নিজস্ব প্রতিবেদক
এবারের নির্বাচনে ৮টি অঙ্গরাজ্য নির্ধারণ করবে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। দেশটির ৫০টি স্টেটে একসঙ্গে ভোট হলেও সবার দৃষ্টি থাকে ভোটযুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত গোটাকয়েক অঙ্গরাজ্যের দিকে। এগুলোকে দোদুল্যমান রাজ্য বলা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এবারে এমন আটটি অঙ্গরাজ্যকে চিহ্নিত করেছেন যেগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, ওহাইও, মিশিগান, উইসকনসিন, আইওয়া, অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলাইনারই এবারে হোয়াইট হাউজের বাসিন্দারা নির্ধারণ করে দেবেন।
এক নজরে ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন ব্যবসায়ী ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। নিউইয়র্কের কুইন্সে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
জন্ম: ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন, নিউইয়র্কের জ্যামাইকা হসপিটাল মেডিকেল সেন্টার।
বাবা-মা: বাবা আবাসন ব্যবসায়ী ফ্রেডরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্প ও মা স্কটিশ বংশোদ্ভূত ম্যারি অ্যান ম্যাকলিউড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দাদা ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন।
শিক্ষা: ট্রাম্প নিউইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে স্কুলজীবন শেষে প্রথমে ফোর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দুবছর পর সেখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ার্টন স্কুল অব ফিন্যান্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক আমেরিকার রাজ্যগুলো লাল ও নীলে বিভক্ত। যেসব রাজ্যে ভোটার দুই দলেরই প্রায় সমানে সমান। সেখানে ভোটাররা সাধারণত প্রার্থী ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতার ওপর নির্ভর করে ভোট প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
এক নজরে জোসেফ রবিনেট বাইডেন
জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, জো বাইডেন হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জন্ম: বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তাঁর বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
বাবা-মা: বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তাঁর মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
শিক্ষা: বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
এবারে নির্ধারিত এমন আট দোদুল্যমান রাজ্যে ১২৫টি ইলেকট্রোরাল ভোট রয়েছে। স্টেটগুলোর মধ্যে পাঁচটিতে সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন। দুটিতে ট্রাম্পের অবস্থান ভালো।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, ফ্লোরিডায় দুই প্রার্থী অনেকটা সমানে সমান লড়ছেন। ফ্লোরিডায় ইলেকট্রোরাল কলেজের ভোট ২৯টি। নির্বাচনে যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে বাইডেনের অবস্থা বেশ ভালো। ওহাইও ও আইওয়াতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ট্রাম্প।
এর বাইরে এবার জর্জিয়া ও মিনেসোটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি একটি জরিপে লালদুর্গ বলে পরিচিত টেক্সাসে জো বাইডেনের এগিয়ে থাকাও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। গত ১০০ বছরে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে এই ফ্লোরিডায় জয়লাভ ছাড়া প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব হয়নি।
২০১৬ সালে তিনি ১ পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েছিলেন। ফলে এবারের নির্বাচনেও ফ্লোরিডায় জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি ট্রাম্প। কিছু জরিপে বাইডেন এগিয়ে তো কয়েকটিতে ট্রাম্প।
ফ্লোরিডার এক গ্যাস স্টেশনে কাজ করেন শাওন প্রজা। তিনি বলেন, ট্রাম্প ফ্লোরিডার ভোটার। এখানকার বেশিরভাগ প্রকৃত আমেরিকানরা ট্রাম্পকে পছন্দ করে। তারা এই রাষ্ট্রটিকে তৃতীয় বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় না। তাই তারা ট্রাম্পকেই ভোট দেবে। ১৪ ঘণ্টা দৈনিক কাজ করি। বেশিরভাগই ট্রাম্পের সমর্থক দেখি। অধিকাংশ সুইং স্টেটে ট্রাম্পের জয় হবে বলে মনে করি কারণ সেখানকার মানুষ যোগ্যতা দেখে ভোট দেবেন।
নিউইয়র্কের বাইডেন সমর্থক ব্যাংক কর্মকর্তা সুজন আফজাল বলেন, যদি কোনো কারণে ফ্লোরিডা না পাওয়া যায়, তবুও বিরাট জয় পাবেন বাইডেন। তিনি এবার রেড স্টেট বলে পরিচিত টেক্সাসেও জয়ী হবেন। পেন্সিলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন নিশ্চিভাবে জয় পাবেন বাইডেন।
এই স্টেটগুলোর ইলেকট্রোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা যথাক্রমে ২০, ১৬ এবং ১০টি। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের জরিপ অনুযায়ী টেক্সাসে ৩ পয়েন্টে এগিয়ে বাইডেন। ধারণা করা হচ্ছে, হিস্পানিকদের ভোটে এগিয়ে গেছেন বাইডেন। ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের পর সেখানে আর কোনো ডেমোক্রেট জয় পাননি।
কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট? দেশটির খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ অধ্যাপক অ্যালেন লিখটম্যান জানিয়েছেন তার পূর্বাভাস। তিনি বলছেন, প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির এই ইতিহাসের অধ্যাপক ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের ফল আগে থেকেই বলে দিয়েছেন।
২০০০ সালের নির্বাচন বাদে সবগুলো একেবারে সঠিক হয়েছে। যদিও ওই বছরের নির্বাচনটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সমাধান হয়েছিল। আল গোর হেরেছিলেন রিপাবলিকান জর্জ বুশের কাছে। অ্যালেন লিখটম্যানের এই বিশ্লেষণ ভোটারদের উপরে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ২৭০টি ইলেকট্রোরাল কলেজ ভোটের প্রয়োজন। সেখানে তিনি মনে করেন বাইডেন পাবেন ৩০৭ থেকে ৩১০টি।
এক নজরে ইলেকটোরাল ভোট
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য রয়েছে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ ভোট
অঙ্গরাজ্যপ্রতি সংখ্যা নির্ধারণ—কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের সংখ্যা + ২টি সিনেট আসনের জন্য দুটি ভোট
কারা থাকেন—দুই দলের নির্ধারিত একটি করে নির্বাচক দল (স্লেট)
সাধারণত কোনো অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বিজয়ী হন, তাঁর দল নির্ধারিত স্লেটটি বিজয়ী হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় (ব্যতিক্রম: মেইন ও নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্য)
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের সোমবার (এবার ১৪ ডিসেম্বর) ইলেকটোরাল কলেজের সভায় গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন নির্বাচিত ভোটারেরা
আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট গণনার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে
মোট ভোট সংখ্যা—৫৩৮
বিজয়ী হতে প্রয়োজন—২৭০