে নিচে তাঁর নাম এবং মার্কা লিখে দিত । ব্যাস অমনি মানুষের মনে পরে যেতো সেই লবণ চোরার কেচ্ছা । যথারীতি সেই জাঁদরেল নেতা পুনঃ পুনঃ ধরাশায়ী হতেন । সেইসব কারনে তাঁদের দলও দীর্ঘ একুশ বছর ক্ষমতা বঞ্চিত হয়ে বিরোধী দল হিসেবেই পরে ছিল ।
অবশ্য তখন কিন্তু আজকের মতো রাতের বেলার ভোটের পদ্ধতি বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভোটের সিস্টেম চালু ছিলনা । সেই কালে বেশ শক্ত ভোটাভুটি হতো ।
সাম্প্রতিককালে করোনা ভাইরাসের মহা দুর্যোগে সারা দুনিয়ার মানুষ যখন দিশেহারা তখন আবার শুরু হয়েছে ত্রানের চাল চুরি । রিলিফ চুরি । বাড়ীর মেঝে খুঁড়ে বের করে আনা হচ্ছে ত্রানের চাল । হাজার হাজার বস্তা চাল । চোর কিন্তু সেই একই দলের । ছোট বেলায় শোনা সেই চাটার দলের সন্তান-সন্ততি গুণমুগ্ধ ভক্তকুল এখন পরিণত হয়েছে রাক্ষসে । আর এই রাক্ষসের দল সেদিনের মতোই রাষ্ট্রীয় মদদে দলের আশকারায় দুই হাতে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে । নির্ভয়ে । এদের বলার কেউ নেই । সেদিনও যেমন কেউ ছিলনা । তবে হুংকার আছে। সেদিনও ছিল। যেমন বলা হচ্ছে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা , সহ্য করা হবেনা , আমি দল দেখবো না অপরাধ করে কেউ পার পাবেনা ইত্যাদি ।
এগুলো কিচ্ছুনা এসব আগেও ছিল এখনো থাকবে । বাখোয়াজ । ফালতু বুলি ।
সেদিনের সেই চাটার দলের পরিণতি কি হয়েছিল তাতো আমরা সবাই দেখেছি । আজকেও সেই চাটার দলের উত্তরসূরি রাক্ষসের দল যা করছে তার পরিণতি যে কি হবে তা কেবল ভবিতব্যই বলতে পারে । আমরা কেবল নিজের মতো করে কিছু একটা অনুমান করতে পারি । কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এসবের চূড়ান্ত মুল্য কেবল তারাই পরিশোধ করেনা দেশবাসীকেও সেটার জন্য চরম মুল্য দিতে হয় । দুঃখ শুধু এটাই ।
আপনারা ভাল থাকবেন । ভাল থাকবার চেষ্টা করবেন ।।