নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গত ৩ নভেম্বর। এরপর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও নিশ্চিত হয়নি কে হচ্ছেন বিজয়ী। এখনও ফলাফল জানতে বাকি অন্তত পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের। এখন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর পাঁচটির ভোট গণনা চলছে। পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় ভোট গণনা এখনো শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে আলাস্কাতেও।
বিবিসি-সিএনএনের মতো কিছু গণমাধ্যম অবশ্য অ্যারিজোনাকেও রেখেছে এ তালিকায়। ফলে প্রশ্ন উঠছে- উন্নত দেশটিতে ভোট গণনায় এত সময় লাগছে কেন? ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, নির্বাচনের ফলাফল আসতে কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ- অ্যাবসেন্টি (অনুপস্থিতি) ও প্রভিশনাল (শর্তযুক্ত) ব্যালট।
অ্যাবসেন্টি ব্যালট কী?
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, সাধারণত যেসব ভোটার নির্বাচনের দিন স্বশরীরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে নারাজ বা অক্ষম, তাদের কাছে আগাম ভোটের ব্যালট পাঠানো হয়। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তারা সেগুলো ডাকযোগে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে ফেরত পাঠান। এটিকেই অ্যাবসেন্টি ব্যালট বা ডাকভোট বলা হয়।
প্রভিশনাল ব্যালট কী?
কোনও ভোটার যদি ভোটকেন্দ্রে আসার সময় নিজেদের পরিচয়পত্র রেখে আসেন বা ভোট দিতে প্রয়োজনীয় অন্য কোনও তথ্য দিতে না পারেন, তখন তাকে এই আপৎকালীন ব্যালট দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে আবশ্যক তথ্য দিতে না পারলেও তাকে ব্যালট দিতে হবে। ভোটার সেই ব্যালটের মাধ্যমে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, যা নির্বাচনী কর্মকর্তারা আলাদা করে রাখেন। পরে ওই ব্যক্তির ভোট দেয়ার যোগ্যতা রয়েছে কিনা, তা যাচাই করা হয়। এ পরীক্ষায় পাস করলে তবেই তার ভোট গণনায় নেয়া হয়।
জর্জিয়া
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, জর্জিয়ায় অন্তত ১৩ হাজার প্রভিশনাল ব্যালট যাচাই বাকি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ফুল্টন কাউন্টিতেই রয়েছে ৪ হাজার ৮০০-এর বেশি ভোট। রাজ্যটিতে সবশেষ ৩ হাজার ৬০০ প্রভিশনাল ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, বাতিল হয়েছে ১ হাজার ২০০টি।
জর্জিয়ার নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা শুক্রবারের মধ্যেই ভোট গণনা শেষ করার চেষ্টা করছেন। তবে এ কাজে শনি-রোববার পর্যন্ত সময় লেগে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
নেভাদা
গত বৃহস্পতিবার নেভাদার সেক্রেটারি অব স্টেট জানিয়েছিলেন, রাজ্যটিতে অন্তত ১৯ লাখ ১৫০টি ভোট গোনা বাকি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিল ডেমোক্র্যাট দুর্গ ক্লার্ক কাউন্টিতে।
তবে নেভাদায় কতগুলো ব্যালট গণনা বাকি তা নির্ধারণ বেশ কঠিন। এবারের নির্বাচনে বেশি ডাকভোট ব্যবহৃত রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। নেভাদার নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ডাকভোট গণনা করবেন।
নর্থ ক্যারোলিনা
অঙ্গরাজ্যটির নির্বাচনী বোর্ডের তথ্যমতে, গত শুক্রবার সেখানকার নয়টি কাউন্টির নির্বাচন কর্মকর্তারা ৪ হাজার ৩০০ অ্যাবসেন্টি ব্যালট বিবেচনার বিষয়ে বৈঠক করেছেন।
নর্থ ক্যারোলিনায় স্থানীয় সময় আগামী ১২ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার অ্যাবসেন্টি ভোটের অনুরোধ ফেরত আসে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তবে এসব ভোটারের মধ্যে কতজন নির্বাচনের দিন স্বশরীরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিযেছেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাজ্যটিতে আবেদনের তুলনায় অ্যাবসেন্টি ভোটের সংখ্যা কম হতে পারে।
নর্থ ক্যারোলিনার নির্বাচনী বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কারেন ব্রিনসন জানিয়েছেন, খুব একটা পরিবর্তন না হলে আগামী ১২ বা ১৩ নভেম্বরের আগে রাজ্যটিতে গণনা হওয়া ভোটের সংখ্যা খুব একটা নড়চড় হবে না।
পেনসিলভানিয়া
গুরুত্বপূর্ণ এ বাটলগ্রাউন্ডের সেক্রেটারি অব স্টেট ক্যাতি বুকভার জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলের মধ্যে তাদের বেশিরভাগ ডাকভোট গণনা শেষ হয়েছে এবং তারা প্রভিশনাল ব্যালট গোনার প্রক্রিয়া শুরু করছেন।
নির্বাচনী বোর্ডের তথ্যমতে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যটিতে আনুমানিক ১ লাখ ১৩ হাজার অ্যাবসেন্টি ব্যালট গণনা বাকি ছিল।
রাজ্যের অন্যতম জনবহুল শহর ফিলাডেলফিয়ার নগর কমিশনার লিসা ডিলে জানিয়েছেন, সেখানে প্রায় ৪০ হাজার ভোট গণনা বাকি। এগুলোর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে আরও কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।
এছাড়া অ্যালেঘেনি কাউন্টিতে ৩৬ হাজার ভোট গণনা বাকি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। এর মধ্যে অন্তত ২৯ হাজার ব্যালট আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গণনা স্থগিত ছিল। এ কাউন্টিতে প্রভিশনাল ব্যালট রয়েছে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ হাজার। সেগুলো যাচাই শেষে গণনা করতেও সময় লাগবে।