ঝিনেদা শহরের বেশ্যালয় তখন উচ্ছেদের আন্দোলন চলছে। সম্ভবত নারায়ণগঞ্জ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এখানে কাজটা শুরু হয়েছিলো। সেই উচ্ছেদের পক্ষে রাস্তায় একদিন কতিপয় বেসামাল প্রাণীর মিছিল দেখবার দূর্ভাগ্যও হয়েছিলো আমার। ঝিনেদা তখন নতুন জেলা হতে চলেছে। শেষ মহকুমা অফিসার ছিলেন জনাব শফিউল করিম সাহেব। তাকে যুবকই বলা যায়। তিনি এই উচ্ছদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। আমরা এবং আমি তো নিশ্চয় সেই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থানে ছিলাম। শফিউল করিম সাহেব সহ কয়েকজন মিলে গোপন সিদ্ধান্ত নিলেন,কোনো এক কাক ডাকা ভোরে হানা দেবেন শরীর কেনাবেচার ঐ নরককুণ্ডে। তৎকালীন একজন এম পি সাহেব এবং একজন ধর্মীয় নেতাকে তিনি সঙ্গে পেয়েছিলেন। তাদের দরকার ছিলো একজন নারী প্রতিনিধির। সেই দরকারে আমিও তাদের সঙ্গী হয়ে এক নরক দর্শনের সুযোগ পেয়েছিলাম। বলার অপেক্ষা রাখেনা,সে নরকই বটে। ভ্যাপসা গরমে,সে নরক আমার কাছে আরও ভয়ংকর এবং বিভৎস লেগেছিলো।
এক কাক ডাকা ভোরে জনবান্ধন জনাব শফিউল করিম সাহেব আমাদের সঙ্গে নিয়ে সত্যিই সেই নরকে হানা দিলেন। এবং ঢুকেই,অন্যদের কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রায় সব দরজা খুলে ফেলেছিলেন। তারপর সেখানে আমি যা দেখেছিলাম,তা দেখে আমার পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যেতে শুরু করেছিলো। আমি কোনোদিন আমার খুপ পরিচিত দুই একজন নারীকে বলতে পারিনি,কাজের কথা বলে তার স্বামী কোন্ নরকে সেদিন রাত্রিযাপন করেছিলেন। তবে আমি বলতে না পারলে কী হবে!সেই মহারথীরা আমাকে পারলে ভস্ম করে দেয়। আমার গোটা রাজনৈতিক জীবনে যে বিপদ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি,তখন প্রতিমুহূর্তে আমি এক অজানা আশংকায় সময় পার করতাম। আর মনে মনে ভাবতাম কী ভূতেই যে আমাকে সেদিন পেয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই হতভাগা শরীর বিক্রেতাদের পথে বসতেই হয়েছিলো। তাদের আমরা কিছুতেই বাঁচাতে পারিনি। লাভের লাভ কতিপয় কুৎসিত চেহারা আমার কাছে উন্মোচিত হয়েছিলো। এবং সেই নরককুণ্ডের জমি আজ ভোগদখল করছে পূতপবিত্র সেই সব মহারথীরা।
সম্প্রতি দেশ রুপান্তর পত্রিকা মুনিয়াকে নিয়ে একটা বড়সড় প্রতিবেদন(!) ছেপেছে। আজ আমার মনে হচ্ছে,প্রতিবেদন ছাপার নামে পত্রিকাটা এই যে ২১ বছরের একজন মেয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো,এর পিছনের কারণ কী। তারপর মেয়েটা আবার মারাও গেছে। কতবড় স্বার্থ থাকলে তবে এরকম একটা দুর্বৃত্ত দলে যোগ দেয় ওরা। এ কি শুধুই প্রতিবেদন,নাকি এর পিছনে পত্রিকাটার অন্য কোনো অভিসন্ধি আছে? বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ৬০ কোটি টাকার সুবাস(!)।
– তাহেরা বেগম জলি, সাবেক শিক্ষিকা, রাজনৈতিক কর্মী