গতকাল ভিন্নমত দমনের প্রক্রিয়ায় আইনজীবী ও রাজনীতিক নিপুন রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর থেকে আর কোন আপডেট নেই। পুলিশ বা এলিটফোর্স না জানালে জানারও উপায় নেই ভিন্নমত দমনের কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে এই দমন-নিপীড়নমূলক জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে; জিডিপি রাজার দেশের মস্তিষ্ক প্রক্ষালন কক্ষে কী করে বেঁচে রইলেন নিপুন।
হেফাজতের ডাকা হরতালে সহিংসতা সৃষ্টির প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায়কে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছেন পুলিশ। নাগরিকের টেলিফোনে আঁড়িপাতা পুলিশি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের অবৈধ একটি অনুশীলন। সভ্য দেশে এরকম প্রচেষ্টার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রাইভেসি ভঙ্গ ও মানহানির দায়ে চার-পাঁচটি মামলা হয়ে থাকে। আর অসভ্য জনপদের ইউনিফর্ম পরা সরকারি নিপীড়কদের সাত খুন মাফ। একের মগের মুল্লুক বলা হয় বাংলা বাগধারায়।
শাল্লায় আল্লার ভীতি তৈরি হলো হেফাজত নেতা মামুনুলের উগ্র ভক্তদের মাধ্যমে; আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা স্বাধীন শাল্লার হিন্দুবসতিতে হামলা চালালেন হেফাজতের জোটসংগীদের নিয়ে। অথচ ফেসবুকে ‘মামুনুল অনুভূতি; সুতরাং ‘ইসলাম’ অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে গ্রেফতার হলো হিন্দু তরুণ আপন। গ্রেফতারি জারি হলো নিরীহ গ্রামবাসী নির্যাতনের আদিম পুলিশি পদ্ধতি ৬০০ জনের নামে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে; ভাই পলায়নে গেলো; বোন তার বাসনা হারালো এই ‘উদিত দুঃখের দেশে।”
আবার বেশ কিছুকাল ধরে বাংলা লিক্স লীগ ডিপ ফেইক অডিও তৈরি করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে আসছে। অনেক সময় মান্নার একটা লাশ ফেলার টেলিকথন রেকর্ড করে গোয়েন্দা সংস্থা তাকে জেলের ঘানি টানিয়েছে। অন্যদিকে হাজার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যার দায় নিয়ে রাষ্ট্রের ইউনিফর্ম পরে বুক চেতিয়ে ঘুরছে নজিরবিহীন এলিট ফোর্স। শতছিদ্রের ঝাঁঝর; টেলিফোনে আড়ি পেতে প্রতিপক্ষের সূঁচের একটি ছিদ্র খুঁজছে। একদলীয় সরকারের চড়ুইভাতিতে দিবসগুলোতে বিশেষ খাবার খেয়ে এতো চর্বি জন্মেছে বিদূষক-সান্ত্রী-সেপাই-খানসামাদের যে তারা এখন ফেইক মদিনায় হেফাজতের সঙ্গে মিলেঝুলে ধর্মীয় অনুভূতির সৌরভ ছড়াতে চায়। রাওয়ালপিন্ডির গোয়েন্দাদের মতো “মিলিটারি আর মস্কে”-র মক্কা মদিনা বায়েস্কোপে অনাথ তরুণের লাশ চিবিয়ে খাওয়ার নেশা হয়েছে ভাওয়ালপিণ্ডিতে।
এদের এই চর্বির চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পথে অন্তরায় ভিন্নমতের প্রতিটি কন্ঠস্বর। চেয়ার হারানোর ভয়ে কেরানি থেকে মন্ত্রী; ফুটসোলজার থেকে জেন্টলপার্ক মিলিশিয়া; এরা রোজ রাতের নৈশভোজে মানুষের ব্রেনমাসালা চায়, কানের ফ্রেঞ্চফ্রাইজ খেতে চায়; চোখের স্যুপ খেতে চায়; মানুষের পায়ের নেহারির জন্য লোভ চকচক করে। আর রাতের বিনোদনে গ্রেফতারকৃত ভিন্নমতের পুরুষদের প্রতি গে পুলিশের যৌন বিকারের নির্যাতন; ভিন্নমতের নারী বন্দী দেখে লালসার লালা মাখা লোল চর্ম জাঢ্য-জরদগব এই পাপিয়া ভাইরাসের খদ্দেরেরা নাতসি কিংবা পাকিস্তানী সেনাদের মতো উন্মাদ হয়ে যায় মস্তিষ্কের বিষাক্ত রিরংসায়। এ সেই একই বৃটিশ-পাকিস্তানি দখলদারদের মতো স্বদেশী থাগস অফ বেঙ্গল; যারা সেভেন ডেডলি সিনস-এ ধুঁকছে। ‘তনু-তনু খেলার নেশায় মাতোয়ারা লাইসেন্স টু কিলের ছোট খাট বুলেটের ঈশ্বরেরা।
প্রতিশ্রুতিশীল আইনজীবী নিপুন রায় চৌধুরী একেতো রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে হিন্দু সংখ্যালঘু; তার ওপর রাষ্ট্রদল আওয়ামী লীগের দেশে বিএনপির হিন্দু ধর্মীয় নেত্রী সংখ্যালঘু। তার বিরুদ্ধে আনা হয়রানিমূলক অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চাই; অভিযুক্তকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের আইনি রক্ষা কবচ দিতে হবে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রীতিলতা ইউরোপীয় ক্লাবে বোমা হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন আর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে বঙ্গবন্ধু তাই বলেছিলেন, ভিন্নমতের মানুষ; তারা যদি সংখ্যায় কমও হয়; আমরা তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবো; যৌক্তিক ভিন্নমত মেনে নেবো।
সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত ময়ূরপুচ্ছ করা কাকস্য পরিবেদনা লীগ গণতন্ত্রের প্রতিটি মৌল অধিকার হনন করে; নাগরিককে প্রজায় রূপান্তর করে; এই একবিংশে যে মধ্যযুগের ভিলেজ পলিটিক্সের জব্বারের বলি খেলায় মেতেছে; তা থেকে মুক্তি চাই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতা শব্দটিকে আমরা নাগরিকেরা খুঁজে পেতে চাই নিজের জীবনে। মুখ ঢেকে দেয়া উন্নয়ন বিজ্ঞাপন নয়; সভ্যতা কী তা শেখার তাগিদ হোক স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষের অভিজ্ঞান।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া