সেই সময়, সুনীলের বই। সম্ভবত ওখানেই পড়েছিলাম।বিছানায় অক্ষম মেয়েমানুষ পাশে থেকে কিভাবে বিছানার কাfজে স্বামীকে যোগান দিতো। বইটা এখন আর খুলেও দেখতে ইচ্ছে করছে না। আমার ভেতরের যন্ত্রণাকাতর অনুভূতির জন্ম দিয়েছেন আমার পিতা। বই পড়তে শিখিয়ে।বাবা জানতেন না এই দেশ এখনো এইসব তৃতীয় নয়নের মানুষদের ধারণই করতে শিখেনি। শিখেছে বৈধতা কাতর হতে। তবুও এরই নাম বৈধতা। ওতে পাপ হয় না।
বাবার অসুস্থতার কারনে পুরুষ ওয়ার্ডে মা একটা বসার টুলের ওপর ঠায় বসে থাকতেন আর বাবাকে বাড়তি অক্সিজেনের যোগান দেয়ার জন্য সারাটা জীবন হাতপাখার বাতাস দিতেন। এই করে আর ক’দিনই বা একটা মানুষকে জীবিত রাখা যায়।বাবা একটু অসময়েই চলে গেলেন। অমানবিক শ্রমের মাশুল তো মাকে দিতেই হয়েছে। বৈধতার মোড়ক মাকে রেহাই দেয়নি ভোগান্তি থেকে। তো
মুশতাককে চলে যেতে হোলো, আইনের বৈধতার মোড়কে মানুষ ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন রেখে চলে যায়।কিশোররা চোখের জলে ধারণ করেন আপাদমস্তক একটা ভয়াবহ আইনকেই। তাও নাকি বৈধই সেটা।
চারপাশের এতো এতো বৈধতায় কিছু মানুষ ভয়ানক মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই খাবি খায়। আস্ত মানুষটাই একদলা অসুখ হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে গিয়ে আরও কয়েক দফা অসুস্থ হয়। কৃষিতে মনোযোগ কম হলেও শিল্পে মনোযোগ অনেক বেশি রাষ্ট্রের। ওষুধ চাষে কাঁচা টাকা।অসুখও এখানে চাষই হয়। রোগীর চাইতে ওষুধ কোম্পানির লোকের প্রতিই যেন ডাক্তারের দায়বদ্ধতা বেশি।এই করে করে সভ্যতার বুলি আওড়ানো গেলেও ঠিক সভ্য হওয়া যায় না। হাসপাতাল গুলো আর মসজিদ মন্দিরের চাকচিক্যই প্রমাণ করে একটা সমাজ কতোটা অসুস্থ।
অসুস্থতা ভরা বিশ্বাস নিয়ে কোনো লেখা পড়ে শেয়ার কিংবা লাইক দিতে গেলেই আমি মুশতাকের লাশ দেখি। কিশোরের যন্ত্রণায় বিদ্ধস্ত ছবি দেখি। টর্চারের বর্ণনা মনে পড়ে দিনকে দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। অথচ আমি বিশ্বাস করি ফেসবুক অবশ্যই একটি জোরালো সামাজিক মাধ্যম।
এখানেও দেখি কেউ কোটি টাকায় বাড়ির গেইট বানায় আবার কেউ ঘুমানোর জন্য খোলা আকাশটাই বেছে নিতে বাধ্য হয়। একটা স্বাধীন দেশের মানুষ এইগুলোও খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিতে শিখে গেছ।
– ইলা ওয়াদ্দেদার, লেখক