হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউইয়র্ক থেকে
আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব (এবিপিসি)’র কমিটি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এক গ্রুপ বলেছে, যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ায় গঠিত কমিটি বৈধ হবে না।
তারা বলেছেন- নির্বাচন হবার কথা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। গঠনতন্ত্রের ২.১ ধারা মোতাবেক ৩১(৩০)নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান থাকায় সর্বশেষ সাধারণ সভায় ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ এর মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ২ সদস্য কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে পদত্যাগী কমিশনারের অজ্ঞাতে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত অমান্য করে ৮ জানুয়ারিতে ধার্য করা হয়,অথচ গঠনতন্ত্রের ১.৪.১ ধারা মোতাবেক ৩১ ডিসেম্বরের পরে কোন সদস্যের মেয়াদ থাকেনা এবং ভোটাধিকারও থাকেনা। এমন অন্যায়ের প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনের প্রভাবশালী সদস্য পপি চৌধুরী পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে সেই শুন্য পদে রীতি অনুযায়ী (২.২ ধারা মোতাবেক তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে) কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বিদায়ী কমিটির সভাপতি লিখিত আকারে এবিপিসির নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেও কোন সাড়া পাননি। এমন ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ‘রাশেদ-কাশেম পরিষদ’। আর সে সুযোগে কথিত দুই সদস্যের নির্বাচন কমিশন (?) পছন্দের কয়েকজনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছে ১ জানুয়ারি এক পত্রে। সেই পত্রে নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্য মিশুক সেলিম আর জাহেদ শরিফের স্বাক্ষর দেখা গেছে। অথচ ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন সদস্যের পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন ব্যতিত নির্বাচনের কোন কার্যকারিতা থাকতে পারে না।
এমন অভিমত পোষণ করা হয় এবিপিসির বিদায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সভাপতিত্বে ৩ জানুয়ারি ক্লাবের বিশেষ এক জরুরী সভায়। এতে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সদস্য ও চ্যানেল আইয়ের উত্তর আমেরিকাস্থ প্রধান নির্বাহী বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, ক্লাবের বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও এটিএন বাংলার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি কানু দত্ত, কার্যকরী সদস্য এবং যমুনা টিভির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি আজিমউদ্দিন অভি, সাংবাদিক ও ক্লাবের নির্বাহী সদস্য তপন চৌধুরী, বিশ্ববাংলা টোয়েন্টিফোর টিভির সিইও আলিম খান আকাশ। টেলিফোনে সভায় মতামত ব্যক্ত করেন বিদায়ী কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আবুল কাশেম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাহিত্য সম্পাদক রাজুব ভৌমিক, নারী পত্রিকার সম্পাদক ও অন্যায়ের প্রতিবাদে পদত্যাগকারী পপি চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্রুকলীন প্রতিনিধি শহিদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক রুমি কবীর, সাংবাদিক সুব্রত চৌধুরী, সাংবাদিক প্রতাপচন্দ্র শিল, কলামিস্ট-সাংবাদিক জামান তপন প্রমুখ। উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এবিপিসির বৈশিষ্টের পরিপূরক নবগঠিত আরেকটি সংগঠনের নির্বাহী সদস্য হওয়ায় মিজানুর রহমানের এবিপিসির সদস্য পদ বিলুপ্তির উপক্রম হয়েছে। একইভাবে অসাংগঠনিক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণে লিপ্ত থাকার জন্যে আরেকজনের সদস্যপদ কেড়ে নেয়ার বিধিও রয়েছে এবিপিসির গঠনতন্ত্রে। এসব বিষয়সহ সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে শীঘ্রই জরুরী সাধারণ সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সর্বসম্মতভাবে।
এ সভায় ক্যাটাগরিকেলি উল্লেখ করা হয় যে, এর আগে ১১ ডিসেম্বর এবিপিসির কার্যকরী কমিটির সভায় (নবান্ন পার্টি সেন্টারে) সাংবাদিক রুমি কবীর (আটলান্টা), সাংবাদিক প্রতাপচন্দ্র শীল (বোস্টন) এবং সাংবাদিক সুব্রত চৌধুরি (আটলান্টিক সিটি)’র সদস্য নবায়নের ফি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আলোচনার মধ্যে পাল্টা ক্লাবের হুমকি দিয়ে সভা বর্জনকারীদের (শহিদুল ইসলাম ও অন্য দু’জন) ব্যাপারেও লিখিতাকারে অবহিত করা হয় নির্বাচন কমিশনকে। তারা সভা বর্জন করলেও সেই সভা অব্যাহত ছিল এবং সেখানে উপরোক্ত ৩ জনকে সহ মোট ৩৪ ভোটারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সেই তালিকাও যথারীতি নির্বাচন কমিশনকে প্রদান করা হয়েছে ঐ সভার সভাপতির স্বাক্ষরে। সে সময়েও মৌখিকভাবে অবহিত করা হয় যে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে পুনরায় সাধারণ সভা আহবান করতে হবে। একইভাবে কমিশনের শুন্য পদ পূরনেরও পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন অনুরোধ, উপরোধে ন্যূনতম তোয়াক্কা না করে অসম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন গঠনতন্ত্র পরিপন্থিভাবে ১ জানুয়ারি একটি ফলাফল ঘোষণা করেছেন। এমন মতলবী ঘোষণাকে এবিপিসির সদস্যরা কখনো মেনে নিতে পারেন না। এ সভাও তা প্রত্যাখ্যান করছে। সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে আশা করা হয়েছে সোমবারের এ জরুরী সভা থেকে। স্মরণ করা যেতে পারে, সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করেছিল এই কমিশন। সে অনুযায়ী ‘রাশেদ-কাশেম পরিষদ’ মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলো। মনোনয়নপত্র গ্রহণের শেষ সময়ের কয়েক মিনিট আগে এক টেক্সট বার্তায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেই তফসিল বাতিল করেন। বাতিলের প্রাক্কালে মনোনয়নপত্র সাবমিটকারি ‘রাশেদ-কাশেম পরিষদ’র সাথে যোগাযোগের ন্যূনতম প্রয়োজনবোধ করেনি নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ সেটি বাতিল না করলে ‘রাশেদ-কাশেম পরিষদ’কে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করতে হতো। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিশুক সেলিম এবং কমিশনার জাহেদ শরিফের অভিসন্ধি ছিল ভিন্ন। সেটি চরিতার্থের অভিপ্রায়ে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খবর বাপসনিঊজকে আবুল কাশেম জানিয়েছেন, এবিপিসির সাংগঠনিক ঐক্য অটুট রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি একইসাথে এই সভা উদাত্ত আহবান রেখেছে। কার্যকরী কমিটির সভা চলাকালে পাল্টা ক্লাবের হুমকি দিয়ে সভা বর্জনকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক পদক্ষেপ(ধারাঃ১.৪.৪)গ্রহণের বিকল্প নেই বলে মনে করছে এই সভা। সভার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশের কথা বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিভ্রান্তিকর কার্যক্রমের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করার জন্যে।