সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত ‘ঐতিহাসিক চুক্তির’ কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চুক্তির আওতায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের আরও ভূমি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা ইসরায়েল স্থগিত করবে বলে জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির
যুক্তরাষ্ট্র, আমিরাত ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা পুরোপুরি শান্ত করার জন্য এই চুক্তির আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট টুইটারে এই চুক্তিকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে বলেন, আমাদের দুটি মহান বন্ধুদের মধ্যে এই চুক্তি হওয়ায় আমি খুশি। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তিটি ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার ফসল।
তবে এটি ফিলিস্তিনি নেতাদের বিক্ষুব্ধ করেছে। গাজাকে নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এটিকে “আমাদের জনগণের পিছনে ছুরিকাঘাত” বলে অভিহিত করেছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো আরব দেশের এই চুক্তি ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতা ঘোষণার পর মাত্র তৃতীয় ঘটনা। এর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৭৯ সালে মিসর ও ১৯৯৪ সালে জর্ডান চুক্তি করেছিল। মরিতানিয়া ১৯৯৯ সালে ইস্রায়েলকে স্বীকৃতি দেয় তবে পরে গাজায় ইস্রায়েলের যুদ্ধের কারণে ২০০৯ সালে সম্পর্ক শেষ হয়।
উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগুলোর কারও সঙ্গেই ইসরায়েলের কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রায় সবাই ইসরায়েলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রেখেছে।
ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হিব্রু ভাষায় টুইট করেছেন, ‘ঐতিহাসিক দিন’।
ইউএইর দূত ইউসুফ আল ওতাইবা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটা কূটনীতির জন্য জয়, এই অঞ্চলের জয়’। তিনি বলেন, আরব-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি যা আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাবে এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে শক্তি জোগাবে।’
বিবিসির খবরে আরো বলা হয়, ইসরায়েল ও ইউএইর চুক্তির ধারাবাহিকতায় আগামী সপ্তাহগুলোতে এই দুই দেশের প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি ফ্লাইট, নিরাপত্তা, টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং পারস্পরিক দূতাবাস প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার জন্য বৈঠকে বসবেন।
ফিলিস্তিনের প্রবীণ কর্মকর্তা হানান আশ্রাবি টুইটারে বলেছেন, এই চুক্তি পশ্চিম তীরে ইস্রায়েলের দখলকে স্থায়ী করে দেয়।তিনি লিখেছেন: “দখলদারিত্বের শুরু থেকেই ইস্রায়েল অবৈধভাবে এবং অবিচলভাবে ফিলিস্তিনের প্রতি কি করছে তা প্রকাশ্যে না জানার জন্য পুরস্কৃত হয়েছিল।”
১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ফিলিস্তিনী ভূমিতে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইসরায়েল। ওই বছরই আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডসহ বেশ কিছু আরবভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরপর ১৯৬৭ সালে আরব জোট-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রায় পুরোটাই ও মিসরে সিনাইয়ের কিছু ভূমিও দখল করে ইসরায়েল।