‘রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী, প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারনা এবং জাত তুলে অপমানের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ডেবরার এক আদিবাসী তরুণী।
সবিতা লায়েক নামে স্নাতক ওই তরুণীর অভিযোগ, কারিগরি শিক্ষা দফতরে অস্থায়ী চাকরি দেওয়ার নামে হুমায়ুন তাঁকে নিজের কসবা রাজডাঙার বাড়িতে রেখে জোর করে পরিচারিকার কাজ করিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “ঘর ঝাঁট-মোছা, কাপড় কাচা, বাসন মাজা, তিন-চারটে কুকুরের মল পরিষ্কার– সবাই করানো হত। কাজে সামান্য ভুল হলেই মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী ‘নিচু জাত’ বলে গালিগালাজ করতেন।”
তাঁকে দফতরের নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তরুণীর। তবে প্রতি মাসে দফতর থেকে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা জমা হত। সবিতার দাবি, কাজ পছন্দ না হওয়ায় এক দিন মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে বার করে দেন। এর পরে ২০২১ সালের ১০ অগাস্ট কারিগরি দফতর থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে এসেছেন।
…
দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে সবিতা লেখাপড়া লিখেছেন খুবই কষ্ট করে। তাঁর দাদু গুঁইরাম লায়েক ডেবরার ব্রাহ্মণ শ্মশান পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। সবিতা জানান, দাদু বিধানসভা ভোটে মন্ত্রীর হয়ে খুব খেটেছিলেন। জেতার পরে আমার চাকরির জন্য অনুরোধ করেন উনি। ২০২১ সালের ১৫ মে মন্ত্রী জানান, কারিগরি শিক্ষা দফতরে আমার চাকরি হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “মন্ত্রীর ডাকেই ওঁর বাড়িতে যাই। কিন্তু উনি আমাকে বাড়ির ঝি করে রাখেন। গরিব, আদিবাসী বলেই কি এই অপমান সইতে হবে?” (আবাপ ৩০ এপ্রিল ‘২২)
একে প্রাক্তন হলেও পুলিশকর্তা, তার ওপর ‘অনুপ্রেরণায়’ অনুপ্রাণিত মন্ত্রীমশাই, সুতরাং এই ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত তো নয়ই বরং খুবই স্বাভাবিক। লোকটিও, অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকেই, একটি কীর্তিমান পুরুষ।
ঘেন্না-ও অত্যন্ত নিরীহ একটি শব্দ, এ ক্ষেত্রে, হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশের জন্য।
‘নিচু জাত’ এই গালিগালাজটির প্রতি বন্ধুদের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করতে চাই। ব্রাহ্মণ্যবাদ, বর্ণাশ্রম, জাতপাতের ভিত্তিতে সামাজিক বিভাজন হিন্দুত্ববাদীদের একচেটিয়া, এমনটাই জানতাম। ভুল জানতাম।
মন্ত্রী লোকটি ‘ধার্মিক’ ইসলামপন্থী, এমনটাই তো মনে হচ্ছে।
চাকরি দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে অবশ্য কোনও প্রশ্ন তুলছি না। ওটা এখন ‘স্বাভাবিক’ হয়ে গেছে!
— কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা ৩০ এপ্রিল ২০২২