– একে এম বেলায়েত হোসেন
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত করোনা পরীক্ষা কিট রাজনৈতিক সমীকরণে অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ উদ্ভাবিত পরীক্ষা কিট দিয়ে স্বল্প মূল্যে অল্প সময়ে রোগ নির্ণয় করতে গেলে, শুরু থেকে করোনায় আক্রান্তের প্রকৃত তথ্য গোপনের সরকারের যে প্রবণতা তা জনসম্মুখে উন্মোচিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
‘পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নীতি অনুসরণ করতে গেলে সরকারের সামর্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধে তাদের অপ্রস্তুতি, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির শ্বেতপত্র জনসম্মুখে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মহৎ এই উদ্যোগকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে।
সেদিন একটি টেলিভিশন টকশো’তে ঔষধ প্রশাসনের একজন পরিচালক এবং সরকার সমর্থিত একজন সাংবাদিককে অযথা ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে তর্ক করতে দেখা গেল। টকশো’তে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে কোনঠাসা করে আলোচকদের কথা বার্তায় মনে হচ্ছিল যে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল হঠাৎ কেন ডঃ জাফরুল্লাহ এমন একটা কিট উদ্ভাবন করে সরকার তথা দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। গতকাল ঔষধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে ডাকা অনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার একজন প্রতিনিধি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে দিয়ে অনুমোদন ব্যতীত উদ্ভাবিত কিট কোন ভাবেই ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হবে না।
পরীক্ষা নিরীক্ষার আগেই ঔষধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট ঠিক মতো কাজ করবে না বা ভুল ফলাফল দেবে। পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই যারা আগ বাড়িয়ে ফলাফল দিয়ে দিচ্ছেন তাদের অভিসন্ধি বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। অথচ গবেষণার জন্য আক্রান্ত রোগীদের থেকে ১০টি রক্তের নমুনা চেয়ে আবেদন করেছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও সেগুলো এখনো তাদের দেয়া হয়নি।
বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কিট সহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে কী হচ্ছে, কারা আনছেন,কারা সরবরাহ করছে, কত দামে আনছেন, কাদের কাছ থেকে আনছেন, এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিলেই বেরিয়ে আসছে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি চমকপ্রদ কাহিনী।এসব থেকেও বোঝা যায় গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে ঘাপলাটা কোথায়। এন ৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে গেলে,প্রশাসনের পক্ষ থেকে এতবড় অন্যায় কে ভুল বলে চালিয়ে দেয়ার উদাহরণ সবার চোখের সম্মুখে।
২৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারের কাছে এই কিট সরবরাহের জন্য ঔষধ প্রশাসনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ার কথা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে প্রতিনিধি না থাকায় অনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে কিট দেয়া সম্ভব হয়নি।
অথচ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আমন্ত্রণে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)‘র প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে যোগদান করে উদ্ভাবিত কিটের ভূয়সী প্রশংসা করেন। দলকানা সাংবাদিক এবং দুর্নীতির আখড়া ওষুধ প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকদের তুলনায় সিডিসি কি কম বোঝে? দুষ্টরা যখন ব্যবসার ধান্দায় অপরাজনীতিকে ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর লোকের আর যা কিছুই করেন না কেন, এই মহাদুর্যোগের সময় জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে দুর্নীতির ধান্দা চিন্তায়ও আনবে না এটা হলফ করে বলা যায়। কিন্তু কানা ভুলে যাচ্ছে সাময়িক লাভ বা ব্যক্তিগত সুবিধা অসুবিধা র মূল্য জাতির পাশাপাশি তার নিকটতম স্বজনকেও দিতে হতে পারে। সাধু সাবধান।
– একেএম বেলায়েত হোসেন কাজল
ইতালি প্রবাসী