উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত নেতা কিম ইল সুং ও কিম জং ইলের স্বপ্নের সোনার দেশটির বর্তমান নেতা কিম জং উন পরিবারতন্ত্রের সোনা ফলিয়েছেন দেশটিতে। দাদা ও বাবার সোনার উত্তর কোরিয়া গড়ার স্বপ্নটিকে মুঠোয় পুরে কিম জং উন দেশটিকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গেছেন। দেশপ্রেমিক এই নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। যে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বছরে ১০০০ মানুষ হত্যা করে; সেই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় এলিট ফোর্সের হাতে মাত্র ৭০০ হত্যার জন্য; দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চোখ রাঙ্গায়।
এ প্রসঙ্গে উত্তর কোরিয়ার টিভি টকশোগুলোতে দেশপ্রেমিক উনের একনিষ্ঠ ভক্তেরা বলেছেন, আমৃকারে পুছিনা; সাম্রাজ্যবাদীদের গোণার টাইম নাই।
গত ১৭ ডিসেম্বর ছিলো উনের পিতা আধুনিক উত্তর কোরিয়ার রূপকার কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। কিম জং ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত নেতা কিম ইল সুং ও কিম জং ইলের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সাধারণ মানুষ। কে আগে ফুল দেবে সেই ধাক্কাধাক্কিতে সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মাথা ফেটে যায়। ভবিষ্যতে উন এদের হেলমেট পরে ফুল দিতে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হেলমেট ও হাতুড়ি হচ্ছে দেশসেবার প্রতীক। এই প্রতীককে সঙ্গে রাখো।
মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উন উত্তর কোরিয়াবাসীকে শপথ বাক্য পাঠ করান। উনের ছোট বোন কিম ইয়ো জং এসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দশম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এগারোদিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা আসে।
এগারোদিন বন্ধুর ফচকে কোনো কৌতুকে হাসতে পারেনি কেউ। তরুণীরা পারেনি খোশ মেজাজে শপিং করতে। এমনকি পানশালায় ঢুঁ মেরে দু’পাত্তর মারাও বন্ধ! কেউ মারা গেলে শোক প্রকাশও নিষিদ্ধ ছিলো। এভাবে দীর্ঘ ১১ দিন চলেছে।
উত্তর কোরিয়ার মানুষ গত ১১ দিন এভাবেই কাটিয়েছে। এমনটাই হুকুম দিয়েছিলেন দেশটির দুই নয়ন কিম জং–উন। দেশটির প্রয়াত নেতা কিম জং–ইলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশটিতে ১১ দিনের জন্য জাতীয় শোক পালনের নিমিত্তে এরকম হাসতে মানা ছিলো। মানা ছিলো সাধারণের মৃত্যুতে কান্না। কেবল কাঁদতে হয়েছে অসাধারণ নেতা জং-ইলের জন্য। এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে এমন আদেশ দিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়া রত্ন কিম জং উন। এরকম বড় বড় অপরাধে কারাগারেও যেতে হতে পারে এ কথা পঁইপঁই করে বলেছিলেন উত্তর কোরিয়ার উন্নয়নের রূপকার উন ভাই। এমনকী ফেসবুকে ‘হাহা’ ইমো দিলেও ‘লাফটার সিকিউরিটি এক্টে’ গ্রেফতারের ক্ষমতা পেয়েছিলেন নর্থ কোরিয়া পুলিশ ও এলিট ফোর্সের মাননীয় সাব ইন্সপেক্টরেরা।
শোক পালনের মাঝেই পিয়ংইয়ংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দেয়ালে গত ২২ ডিসেম্বর জং উনকে ‘বে-ন্মা’ সম্বোধন করে গ্রাফিতি আঁকা হয়। ওতে লেখা ছিল, ‘কিম জং উন, বে-ন্মা। লোকজন তোর জন্য না খেয়ে মারা যাচ্ছে।’
এই দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের হোতাদের খুঁজতে এলিট ফোর্স চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। বাসায় বাসায় গিয়ে হাতের লেখা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কে লিখেছে ঐ গ্রাফিতি তা খুঁজে বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
ক্ষমতা গ্রহণের দশম বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে কিম জং উন বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রাণপাত করছি। দেশ আজ খাদ্যে স্বনির্ভর। তবু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সারা বিশ্বে দুর্নাম রটাতে নোংরা গ্রাফিতি আঁকছে।
ভাষণ শেষে পিয়ং ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা শ্লোগানে মুখরিত হয়, উন ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। ষড়যন্ত্রকারীদের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুঁড়িয়ে দাও। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে উনের মূর্তির পাদদেশে সরকারি ছাত্র নেতা বলে, উনরে যাগো অপছন্দ অরা আমৃকা চইলা গেলেই পারে।
এরপর ছাত্রনেতা আহবান করে, বন্ধু চলো সবাই একসাথে উনের ‘এম্বিশান’ স্টাইলে চুল কাটি; ভালোবাসি দেশ আর দেশের মাটি।
(পিয়ং ইয়ং-এর ডায়েরি থেকে)
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক