যুক্তরাজ্যনিবাসী অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক বন্ধু ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানালেন, কিছু একটা লেখা দিতে। ইদানীং লেখালিখি হচ্ছে না, তবে লেখার ফুসরত হইলে হুটহাট কোবতে লিখে পাঠাতে পারি; জানালাম।
আসলে ফরমায়েশ প্রতিপালন বা প্ল্যান করে কোনোকিছু লেখা যায় না। যখন যা মনে আসে এমনিতেই হুটহাট লিখে সময়রেখায় ছেড়ে দিই। এরপর আর ওই লেখার খোঁজ নিইনা। খোঁজ বলতে লেখার প্রতিক্রিয়া। রোজই তো সময়রেখায় আজেবাজে গোবর ছাড়ি। এসব গোবড় কাঁচা থাকতে নাকে কটু গন্ধ লাগে বৈকী। কিন্তু শুকিয়ে গেলে মূল্যবান জ্বালানী হয়, সেটা অস্বীকার করার জো নাই।
একটা কোবতে লিখবো ভাবছি। কিন্তু করোনাকালে কোবতে ঠিক জুৎ হচ্ছেনা।
তিনি নিয়ম করে ফেসবুকে রোজ সেলফি পোস্ট করেন, যদিও করোনাকালে লকডাউনের কারণে অভ্যাসটায় কিছুটা টান পড়েছে। কয়েকটা সেলফিস্টিকও কালেকশনে রয়েছে। এগুলো ফেসবুক বন্ধুদের দেয়া উপহার। কুরিয়ারে পাওয়া। দু’মিনিটের সেলফি তোলার আগে তাকে দু’ঘণ্টা প্লাস্টার-ডিসটেম্পার অর্থাৎ সাজুগুজু করতে হয়। এরপর নানান অ্যাপসের বদৌলতে সেগুলো পোস্ট করার উপযোগী হয়।
মফস্বলের কাপড় ব্যবসায়ী তরমুজ মিয়া তার প্রতি ভালোবাসায় মাঝে মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শাড়ি-ব্লাউজ পাঠায়। কুরিয়ারে পাওয়া শাড়ি-ব্লাউজগুলো সেলফে সাজানোর আগে তিনি তার মোবাইলে সেলফি নিতে ভোলেন না। এদিকে প্রেরককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট না দিলে পরেরবার কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি বয় আসবেনা, এই আশংকাও রয়েছে।
একদিন ফেসবুক ভক্তের সাথে দেখা হয়ে গেলো কোনো এক পার্কে। যদিও আজকাল লোকজন পার্কে যাওয়া প্রায় ভুলেই গেছে। এখনো যারা যায়, তারা স্বুল পড়ুয়া প্রেমের জুটি কিংবা চাকরি হতে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণগণ। কিছু মাঝবয়সী বুড়োও যায় স্কুল-কলেজের মেয়েদের প্রেম করা দেখতে। পারভার্ট লোকজনদের চোখের দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায় সে কী ধরনের মানুষ। চোখ দিয়ে যেন গপাগপ গিলতে থাকে মেয়েদের।
এদিকে ভক্ত ভাবে, তিনি পার্কে কী করতে এসেছেন! মুখোমুখি হবার পরে একটা লম্বা সালাম দিলো।
আসসালামু আলাইকুম ম্যাম, ক্যামুন আছেন, চিনতে পারছেন? আমি মফস্বলের অমুক।
জ্বি ভাইয়া, চিনতে না পারার কোনো কারণ আছে? তা কী খাবেন বলুন? ঝালমুড়ি, অ্যাই ঝালমুড়ি এদিকে আয়, সাহেবকে ভালোকরে ঝালমুড়ি দে তো।
ভক্ত ভাবে আর ভাবে, সে মুড়ির দেশের লোক, নিজে কাপড়ের ব্যবসায়ী হলেও বাপ চাচাদের মুড়ির ব্যবসা আছে। তাকেও শেষ পর্যন্ত শহরে এসে এক চিমটি ঝালমুড়ি কিনে খেতে হচ্ছে।
পার্কের বেঞ্চতেই বসা ছিল এতোক্ষণ, ভক্তর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবার সময় তিনি যখন দাঁড়ালেন; ভক্তের অবাক হবার দশা। উচ্চতা মাত্র ৪ ফুটও হবে বলে মনে হয় না। গরমে ঘেমে মুখের ডিসটেম্পারগুলো সরে যাওয়ায় তাঁকে আর ফেসবুকের ফটোর সাথে মেলাতে পারছেনা সে। উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট, জলহস্তীর মতো নুরানী স্বাস্থ্য সেলফিতে কীভাবে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মতো দেখায়, মনে মনে সেটাই ভাবছিল সে।
এরইমধ্যে বিপত্তি ঘটে গেল। ছিঁচকে পকেটমারের দল সুযোগ বুঝে ভক্তের অপারেশন করে ফেলেছে। পকেট গেলে পকেট আসে, এসব ভক্তকে বিচলিত করে না। সে বিচলিত সেলফি নিয়ে। সে ভাবছে আর ভাবছে, সেলফির ভেতরে কোন ম্যাজিক আছে যে ৪ ফুট হয়ে যায় ৬ ফুট, সেটা জানতে চেষ্টা করে। আটা ময়দা সুজির কল্যাণে কোমল ত্বকের রহস্যও তার জানতে চাওয়ার লিস্টে সবার ওপরে। সবকিছু ছাপিয়ে এই প্রশ্নটির উত্তর সে পাচ্ছে না, ফেসবুকে সেলফি দেয়া ছেড়ে লকডাউনের এই সময় কেন তিনি পার্কে এসেছিলেন!
সম্পাদকের কাছে লেখাটি পাঠানোর পরে ফুটনোটে জানতে চাইলাম- এই লেখাটা কোবতে হিসেবে চালিয়ে দিলে কি তা কোবতে হবে?
৬ মে ২০২০
বার্লিন, জার্মানি
জোবায়েন সন্ধি : জার্মান পেনের ফেলো লেখক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।