পুরো একটা মানব জনম কেটে যায় কমফোর্ট জোন খুঁজতে খুঁজতে কিংবা তৈরি করতে করতে। অথচ মোটিভেশনাল স্পিকাররা খালি জিকির করে,”কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন”, “কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন”! আমার তো মনে হয় না, মানুষ তার একটা জীবনে কমফোর্ট জোনের দেখা পায়। যেটাকে আমরা কমফোর্ট জোন ভাবছি, সেটাও তো সাময়িক সময়ের জন্য। চিরস্থায়ী কিছু তো নেই জগতে। এমন কি কমফোর্ট জোনটাও সব সময় কমফোর্ট জোন নয়, এরও যন্ত্রণা রয়েছে।
তাছাড়া কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসেই কেন সব সময় সফলতা খুঁজতে হবে? পৃথিবীতে হরেক রকম মানুষ রয়েছে। অনেকেই আছেন, যারা কমফোর্ট জোনের মধ্যেই নিজের সর্বোচ্চ পারফর্মেন্স দেখাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি অবশ্যই তার নিজস্ব কমফোর্ট জোনের ভেতরেই থাকতে চাইবে। কিন্তু মোটিভেশনাল স্পিকাররা দুনিয়ার আট বিলিয়ন মানুষের জন্য একটাই সাধারণ রেসিপি রেখেছে, সেই ” কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন”, রেসিপি।
বাংলাদেশে অনেক দক্ষ, যোগ্য, শিক্ষিত, মেধাবী তরুণই কাজ করতে আগ্রহী নয়। কারণ এখানে কাজের পরিবেশ নেই, যোগ্য ব্যক্তির মূল্যায়ন নেই, অদক্ষ মূর্খ সুযোগসন্ধানীদের জয়জয়কার চারিদিকে। তাই মেধাবী তরুণরা তাদের কমফোর্ট জোন খুঁজে নিয়েছে ১ম বিশ্বের দেশগুলোতে। সেখানেও কাজের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ বরং কাজের গুণগত মানকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এখন সেইসব প্রবাসী তরুণেরা কোন যুক্তিতে তাদের কমফোর্ট জোন ত্যাগ করে এই ডিসকমফোর্ট জোনে ফিরে আসবে? এটা তো ঠিক তৈলাক্ত বাঁশের বানরের অংকের মতো একটি জোন, যেখানে দুই হাত উপরে উঠলে তিনহাত নিচে নেমে যেতে হয়!
আদিম যুগের মানুষের কথা ভাবি, তারা নিজেদের কমফোর্ট জোনের জন্য গুহা খুঁজে নিয়েছে। এরপর আরো উন্নত কমফোর্ট জোন তৈরি করেছে আগুনের ব্যবহার শিখে, ঘর বানাতে শিখে। যতই মানুষ উন্নত হয়েছে, ততই সে এক কমফোর্ট জোন থেকে আরেক উন্নত কমফোর্ট জোনের দিকে এগিয়ে গেছে। মোটিভেশনাল স্পিকাররা যে মুখস্থ বুলি আওড়ায়, তারা কি ভেবে দেখে না, মানুষ মূলত আরো উন্নত কমফোর্ট জোন খুঁজে বেড়ায়! সেই কমফোর্ট জোনের জন্যই স্ট্রাগল করছে প্রতিনিয়ত। মানুষ কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে নয়, বরং একটা কমফোর্ট জোনের জন্যই আরো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। একটা জন্ম কেটে যায় এই কমফোর্ট জোনের সন্ধানে। সেখানে “কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসুন”, এমন বুলি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।