মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সাবেক কর্মকর্তা গ্রাহাম ফুলারের বহুল আলোচিত একটি বইয়ের নাম ‘আ ওয়ার্ল্ড উইদাউট ইসলাম’ (একটি ইসলামবিহীন বিশ্ব)। ফুলার তার কর্মজীবনের দীর্ঘ সময় মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ধুর্ত মিশন বাস্তবায়নে কর্মরত ছিলেন। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রকৃত বাস্তবতার নিরিখে ইসলাম ধর্ম না থাকলে- বিশ্ব ব্যবস্থা কেমন হতো তার একটি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ফুলারের বক্তব্য মোটামুটি এ রকম-দুনিয়াতে ইসলাম নামক ধর্মীয় বিধান না থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দাদের সঙ্গে পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের দ্বন্দ্ব হতো। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের গুরত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান ও অফুরন্ত জ্বালানি ভাণ্ডার। এশিয়া থেকে ইউরোপ, ইউরোপ থেকে আফ্রিকা, আমেরিকা থেকে এশিয়া, দুনিয়ার যেকোন প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমি, জল ও আকাশপথ ব্যবহার করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। যেটি মূলত দুনিয়ার পূর্বের সাথে পশ্চিমের যোগাযোগের জন্য একটি ব্রিজ হিসাবে কাজ করে। সুতরাং মধ্যপ্রাচ্যের দখলদারি নিয়ে ইসলাম যতোটা না বড় ফ্যাক্টর তার চেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের রাজনীতি ও শোষণমূলক অর্থনীতি।
যুদ্ধবাজ আমেরিকা বনাম ব্যবসাবাজ চীন
মধ্যপ্রাচ্যের ভূমি, পানি ও আকাশ যতোটা মূল্যবান এখানকার মানুষের রক্ত ঠিক ততোটাই সস্তা। অধুনা পৃথিবীর যত ইতিহাস পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলোই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক। অর্থাত জগতের প্রায় সব বড় সাম্রাজ্য ও সভ্যতা এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে। ফলে প্রাগৌতিহাসিক কাল থেকে যুদ্ধ, রক্ত, হানাহানি মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দাদের একটি ডিএনএগত ব্যাপার। একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও তাদের ছত্রছায়ায় পরিপুষ্ট ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরকার পতন, শাসকদের হত্যা, অবৈধ সামরিক আগ্রাসন, ভূমি-তেলক্ষেত্র দখল, নিরীহ মানুষদের ওপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করে এলেও দুনিয়ার আরেক পরাশক্তি চীন এ অঞ্চল নিয়ে ততোটা আগ্রহ দেখায়নি (দেখালেও সেটি প্রকাশ্যে আসেনি)।
দেশটি পেশাদার ব্যবসায়ী আচরণের মধ্য দিয়ে সৌদি আরব, ইরান, আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করে গেছে। এমনকি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, ইয়ামেন, লিবিয়া কিংবা আফগানিস্তান ইস্যুতেনীরব থেকেছে। এসব ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান ছিল অনেকটা ধরি মাছ না ছুই পানি। ফলে আমেরিকা যখন মধ্যপ্রাচ্যে বোমাবর্ষণ, তথাকথিত আইএস, আল কায়েদা, নুসরাহ ফ্রন্ট ও তালেবান ও হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ব্যস্ত তখন চীন তার বাণিজ্যে ও বিনিয়োগের পরিধি এশিয়া থেকে আফ্রিকার ঘরে ঘরে নিয়ে গেছে। সে বাণিজ্য এতোটাই সুসংহত যে তা দেশটির সুরক্ষা প্রাচীর গ্রেট ওয়ালের মতো শক্তিশালী। এফ্রিকার দক্ষিণাংশ থেকে ধীরে ধীরে উত্তর এফ্রিকার দিকে অগ্রসর হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ মিশর পর্যন্ত এসেছে। মিশরের বর্তমান সরকার আমেরিকার পুতুল হলেও সেখানে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে চীন।
এভাবে চীনাদের কোম্পানি, ইঞ্জিনিয়ার শ্রমিক পৃথিবীর কত দেশে কত সংখ্যাক যে ছড়িয়ে পড়েছে তার হিসেব বের করা সত্যিই কঠিন। যা আধুনিক দুনিয়ায় বিনিয়োগের কলোনি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু দরিদ্রপীড়িত এফ্রিকাই নয়, আমেরিকার ডানহাত খ্যাত ধনশালী মহাদেশ ইউরোপেও চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ বিস্ময়কর। গত বছরের মার্চে প্রকাশিত ইউরোপিয়ান কমিশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এ ব্লকের ৯.৫ শতাংশ কোম্পানির মালিকানা রয়েছে চীন, হংকং কিংবা ম্যাকাউতে। অথচ ২০০৭ সালেও এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ। অপরদিকে ২০০৭ সালে প্রায় ৪২ শতাংশ কোম্পানির মালিকানা যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় থাকলেও, ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ তা কমে দাঁড়ায় ২৯ শতাংশে। ২০১৮ সালে করা ব্লুমবার্গ বিজনেস উইকের এক প্রতিবেদন জানিয়েছে, ইউরোপে চীনের মালিকানায় রয়েছে চারটি এয়ারপোর্ট, ছয়টি সমুদ্র বন্দর এবং ১৩টি পেশাদার ফুটবল দল। ব্লুমবার্গের ওই রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে, ২০০৮ সালের পর থেকে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে চীনের বিনিয়োগ হয়েছে ৪৫ শতাংশ বেশি।
গত বছরের মার্চে, ইটালি ইউরোপের প্রথম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে চীনের সিল্ক রোড কার্যক্রম বা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় আছে বিশালাকার অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে চীনের সাথে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে, এখন পর্যন্ত রাশিয়াসহ ২০টির বেশি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের অংশীদার হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ, চীন অর্থায়ন করছে গ্রিসের পিরিউস বন্দর বিস্তৃতকরণে, এবং তারা সড়ক ও রেলওয়ে নির্মাণ করছে সার্বিয়া, মন্টিনেগ্রো, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং উত্তর মেসিডোনিয়াতে। চীনের এসব বিনিয়োগ ও উন্নয়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যখন উদ্বেগে ঠিক তখন দেশটি থেকে হানা দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস। এতে নতুন করে চীন-মার্কিন উত্তেজনা বেড়ে চলে এসেছে ভারত-ইরান পর্যন্ত।
ইরান-চীন চুক্তির কী প্রভাব?
বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখেন তারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের বৃহৎ একটি চুক্তি হয়েছে। যদিও সে চুক্তির ব্যাপারে চীন অথবা ইরান সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এখনো বিস্তারিত বলা হয়নি। আপাতত যেসব খবর পাওয়া গেছে তাতে আগামী ২৫ বছরে ৪০০ বিলিয়ন ডলার ইরানে বিনিয়োগ করবে চীন। এই বিপুল অর্থ মূলত ইরানের জ্বালানি ভাণ্ডার ও বন্দর উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। ইরান নিয়ন্ত্রিত পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালীতে এই বিনিয়োগের বড় অংশ যাবে। হরমুজ প্রণালীকে বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহের লাইফলাইন বলা হয়। এ প্রণালী দিয়ে ইরান ছাড়াও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ তাদের জ্বালানি সম্পদ বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম আমেরিকার পরম বন্ধু ও ইরানের চরম শত্রু সংযুক্ত আরব আমিরাতও রয়েছে। ফলে মাঝে মধ্যে হরমুজ প্রণালী ইরান বন্ধ করে দিলে যুক্তরাষ্ট্র এখানে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত করে তোলে।
চুক্তির সবচেয়ে বড় দিকটি নিয়ে ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলবিদরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সেটি হলো, ইরানে ৫ হাজার চীনা সৈন্যের প্রবেশ। মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, চীনা বিনিয়োগ রক্ষায় ইরানে ৫ হাজার চায়নিজ আর্মি প্রবেশ করবে। এর অর্থ চীনারা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নতুন কৌশল সাজাচ্ছে। যা তাকে ভবিষ্যৎ বিশ্বের পরাশক্তি হিসাবে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণের মুরব্বি হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পূর্বেই বলেছি চীন এতোদিন মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি জড়িয়ে পড়েনি। এবারই প্রথম দেশটি সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রতিদ্বন্দী ইরানের ঘাড়ে সওয়ার করেছে। আমেরিকার অন্যায্য বাণিজ্য অবরোধের চাপে ইরানি কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে খুব আগ্রহী। কারণ তারা এতোদিন ইউরোপের পেছন পেছন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ইউরোপ শুধু আশ্বাস ছাড়া ইরানের জন্য কিছুই করতে পারেনি। ছয় জাতির সাথে স্বাক্ষরিত পরমাণূ চুক্তি তো গেছে সাথে নতুন অর্থনৈতিক অবরোধও পেয়েছে। অথচ চুক্তিটি হয়েছিল ৬ দেশের সাথে। যুক্তরাষ্ট্র একা বেরিয়ে যাওয়ায় বাকিরা যেন পুতুলের মতো নড়বড়ে হয়ে গেছে। ইরানের সঙ্গে আমেরিকার বর্তমান যে সম্পর্ক সেটি চরম তিক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস। ইরান হলো মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান ড্রাগন। যার অধীনে অসংখ্য প্রক্সি বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মার্কিন বাহিনী, সৌদি আরব ও ইস্রায়েলের বিপর্যয় ডেকে আনছে। ইরানের বিপ্লবী আর্মির সামর্থ্যও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার জন্য মাথাব্যথার কারণ। ইরানের এই আর্মি সিরিয়ায় আসাদকে টিকিয়ে রেখেছে। ইরাকে পছন্দসই সরকার বসিয়েছে। মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে দেশটির জনগণকে খেপিয়ে তুলেছে। মার্কিন দূতাবাসে হামলাও চালিয়েছে। ইয়ামেনে মার্কিন জাতির শত্রু হুতিদের সহায়তা দিয়ে দেশটি দখলে রেখেছে। লেবাননে হিজবুল্লা বাহিনীকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন(যাকে পাশ্চাত্য শক্তি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন মনে করে) হামাসকে সহযোগিতা দিচ্ছে। যার প্রত্যেকটিই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন, ইসরাইল ও সৌদি স্বার্থের পরিপন্থী।
চলতি বছরের শুরুতে ইরানের অন্যতম সুপ্রীম কমাণ্ডার জেনারেল কাশেম সুলাইমানি মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হবার পর অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক চাপে আছে মার্কিন বাহিনী। করোনাভাইরাসের প্রাক্কালে এ অবস্থা চরম ঘৃণায় পৌছেছিল। এই পরিস্থিতিতে চায়নিজ আর্মি ইরানে ঢুকলে ভবিষ্যতে দেশটির বিরুদ্ধে বড় সামরিক আগ্রাসন ও অর্থনৈতিক অবরোধ অকার্যকর হবে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামেন ও আফগানিস্তান নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখছে চায়নিজ কোম্পানিগুলো। বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ ইত্যাদি প্রকল্প নিয়ে বড় ধরনের আগ্রহ রয়েছে চীনের। সুতরাং ইরানের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ তো বটেই।
চীন-ভারত দ্বন্দ্ব চীনকে আগ্রাসী করছে?
চীন-ভারতের সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনা দুনিয়ায় চীনা কুটনীতির বড় একটি রুপ উন্মোচন করেছে। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা শুরু হলে প্রায়শই ভারতের তরফে একটি কথা শোনা যায়, কুটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে বিশ্ব থেকে একঘরে করে ফেলবে দেশটি। তবে এবার চীন-ভারত দ্বন্দ্বে নিজেদের উচ্চারিত শব্দের ফাঁদেই যেন পড়েছে ভারত। ইতোমধ্যে ভারত সংলগ্ন সব দেশকে নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে ফেলেছে চীন। যে আফগানিস্তান নিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর চিন্তা করছিল সেটিও এখন অনেকটা অকার্যকর হতে চলেছে। সর্বশেষ ভারতের অন্যতম মিত্র ও বাণিজ্যিক অংশীদার ইরানের সঙ্গে চীনের চুক্তি আরেকটি ধাক্কা দিয়েছে ভারতকে। অনুশোচনায় ভোগা ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। এমনকি ভারত ও ইরানের মধ্যে রেললাইন প্রকল্প ও চাবাহার বন্দর উন্নয়ন থেকেও ভারতকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। যদিও বা এ বিষয়ে ইরানের বক্তব্য হচ্ছে ভারতের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তিই করেনি তারা। অন্যদিকে ইরান-চীন চুক্তি নিয়ে উচ্ছসিত পাকিস্তানের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কারণ চীন ও ইরানের মধ্যে এই চুক্তির ফলে ভারত ছাড়া এ অঞ্চলের সব দেশ চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে। যা ভারতকে শুধু একঘরেই করে ফেলছে না বরং বন্ধুহীন বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে। যতোদুর জানা যায় ভারতকে অর্থনৈতিক বন্ধু হিসাবে পেতে চায় চীন। বিআরআই প্রকল্পে ভারতকে যুক্ত করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ চীন এখন দেশটিকে শায়েস্তা করার পথ বেছে নিয়েছে। যাতে বাধ্য হয়ে ভারত বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হয়। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমেরিকার গলায় গলায় ভাব সেটি হওয়ার পথে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করেছে।
নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর নির্ভর করছে আরও কিছু
চলতি বছরের শেষে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে চলেছে। এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন হবেন নাকি রিপাবলিকান ট্রাম্প আবারো থাকবেন সেটি নিশ্চিত নয়। ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে ইরান-চীন চুক্তি অনেকটা ম্লান হতে পারে। কারণ তিনি চাইবেন ইরানের সঙ্গে অন্তত কিছুটা স্থিতিশীল সম্পর্কে রাখতে। ইরানে চীনকে ঠেকানোর জন্য হলেও তিনি দেশটির ওপর থেকে মার্কিন অবরোধ তুলে নেয়ার চেষ্টা করবেন। নতুন করে পরমাণূ চুক্তির পথেও যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। তবে ইরানী নেতৃত্ব বার বার পরিবর্তিত মার্কিন নীতির কাছে ধরা দেবে কি না সেটিও দেখার বিষয়। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে মধ্যপ্রাচ্যে চীন আরও সুসংহত হবে। ঠিক এ কারণে শি জিন পিং-ভ্লাদিমির পুতিন জুটি ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের গদিতে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি তারা ট্রাম্পের পক্ষে কাড়ি কাড়ি ডলারও ঢালছেন। যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দাবিয়ে আগামী চার বছরে দুনিয়ার একচ্ছত্র মালিকানা চীনের হাতে চলে যায়।
– আশরাফুল ইসলাম রানা, সাংবাদিক