আজকাল বিশেষ একটি শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নামক শব্দ দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
কথার ফাঁকে যেখানে সেখানে, যে কোনো প্রসঙ্গে এই ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শব্দগুলোর উল্লেখ প্রায়ই শোনা যায়। দুঃখ জনক হলো সত্যি , অনেককে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে ঠিক এর বিপরীত কাজ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধ যেমন কোন একটি দল বা বিশেষ শ্রেণি পেশার মানুষের একা নয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ও কোন দল বা বিশেষ শ্রেণি পেশার মানুষের একা নয়।
যে সব ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের মানুষ তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ ছিল এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল, সাধারণত সে গুলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা হয়ে থাকে। এই ছাড়া ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র সবচেয়ে বড় দলিল ঐতিহাসিক ছয় দফা, স্বাধীনতার ইশতেহার এবং স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেখানে প্রথমত আসে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা। নিজের ভাষা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসহ আলাদা পরিচয় বাঁচিয়ে রাখা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙালিদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র সত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মাহুতি এবং শুধু উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষাকেও পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি আদায় এর দৃশ্যমান উদাহরণ।
আর একটি বড় চাওয়া ছিল, অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান।
একাত্তরপূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুই অংশ, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে কেবল যে ১৩০০ মাইলের ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল, তা নয়। এই দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান এবং বৈষম্যও ছিল প্রকট। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ২৪ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্যের ভারে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে পাকিস্তানের এই দুই অংশের মধ্যেকার পর্বতসম অর্থনৈতিক বৈষম্য এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। উন্নয়ন বাজেটের দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান সবসময় বঞ্চিত ছিল। পাকিস্তানের প্রায় ৬০% মানুষ পূর্ব পাকিস্তানি হলেও এ অংশে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এখন যেমন কথায় কথায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র কথা বেশি বেশি আলোচনা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে এই বৈষম্যের কথা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে।
এছাড়া বাঙালি সম্প্রদায় যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করত, তাদের সরকারি দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করা হতো। তাদের প্রতি পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা ইত্যাদির ফলে বাঙালিরা পাকিস্তানের অন্য নাগরিকদের তুলনায় নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করত।
পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা উপরিউক্ত সমস্যা সমাধানে প্রথমত দাবি উত্থাপন করে স্বায়ত্ত শাসনের। অর্থাৎ নিজেরা নিজেদের শাসন করবে পাকিস্তানি রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে থেকে। এ প্রত্যাশা পূরণের আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বল প্রয়োগের মাধ্যমে সেই দাবি দমিয়ে রাখতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে। একপর্যায়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে নিজস্ব সংস্কৃতিক স্বকীয়তা রক্ষা, অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান এবং নানা ধরনের সামাজিক অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য তাদের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রকাঠামো প্রয়োজন। যার শাসন ও পরিচালন ভার নিতে হবে তাদের নিজেদের হাতে। এই ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। সে কারণে বাঙালি জাতি ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাতে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।
১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলায় পরবর্তী নাম মুজিবনগরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ৭০ নির্বাচনে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যগন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করে প্রবাসী সরকার গঠন করে। এই সরকার ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে। ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণাবলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকার বৈধ বলে বিবেচিত হয়। গঠিত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়,
যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং
যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; এবং
যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন; এবং
যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছাচার এবং বেআইনিভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; এবং
যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; এবং
যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং
যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; এবং
যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্য এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলেছে; এবং
যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে;
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং
এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং
রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং
তার কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং
বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন।
বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করব।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম।
দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান ভূখণ্ডের পূর্ব পাকিস্তান অংশ আলাদা হয় এবং সেখানে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশটির নাম দেওয়া হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের শাসন করার অধিকার সহ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র , যেখানে বাঙালিরা নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা নিয়ে সব ধরনের বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার ভিত্তিতে সৃষ্ট বাংলাদেশের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ;
প্রথমত, বাংলাদেশ হবে জনগণের দেশ এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত দেশ, অর্থাৎ গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত দেশ।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ হবে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত, অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত। অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িক সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক দেশ।
নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন হবার পর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ৭২ সালের সংবিধান রচনায় এ চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। যেমন সংবিধানে বলা হয়েছে,
সংবিধানের প্রস্তাবনা: তৃতীয় প্যারা
‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে;’
প্রথম ভাগ: প্রজাতন্ত্র
১) বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত হইবে।
৭।(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্ব কার্যকর হইবে।
এর বাহিরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বা চেতনা কি ছিল?
এখন দেখি স্কুলের পাঠ্য বইয়ে ‘ও,তে ওলকচুর জায়গায় ওড়না বা ‘অ,তে অজু কর চাপা হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়। ওয়াজ মাহফিলে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। ওয়াজ মাহফিল করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়। মসজিদে খুতবা কারো পছন্দ নাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী হয়। কোন টেলিভিশন চ্যানেলের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়।
নির্বাচনে কারচুপি বা ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে কথা বললে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। একক কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কথা বললে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগ তোলা হয়। মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে কথা বললে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কথা হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঐতিহাসিক সাত দফা, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার, যে নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় প্রবাসী সরকার গঠন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়েছে, স্বাধীনতার ইশতেহার বা স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে, “বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি।”উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও কি হেডেন বা অপ্রকাশিত কোন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ যুক্ত ছিল?
এ কে এম বেলায়েত হোসেন কাজল