সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম ফ্রান্সের কোনো একটি দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছিল।
তাই ২৭ বছর পর শিরোপার এতো কাছাকাছি এসে তা হাতছাড়া করতে চাইবে না তারা। কিন্তু লিসবনের এস্তাদিও দা লুজ স্টেডিয়ামে ফুটবলের মহারণের রাতে নেইমার-এমবাপ্পেদের ইতিহাস লিখতে দিল না বায়ার্ন।
ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে জার্মান চ্যাম্পিয়নদের সমৃদ্ধ ইতিহাসে আরও একটি পতাকা গাড়ল হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
পিএসজিকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘরে তুলে নিল বায়ার্ন মিউনিখ।
পিএসজিকে জেতানোর পণ নিয়ে তিন বছর আগে বার্সেলোনা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। অনেক সমালোচনা হয়েছিল তাঁর। অনেকে বলেছিলেন, টাকার জন্যই প্যারিস গেছেন নেইমার।
সমালোচনাগুলোর জবাব দেওয়া হয়নি। লিওনেল মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের মতো করে একটা ক্লাবকে ইউরোপসেরা করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের। তা-ও এমন ক্লাব, নয় বছর আগে কাতারের তেলেধন্য হয়ে ফ্রান্সে ছড়িয়ে ঘোরালেও ইউরোপে যারা নাদান। ইউরোপে যারা কূলীন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। যে স্বপ্নের সারথি ছিলেন নেইমার।
রোববার রাতে ম্যাচে শুরু থেকে সমানে সমানে লড়েছে দুই দল। বেশ কয়েকটি সুযোগও তৈরি করে দুই দলের খেলোয়াড়রা।
লিসবনে গোলশূন্য সমতা নিয়ে বিরতিতে গেছে দুই দল।
ম্যাচের ১৯ মিনিটেই লিড নিতে পারত পিএসজি। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি নেইমারের।
এমবাপ্পের কাছ থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে জালের উদ্দেশে পাঠালেও বায়ার্নের দেয়াল ম্যানুয়াল ন্যুয়ার এক পা বাঁধা দিয়ে কোনোমতে বলটা ফেরান। ফের টাচলাইন থেকে বলকে আলতো ছুঁয়ে গোলপোস্টের সামনে দেয়ার জোর চেষ্টা করেন নেইমার। এবারও ন্যুয়ারের কারণে নেইমারের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এবার নেইমারের দুর্ভাগ্য এসে জমা হয় রবার্ট লেভানডোস্কির কপালে। ২২ মিনিটের সময় ডি বক্সের মধ্য থেকে শট নেন লেভা। পরাস্ত হন গোলরক্ষক কেইলর নাভাসও। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। গোলরক্ষকের ভূমিকায় দেখা যায় গোলবারকে।
পরের মিনিটেই বল ছুটে চলে যায় বায়ার্নের রক্ষণে। সংঘবদ্ধ আক্রমণে ফের সুযোগ আসে পিএসজির। কিন্তু ডি মারিয়ার উত্তেজিত শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।
৩২ মিনিটে সহজ সুযোগ পায় বায়ার্ন। নাব্রির বুদ্ধিদীপ্ত ক্রস থেকে ডি বক্সে উড়ে আসা বলে হেড করে জালে জড়ানোর অভিনব এক শৈলি প্রদর্শন করেন লেভানডোস্কি। যদিও কেইলর নাভাস লেভার সেই হেডকে আর জালে জাড়াতে দেননি।
তবে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের এমবাপ্পের বোকামোকে হয়তো অনেকে পিএসজি সমর্থকের মেনে নিতে কষ্ট হবে। আন্দার এরেরার পাস থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে বল পেয়েও কোনাকুনি না খেলে গোলরক্ষক বরাবর মেরে দেন ফরাসি স্ট্রাইকার।
যা লুফে নিতে কোনোই বেগ পেতে হয়নি কেইলর নাভাসের।
ফলাফল গোলশূন্য সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে ফের শুরু হয় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। তবে এবার বায়ার্নকে একটু বেশি আক্রমণাত্মক দেখা গেছে।
পিএসজির ডেঞ্জার জোনে বল রেখে আক্রমণের ছক আঁকতে থাকে বায়ার্ন। ম্যাচের ৫৮ মিনিটের মাথায় আসে সফলতা।
জশোয়া কিমিচের তুলে দেয়া ক্রসে দুর্দান্ত হেড করে পিএসজির জালে বল জড়ান কিংসলে কোমান।
১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।
গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে উঠলেও ৬৬ মিনিটে ফের সুযোগ হাতছাড়া হয় এমবাপ্পের। ডি মারিয়ার এসিস্টকে গোলে পরিণত করতে পারেননি তিনি।
সমতায় ফেরার বদলে উল্টো ৮৩ মিনিটে বিপদে পড়ে পিএসজি। ডি বক্সের কাছাকাঠি গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান লেভানদোস্কি।
তবে ডিয়েগো সিলভা ফাউল করে গোল হজম করা থেকে দলকে বাঁচান। হলুদ কার্ড দেখেন তিনি।
বক্সের খুব কাছে থেকে স্পট কিক নিয়ে পোস্টের বাইরে বল পাঠান কৌতিনহো।
এভাবেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সমতায় ফিরতে পারেনি পিএসজি।
ফলাফল ১-০ ব্যবধানে জয় পায় বায়ার্ন মিউনিখ।
এ জয়ে ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তুলল বায়ার্ন। এর আগে ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ২০০১ ও ২০১৩ সালে মোট পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল জার্মানির এই ক্লাব।
স্বদেশী ক্লাব মার্সেইয়ের পাশে নাম লেখাতে পারল না পিএসজি। ১৯৯৩ সালে প্রথম এবং শেষবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছিল মার্সেই।
রেকর্ডও হলো। এই গোলটা চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্নের ৫০০তম। যে মাইলফলকে বায়ার্ন সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে শুধু দুটি ক্লাবকে – বার্সেলোনা (৫১৭ গোল) ও রিয়াল মাদ্রিদ (৫৬৭)!