এবিজি শিপইয়ার্ড। কোম্পানির ব্যাঙ্ক প্রতারণার আর্থিক পরিমাণ ২২,৮৪২ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৮টি ব্যাঙ্কের সম্পদ জড়িত। শোনা যাচ্ছে, অধিকাংশ টাকাটাই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ‘দেশপ্রেমিক’ ভারতীয় বেনিয়ার কীর্তি, নিঃসন্দেহে!
আশ্চর্য হচ্ছি না। টাকার পরিমাণ বেশি বলেই চোখে লাগছে।
পাশাপাশি ভারতী শিপইয়ার্ড। এরও শোনা যায়, অনাদায়ী ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
এছাড়াও, ‘ছোটভাই’ আম্বানির একটা কোম্পানি রিলায়েন্স ন্যাভাল, ব্যাঙ্কের দেনার পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে ২৭০০ কোটি টাকায়। অবশিষ্ট অর্থ? ইন দ্য ভোগ অব মা! এবং এই লোকটির সব কোম্পানি মিলিয়ে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট ঋণের পরিমাণ, ভগবান নিজেও জানেন না!
কার টাকা গেল? ব্যাঙ্কের? সরকারের?
কাদের ক্ষতি হবে? ব্যাঙ্কের কর্মীদের? চুল!
পুরো টাকাটাই সাধারণ মানুষের। আমজনতার। যাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ শুধুমাত্র ব্যাঙ্কেই জমা রাখতে অভ্যস্ত, ব্যাঙ্কের সুদের ওপর যাঁদের জীবনযাপন নির্ভরশীল, তাঁদের। ব্যাঙ্কে জমা রাখা তাঁদের টাকার উপর সুদের হার ক্রমাগত কেন কমে যায়, যাচ্ছে, কেউ ভাবতে চেষ্টা করেন? পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রীয়’ নিরাপত্তায় নিশ্চিন্ত ভদ্রবিত্তদের ফ্ল্যাট বা গাড়ি কেনার জন্য ঋণের উপর সুদের হার ক্রমশই কমে যায় কেন, বুঝতেও?
ডাকাত-রা দেশ শাসন করলে, চোর-বেনিয়াদের প্রতারক হয়ে ওঠাই প্রত্যাশিত।
তবে এর জন্য একা বিজেপি দায়ী নয়, দয়া করে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা’র গরুর রচনা নামাবেন না সব জায়গায়! বিরক্ত লাগে।
আর্থিক উদারনীতি কংগ্রেসের অবদান। অবশ্যই শাসক শ্রেণির সর্বসম্মতিক্রমে। বিজেপি কংগ্রেস-অনুসৃত অর্থনীতির ঘোড়াকেই আরও দ্রুতগতিতে ছোটাচ্ছে। বেনিয়ারা ওদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে, কংগ্রেসকে সরিয়ে, এই জন্যই তো!
প্রসঙ্গত ব্যাঙ্ক প্রতারণার বড়ো ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত বেনিয়াদের প্রায় সবাই গুজরাটের বাসিন্দা। এবং প্রত্যেকেই ‘গর্বিত’ হিন্দু।
গুজরাটের মাটিতে কী সোনা ফলে!
বীভৎস সাম্প্রদায়িক গণহত্যার নায়ক রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে, ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা মামলায় ‘অভিযুক্ত’ হয়ে কারাগারে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকটি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী — মাটির গুণ আছে, স্বীকার করতেই হয়!
বাংলা-বাঙালি নিয়ে আমার চেতনায় কোনও ‘জাতীয়তাবাদী’ আবেগ কাজ করে না কিন্তু।
জনগণ অবশ্য সচরাচর তাঁদের প্রাপ্যটুকুই পেয়ে থাকেন।
– কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা ১৫ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২২