একদিন ছিল যৌথ পরিবার, ছেলে তার বৌকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে সেখানেও ইতস্ততা ছিল। বউকে নিয়ে বিদেশে যাওয়া সেও এক বিপ্লবের ছিল। প্রথা ভেংগে এখন এটাই স্বাভাবিক হয়েছে যদিও যৌথ পরিবার কতখানি শক্তিশালী ছিল নিরাপত্তা নিয়ে আজ সেটা সবাই উপলব্ধি করছে। তবে এখন
একক পরিবারের সুবিধা বা স্বাধীনতা নেবার অভ্যস্ত জীবনে সবাই আসীন।
তেমনি সতিদাহ , বাল্যবিবাহের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে বিবাহ করার ক্ষেত্রে নানান ধর্ম-গোত্রের যে আবর্তে নিয়ম কাননের শাসন ছিল তাও শিথিলের দিকে।
আবার নতুন নিয়মের দ্বারস্থে অভিভাবক কূল। প্রাশ্চ্যাত্যের নিয়মে সন্তান আঠারো বয়সের হলে তাদের ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে মানা হয়। এই সন্তানেরা নাগরিক হিসাবে আর্থিক সামর্থ্য পেলেই পরিবারের সাথে থাকে না, নিজেদের চলার উপর তাদের আত্মনির্ভরতা বাড়ে।আমাদের প্রাচ্যের অভিভাবকের মতন প্রাশ্চাত্যের অভিভাবকগণ দুশ্চিন্তা করেন না সন্তান কেমন আছে এই সব নিয়ে। কারণ আর্থিক নিরাপত্তা বা করে খেতে পারছে সন্তান এইটুকুই তাদের বিবেচ্য। আমরা যারা বিদেশের মাটিতে আছি আমরা আমাদের সন্তানদের আগলে রাখতে ব্যাস্ত, কিছুতেই
যেন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন যা আমাদের দেশের লোকাচারের জন্যে বরাদ্দ তা থেকে আমাদের সন্তানরা যেন বিচ্যুত না হোক কামনা করে যাই।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না, আর সেটাই যে স্বভাবিক সেটা মেনে নেবার মানসিকতা আমাদের অভিভাবকদের মধ্যে গড়ে তুলা চাই।
আমরা আসলেভেঙ্গে পড়ি মানুষের নিন্দার ভয়ে, আমার ঘরের সন্তান চাকরি পাওয়া মাত্র ছেলে বা মেয়ে হোক একটু স্বাধীনচেতা হলে তারা বাবামার ঘরে থাকছেন না। নিজস্ব বলয়ের চিন্তাধারায় তাদের জীবনকে উপলব্ধি করতে চায়। প্রথম দিকে আমরা ঘটনার এই সত্যতাকে আড়াল করে নিজেদের ব্যাথাগুলো অতিক্রান্ত করি। কিন্তু দিনে দিনে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের
এই সব ঘটনাবলী ঘটে স্বাভাবিক হয়ে অনুকূলে চলে আসছে।
প্রথমত দেখতে হবে তারা শিক্ষা পাচ্ছে খোলামেলা পরিবেশ থেকে, কোন আড়াল করা নেই আর শাসনের বেড়াজাল নেই- কোন জীবনকে তুমি মেনে নিবে? শুধু আইনের শাসন আছে, আর চরিত্রের সততার স্তম্ভে যাদের সাবলীল ক্রিয়াকর্ম দেখা যায় তারাই এই সমাজে সমাদৃত। ধর্মকর্ম আমরা এই জেনারেশনের অভিভাবকগণ করি আমাদের পরিবারের প্রথা ভিত্তিক হয়ে যার বিশ্বাসের মূলে ঘাটি হয়ে আছে প্রশান্তিরে নিয়ে। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না ধর্মের বাণীতে যা আছে তা কি আমাদের জীবনের সাথে ঠিক মিলাতে পারছি? আমাদের হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টানের টাইটেল আছে, সেই আচরনে নিজেদেরকে প্রকাশের করে রাখি। কিন্তু কেউ স্কলার নই বলে মূল সত্যের সুন্দরের দেখা পাই না যা দিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দিয়ে নিজেদের ঘরোনার পরিচয় তুলে ধরতে পারি। কারণ এখন কার সন্তানেরা অনেক মেধা সম্পন্ন, না বুঝে শুধু ধর্মের প্রথাগত দিক দেখেই তারা অনুসারী হতে চান না।
প্রতিটি ধর্মের দর্শনে কতটা মহত্ত্ব আছে তা যদি তারা দেখার তাগিদ পায় তবেই না জীবন চলার পথ তাদের জন্যে মসৃণ হতে পারে। আসলে আমাদের উত্তরসূরিরা এই যুগে চাপের সম্মুখীন আছে। তারা নিরাপত্তা পায় না আমাদের সমাজ সংসারে,কেউ মায়া বেধে কাছে টেনে নেয় না, কিন্তু পথ চলতে হবেই — চলতে চলতেই একদিন তারা কাংখিত পথ পেয়ে যাবে, সেখানের আলোতে নিজেদের তথা জগত সংসারকে চিনবে। ওদের জন্যে অনেক ভালোবাসার দুয়ার খুলে দেওয়া চাই, কারণ এই সন্তানরা শুধু আপনার নয়, আমার এবং আমাদেরই।
আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় এতোটুকুই। শুভ সকাল।
– ঝিলিমিলি
অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড।