অনলাইন ডেস্ক
ভারতে আইন পাস হওয়ার চার বছর পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হয়ে গেল। লোকসভা ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ২০১৯ সালে সিএএ আইন পাশ হলেও তা কার্যকর হওয়ার বিষয়টি গত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে ছিল।
সিএএ কার্যকর হওয়ায় পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত শরণার্থীরা ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এর আগে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছিল, নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশোধনী আইনে সেই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।
সোমবার ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি এড়াতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয় যারা ভারতীয় নাগরিক, তাদের জন্য সিএএ নয়। উল্লেখিত প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা বিদেশি নাগরিকদের নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই এই আইন।
অর্থাৎ, যাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব রয়েছে, তাদের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। কোনও ব্যক্তি হিন্দু হোক বা মুসলিম বা অন্য কোনও ধর্মের, তিনি যদি আগে থেকেই ভারতীয় নাগরিক হন, তাহলে সিএএ-র কোনও প্রভাব তার উপর পড়বে না। আবেদনকারীদের একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। কবে তিনি ভারতে প্রবেশ করেছেন, সে তথ্যও উল্লেখ করতে হবে সেখানে।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই মোদি সরকার ঘোষণা করেছিল, ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হবে। সেই অনুয়ায়ী সংশোধনী বিল আনে কেন্দ্র সরকার। ওই বছরের ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিলে সই করেন।
যদিও কেন্দ্রের সিএএ মানতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপি বিরোধী দলগুলিই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল। বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধীদলগুলি প্রথম থেকেই বলে আসছে, এই আইন অসাংবিধানিক এবং বিভাজনকামী। সিএএ থেকে মুসলিম ধর্মালম্বীদের বাদ দেওয়া এবং তামিল উদ্বাস্তুদের বাদ দেয়া নিয়ে মূলত বিরোধীদের আন্দোলনের সুর তীব্র হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ,আসামের মত রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কায় আন্দোলন দানা বাঁধে। ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত সমস্যা প্রকোট হতে পারে। নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে এমন আশঙ্কায় উত্তর-পূর্বের অনেকেই সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন সিএএ আইন কার্যকর হওয়ায় সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে বড় অস্ত্র হতে চলেছে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে নিজেদের অনুকূলে টানতে সিএএ আইন বিজেপির প্রচারের বড় অস্ত্র হতে চলেছে।