করোনায় হার্ড ইমিউনিটি অর্জন হবে না – এত্তো বছরে এত্তো টিকায় ইনফ্লুয়েঞ্জায় হার্ড ইমিউনিটি পৃথিবীতে হয়নি। হয়েছে কি? আবার করোনা চট করে চলেও যাবে না – তাহলে সমাধান কি?
মাত্র ২ টি’তে সমাধানঃ পারবেন করতে? কেনো পারবেন না? অন্য কোন উপায় কিন্তু আমাদের নেই!
(ক) ১০০% ভাগ মাস্ক ব্যবহার ও দুরত্ব বজায় রাখা সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি সকলকে মানার ব্যবস্থা করুন – দেখবেন, করোনা সংক্রমন কমে যাবে।
(খ) করোনায় আক্রান্ত হলে মানুষ যেন পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় সেই ব্যবস্থা জোরদার করা – বাসায় সিলিন্ডারে এবং হাসপাতালে অ-নে-ক হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সহ পর্যাপ্ত অক্সিজেন – এখনকার মত অক্সিজেনের টানাটানি অল্প সল্প নয়। দেখবেন, কোরনায় মৃত্যু হার দ্রুতই কমে যাবে।
বর্তমান উর্ধ্বোমুখি করোনা সংক্রমণ, আসন্ন শাটডাউন কিম্বা চলমান আধা খেঁচড়া লকডাউন “শতভাগ মাস্ক” পরা নিশ্চিত করার জন্য ভালো সুযোগ – তবে এটা জাতীয় অভীষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য, কৌশল ও তদ্রুপ পরিকল্পনা এবং কর্মযজ্ঞের বিষয়। সুচিন্তিত জাতীয় মাস্ক ক্যাম্পেইন ও সুপরিকল্পিত বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে জনগণের শতভাগ মাস্ক ব্যবহার সুনিশ্চিত করা সামান্য “মেধা ও প্রজ্ঞা”র বিষয় – এবং দৃঢ় সংকল্প ও ঐকান্তিকতার বিষয়ও বটে। শুধু ঘোষনা দিয়ে বসে থাকলে কিছুই হবে না – করোনা’ও নিয়ন্ত্রন হবে না, তৃতীয় চতুর্থ ঢেউ এর পরে ঢেউ আসতেই থাকবে!
স্কুল কলেজ ভার্সিটি সহ ব্যবসা বাণিজ্য ও অন্যান্য সব কিছু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বন্ধ রাখায় এবং আরো বন্ধ রাখলে, আরো মারাত্মক আরো জটিল দীর্ঘ মেয়াদি কুফল অপেক্ষা করছে – তাই সাধ্যের মধ্যে, মন্দের ভালো খুঁজে নেওয়া ছাড়া কি অন্য উপায় আছে?
মনে রাখতে হবে আমাদের কাছে যথেষ্ট টিকা নেই, হবেও না সহসা সেই সক্ষমতা – তাই গরীবের টিকা হলো শতভাগ মাস্ক ব্যবহার ও করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা।
শতভাগ মাস্ক ব্যবহারে সংক্রমণ দ্রুতই কমে যাবে এবং অল্প কিছু দিনের মধ্যেই স্কুল কলেজ সহ সব কিছু খুলে দিতে পারবেন, তেমন বড় সমস্যা হবে না ইনশাল্লাহ – সংগে অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ মানাতে হবে, তাহলে এইসব হচপচ লকডাউন শাটডাউনের প্রয়োজন হবে না।
কি ভাবে কি করবেন সেই সিদ্ধান্ত কতৃপক্ষের – আমি মনে করি এই দুই’টি কাজ করা খুবই সম্ভব, মোটেও কঠিন নয় – তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়েন না, ওরা ৭ টাকার সার্জিকাল মাস্ক ৩৬৫ টাকায় কিনবে – বরং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিন, মনে হয় কাজ হবে।
করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ’এর ভয়াবহতা ভীতি ও বিধিনিষেধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের মধ্যে শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে, দিন খুলে সব কিছু – খুলে দিন। আল্লাহ ভরসা।
শুভ কামনা রইল।
+=====+=====+======+======+=====+
ফুটনোটঃ
১) ভাইরাসের প্রকৃতির উপরে নির্ভর করে হার্ড ইমিউনিটি (গনপ্রতিরোধ ক্ষমতা) অর্জন হবে কি হবে না। করোনা হলে বা টিকা নিলে ৩ মাস নাকি ৬ মাস বা ৯ মাস ইমিউনিটি থাকবে কিনা এখনো পুরাই অনিশ্চিত; বরং দ্বিতীয় বার কোরনা হওয়া বা টিকা নেওয়ার পরেও অনেক করোনা হওয়ার খবর আমরা জানি – নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরো বেশি হবে।
২) এদিকে করোনার ভ্যারিয়েন্ট প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েই যাচ্ছে – তাই হার্ড ইমিউনিটির আশা, পুরাই দুরাশা। তবে আগামী দিনগুলোতে করোনার (কোভিড-১৯) নতুন ভ্যারিয়েন্ট অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ করোনা’র শরীরে বা গঠনে ভয়ংকরতার আরো উচ্চে যাওয়ার টেকনিক্যাল ক্ষমতা প্রায় শেষের দিকে – কিন্তু আবার সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ভাইরাসের আগমন সময়ের ব্যাপার মাত্র, যা শ্বাসতন্ত্র বা নিঃশ্বাসের মাধ্যমেই সংক্রমিত হবে — তাই মাস্ক আরো বেশি কাজ বা রোগ প্রতিরোধ করবে।
৩) টিকা বেশি মানুষকে দিতে পারলে সংক্রমণ অনেক দ্রুত কমে – টিকা প্রাপ্ত মানুষ আক্রান্ত হলেও, মারাত্মক হয় না – হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে যায় – হাসপাতালে ভর্তি হতে হলেও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু টিকা তো প্রায় নেই।
৪) এমনকি অ-নে-ক টিকা দিতে পারলেও বাংলাদেশের মতো ছোট্ট দেশের অতি ঘন জনসংখ্যার জন্য মাস্ক আগামী অ-নে-ক দিন ব্যাবহার করতেই হবে। এবং
৫) করোনা নতুন বিষয় এবং মাস্ক পরা সুখকর নয় অথচ এই ধরনের সমস্যা প্রতিরোধে তেমন প্রচার প্রচারনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ এদেশেই কনডম বা জন্ম নিয়ন্ত্রন কিম্বা এইচআইভির মত স্পর্শকাতর বিষয়ে বা শিশু ও মায়েদেদের টিকা দেওয়া অথবা ওরাল স্যালাইন সহ অনেক বিষয়ে প্রচার প্রচারনা হয়েছে এবং পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি’ও হয়েছে, যা ভারতের চেয়ে বেশি! কিন্তু করোনায় সাধারণ মানুষের জন্য কি কি করা হয়েছে যে তাঁরা মাস্ক পরবেন – কেনো মানবেন অন্যান্য নিয়ম কানুন! কিন্তু ব্যাপক নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার প্রচারনা ও বিভিন্ন উদ্যোগে ৯০%+ মানুষের মাস্ক পরা সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ মানা অভ্যাসে পরিনত করা সম্ভব – আমাদের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস তাই বলে।
– ডা: আমজাদ আলী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
( লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছে, গুরুত্ব বিবেচনায় সোজা কথা ডটকম পাঠকদের জন্য ছাপা হলো। – সম্পাদক)