সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট : কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথাকথিত মোবাইল কোর্টের অভিযানে ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা অভিযোগে কারাদন্ড দিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। দেশব্যাপী বহুল আলোচিত সেই ঘটনার মূল অভিযুক্ত কুড়িগ্রামের সে সময়কার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের পক্ষে সাফাই গেয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব থেকে এডমিনিস্ট্রেটিভ এসেসিয়েশনকে চিঠি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান সোমবার এক ফেইসবুক পোস্টে এই অভিযোগ করেন।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের একটি অংশের সভাপতি আহসান হাবিব নীলু ঢাকার ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ কে বলেন, তারা এই চিঠিটি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস এসোসিয়েশন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে যাতে তিনি (সুলতানা পারভীন) পার পেয়ে যান সে জন্য নয়, বরং পুরো ঘটনায় তারা ‘ন্যায়বিচার’ চেয়েছিলেন। নিউ এজ (০৬.০৯.২০) জানায়- দু’মাস আগে প্রেরিত চিঠিতে ঐ প্রেসক্লাব কর্মকর্তা বলেছিলেন যে সুলতানা পারভিনের বিচার করার আগে সরকারের উচিত হবে কুড়িগ্রামে তার অবদান ও উন্নয়নমূলক কাজের মূল্যায়ন।
এদিকে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চম ও শেষ দিনের মতো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এ ঘটনায় সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ করেছে। জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় মামলাটিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রায় প্রত্যেকের পৃথকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে তদন্ত কমিটি।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান সোমবার এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন-
আমাকে যখন জেলা প্রশাসনের তথাকথিত মোবাইল কোর্টের অভিযানে ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মিথ্যা অভিযোগে কারাদন্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয় তখন দেশের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রেসক্লাব এবং বিএমএসএফ সহ সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়। আমি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এসব জানতে পারি। তখন দেশ জুড়ে ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হলেও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিবাদ জানায়নি এবং সদস্য না হওয়ার কারণ দেখিয়ে আমার এলাকার লোকজনদের প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করার অনুমতি দেননি এর শীর্ষ এক নেতা। তাতে আমার আক্ষেপও নেই। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সেই প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আমার ঘটনার মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে এডমিনিস্ট্রেটিভ এসোসিয়েশনকে চিঠি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমি সংবাদকর্মী হয়ে জীবননাশী ঘটনার শিকার হয়ে প্রেসক্লাবের কোনও সহায়তা না পেলেও আমার ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সেই প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জেলার একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসেবে এর বিচার কার কাছে চাইবো???
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসায় হানা দিয়ে তাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকিসহ ডিসি অফিসে এনে নির্মম নির্যাতন করা হয়। এরপর অধূমপায়ী আরিফের কাছে আধাবোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই এক বছরের কারাদন্ত দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। পরে ১৫ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে কুড়িগ্রামের তদানীন্তন ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দীন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। একইসঙ্গে এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয় এবং ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। এদিকে একই ঘটনায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের দায়েরকৃত ফৌজদারী মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।