১৯৫৬ সালে প্রথমবার এমন ‘বিশেষ জরুরি’ বৈঠকের আয়োজন করেছিল জাতিসংঘ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিয়ে আয়োজিত বৈঠকটি জাতিসংঘের ইতিহাসে মাত্র ১১তম ‘বিশেষ জরুরি’ বৈঠক। এর আগে সর্বশেষ জরুরী বৈঠক হয়েছিল ১৯৮২ সালে। ফলে ৪০ বছর পর আবার এমন আয়োজন করল জাতিসংঘ।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বটি যে বেশ জটিল ও সকলের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ এই বৈঠকটি তারই ইঙ্গিত বহন করছে।
এই বৈঠকে শান্তির জন্য একত্রিত হওয়ার বিষয়ে ভোট দেন কূটনীতিকরা।
নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানানোর জন্য একটি ভোট উত্থাপন করা হয়। কিন্তু সেটিতে ভেটো দেয় রাশিয়া। এরপরই জরুরী বিশেষ বৈঠকের ডাক দেয় জাতিসংঘ।
জরুরী বিশেষ বৈঠকে উত্থাপিত কোনো বিষয়ের উপর কোনো দেশ ভেটো দিতে পারে না।
রুশ হামলা বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার এবং এ ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাবের জন্য সোমবার জাতিসংঘের বিশেষ জরুরি বৈঠক শুরু হয়। তিন দিন ধরে ওই বৈঠকে বিতর্কে অংশ নেন সদস্য দেশগুলোর কূটনীতিকরা। গতকাল সেনা প্রত্যাহার ও নিন্দা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। পাঁচটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। এই পাঁচটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, বেলারুশ, ইরিত্রিয়া ও সিরিয়া। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ, চীনসহ ৩৫ দেশ। বিরত থাকা অন্য ৩৩টি দেশ হচ্ছে আলজেরিয়া, অ্যাংগোলা, আর্মেনিয়া, বলিভিয়া, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, কঙ্গো, কিউবা, এল সালভাদর, ইকুয়েটোরিয়াল গানিয়া, ভারত, ইরান, ইরাক, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মাদাগাস্কার, মালি, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ সুদান, শ্রীলঙ্কা, সুদান, তাজিকিস্তান, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, তুরস্কসহ বাকি ১৪১টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। এ প্রস্তাবে কঠোরভাবে ইউক্রেনে আগ্রাসন এবং রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ বাহিনীকে প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সর্বোচ্চ সতর্ক করার সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার পরিষদের বিতর্কে বাংলাদেশসহ বহু দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। এতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপপ্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন সংলাপের মাধ্যমে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখণ্ডতার নীতির প্রতিও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। তার বক্তব্যে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আহ্বানের পাশাপাশি সংঘাতকবলিত অঞ্চল থেকে সরে যেতে আগ্রহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
সোম, মঙ্গল ও বুধবার জরুরি বৈঠকে শতাধিক দেশের কূটনীতিক বক্তব্য দিয়েছেন। এ সময় বেশিরভাগ দেশের প্রতিনিধি সরাসরি রুশ হামলার জন্য মস্কোর সমালোচনা করেছেন। শুধু পশ্চিমা দেশগুলো নয়; তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে জেনেভায় হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এতে তিনি মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। এ বৈঠকে ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে কাউন্সিল থেকে বের করার দাবি তোলেন ইউরোপীয় কূটনীতিকরা।