১. লেখালেখির জগতটা কেমন যেন। লেখক কেন লিখেন, কি লিখবেন কখন লিখবেন কাদের জন্য লিখবেন, লেখালেখির সাথে তাঁর বৈষয়িক প্রাপ্তির কোন যোগ থাকে না শুধু ই মনের খোরাক? বা চাইলেই কি যে কেউ লিখতে পারেন? যে কথার রাজ্যে আমাদের বসবাস সে কথাগুলো কি চাইলেই লেখা যায়? খোদ লেখালেখি নিয়ে এ রকম অজস্র প্রশ্ন আছে, লেখালেখি ও আছে। এই যেমন ধরুন গত শতাব্দীর একজন বাঙালি কথা সাহিত্যিক ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪৪ সালে বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষ থেকে কেন লিখি শিরোনামে একটি সংকলন বের হয়েছিল সেখানেই বের হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কেন লিখি‘ শিরোনামের একটি প্রবন্ধ। তিনি বলছিলেন ‘লেখা ছাড়া অন্য কোন উপায়েই যে কথা জানানো যায় না সেই কথাগুলো জানাবার জন্যই আমি লিখি‘।
বিশ্বের সেরা সাহিত্যিক লেখকদের কেউ কেউ কেন লেখেন সে নিয়ে নানা চমকপ্রদ উত্তর দিয়েছেন। আর্দ্রে জিদ বলেছিলেন ‘লিখি কারণ না লিখলে হাত ব্যথা করে‘। সে যাক এক্ষেত্রে মুশতাক আহমেদ নামের মানুষটি কেমন করে লেখক হয়ে উঠলেন, তা জানি না। তবে যতদূর বুঝেছি মানুষের দু:খ কষ্ট তিনি অনুভব করেন, দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা তাকে আহত করে হয়তো সে জন্যই তিনি লিখেন। কাছাকাছি না থাকলে নাকি মানুষকে সহজে চেনাজানা যায় না। আবার অনেকে আক্ষেপ করে প্রিয় বা কাছের কারো সম্পর্কে বলে বসেন এত কাল ধরে এত কাছে থেকেও তোমাকে আজো বুঝতে পারলাম না। সাধারণত জীবন সংগিনী সম্পর্কে অনেকের এমন হা হুতাশ থাকে। সে যাক কাউকে বোঝা বা নিজেকেই বা আমরা কতদূর বুঝি, বুঝতে পারি। সবকিছুই আপেক্ষিক। তারপরও স্বভাবজাত ভাবেই ভালোর একটা চিরন্তন অরাজনৈতিক আবেদন আছে।
২। মুশতাক আহমেদ নামের যে মানুষটির কথা বলছি, এ মুহুর্তে তাঁর নাম আপনাদের অনেকের জানা হয়ে গেছে। আপনাদের অনেকের মত আগে আমিও উনাকে চিনতাম না। যতদূর মনে পড়ে ২০১৭ সালের জুনে ফেইসবুকে তাঁর সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। দু একবার ইনবক্সে হাই হ্যালো ও হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের বিপুল জোয়ারে অনেক ধরণের বিষয়বস্তুর সাথে নানা রকমের মানুষের সাথেও আমাদের এক রকম ভাসাভাসা ভার্চুয়াল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দু চার দশ জন বন্ধু ঘনিষ্ঠতার জগতে এখন আমাদের অনেকের পাঁচ হাজার ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড। এদের সবার প্রতি সম্মান রেখে ও এটা বলতে পারি এদের মধ্যে বড় জোর দু চার দশ বিশ জনের সাথে ইনবক্সে হাই হ্যালো হোক না হোক কেমন যেন এরা ঘনিষ্ঠ জানা শোনা; দু একজন বিশেষত: অগ্রজের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়েছে। মুশতাক আহমেদ নামের এ মানুষটির যতদূর তথ্য পাবলিক করা আছে তাতে দেখা যায় তিনি এক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে কুমির চাষের উদ্যোক্তাদের অন্যতম বা তার চিন্তা র সূত্র ধরেই এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কুমির উৎপাদক দেশের তালিকায় নাম লেখায়। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র হিসেবে ফৌজিয়ানদের নানা গেট টুগেদারে অংশ নেয়ার ছবিগুলো ফেইসবুকে পোস্ট করতেন। সার্কাজম এবং কৌতুকের ঢং এ নানা সিরিয়াস ইস্যুতে লিখতেন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় হঠাৎ করে তাকে কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে খবর পেলাম, সেই ফেইসবুকেই তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে। এক সময় লাশের সাথে ক্রসফায়ারের একেকটা একঘেয়ে গল্প মিলতো। তারপর এর ডিজিটাল সংস্করণ হিসেবেই যেন এবার অন্যধরনের গল্প, এখন শুধু লাশই নয় খোদ মানুষরাই হাওয়া হতে শুরু করলো! এমন এক যুগে তাকে তুলে নেয়া। সম্ভবত: এরই দু/ একদিন আগে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকেও আল জাজিরায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিষয়ে কিছু বক্তব্যের কারণে তুলে নেয়া হয়। মূলধারার মিডিয়া যখন মাননীয় মাননীয় বলতে কাহিল, তখন বিকল্পধারার সোশ্যাল মিডিয়া যেন মিডিয়ার সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এলো। সে যাত্রায় নানা প্রতিবাদে হোক কিংবা অন্য যে কোন কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ফিরে এসেছিলেন, ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে। তারপর শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ ছিল বরাবরের মত লিখে বিপদ আর না বাড়াতে। তারপরও কিছু দিন পর থেকে কী এক অন্তর্গত চাপে তিনি আবার লিখতে শুরু করেন।
৩। সুইডেন মডেল, ট্রাম্প কিংবা পুতিন মডেল বিশ্বের নানা দেশ নানা ভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। অনেক দেশের নেতারা প্রথমে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যার মূল্য যুক্তরাষ্ট্র, ইটালী কিংবা এ মুহুর্তে ইউরোপের সবচেয়ে মৃত্যুর দেশ ব্রিটেনের মানুষ ইতোমধ্যে দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে কম বেশি। প্রতিদিন সরকার প্রধান বা সেই লেভেলের কোন পদবিধারী ব্যক্তিত্ব সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণের মুখে বিশেষতঃ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতারা। শুরুতে কম বেশি সমস্যা থাকলেও পুরো মাত্রায় সম্ভবমত নিজেদের প্রস্তুত করে সাধ্যমত তারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এবং এমনকী আশংকার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের ও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। সুইডেনে থাকা এক বন্ধুর সাথে কথা বলে জানা গেল আনুষ্ঠানিক লকডাউনের পথে না গেলেও যারা ঘরে বসে নিজেদের কাজ চালিয়ে নিতে পারেন, তারা সংকটের শুরু থেকেই তাই করে যাচ্ছে।এদের এমন অনেক বাড়ি আছে যাতে একজন মানুষই বাস করেন। লিভিং স্পেস, হাউজ বা ফ্ল্যাটের কাছে খোলা জায়গা, বিশাল বিশাল পার্ক, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং মানার প্রবণতা তাদের সাহায্য করছে। তারপরও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের অনেকে পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। এপ্রিলে র ২ তারিখে ইউকে‘র হেলথ সেক্রেটারী মেট হ্যানকক মাসের শেষে দিনে এক লাখ টেস্টের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। যা ৩০ এপ্রিল ছিল তারা অর্জন করে। ঐদিন এক লাখ বিশ হাজারের বেশি টেস্ট তারা করে। যদিও এরপর গত শুক্রবার পর্যন্ত দিনে এক লাখ টেস্ট হয়নি তাও যে খুব বেশি কম তাও নয়। শুক্রবার সে সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজারের মত। কথায় কথায় উন্নত দেশের চাইতে প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে বলা হলেও সেখানে গত ৩ মাসে ১ লাখ বিশ হাজার টেস্ট কি হয়েছে? যা একদিনে ইউকে করেছে। সেটা কখনো সম্ভব নয়, সম্পদ সামর্থ্য এর বিষয় তো ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে ঢাকা যায় না। সেক্রেটারীর নিচের লেভেলের কর্মকর্তা দিয়ে প্রশ্নউত্তর বিহীন অনলাইন ব্রিফিং কেমন যেন হাস্যকর। এদিকে প্রশাসনের লোকগুলো বসে বসে হিসেব দিচ্ছে চাল ডাল ত্রাণের। কথার আগে পিছে মাননীয় মাননীয় স্তুতি, সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে ভাব। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় একটা কমিটি ছিল ঠুঁটো জগন্নাথের মত। পিপিই কে পিপিপি বলা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই সেদিনও বলছিলেন আমাদের এত পিপিই‘র দরকার নেই। বিজিএমইএ‘র রুমানা হক আর্তচিৎকার করে প্রথমে বললেন ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার ক্যান্সেল হয়ে গেছে। অথচ ২% সার্ভিস চার্জে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণার পরও দরিদ্র পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে তারা কি খেলাটা খেলে চলেছে! মাত্র দু চার সপ্তাহে সরকারের সামর্থ্য ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রায় লাখো কোটির প্রণোদনা হলেও বস্তুত: অব্যবস্থাপনা, প্রস্তুতির দুর্বলতা, দুর্নীতি সব মিলিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে কার্যত ‘বাংলাদেশ মডেলে‘ মৃত্যুর সামনে ঠেলে দেয়া হোল। ডাক্তারদের মধ্যে এখন ৫ শতাধিক, ৭ জন নিহত সহ হাজার পুলিশ, কর্মকর্তা কর্মচারী অসংখ্য সাধারণ মানুষ করোনা আক্রান্ত। নিম্নমানের মাস্ক পিপিই নিয়ে প্রতিবাদী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বদলীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাচাটা এক পেশাজীবী ডাক্তার নেতা সেই ফেব্রুয়ারি তে বলেছিলেন তিনি নিশ্চিত বাংলাদেশে করোনা কোন ক্ষতি করতে পারবে না।দেশে দেশে লকডাউন হয়েছে হচ্ছে, আমাদের দেয়া হয়েছে ছুটি। ছুটি শব্দটিই প্রতীকী প্রমাণ করে সমস্যা অনুধাবন ও অব্যবস্থাপনার ভয়াবহতা।
৪। মুশতাক আহমেদ এক লেখার সূত্র ধরে আটক হয়েছেন বলে জানতে পারি। প্রাথমিকভাবে জানতে পারলাম সে লেখাটি আমাদের সদ্যোজাত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ষ্ট্রেইট ডায়ালগ ডটকম (straightdialogue.com)-এ ছাপা হয়েছিল। আমাদের এক কলিগ যিনি হংকংভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠনে কাজ করেন তার লন্ডন টাইম মংগলবার সন্ধ্যায় ফেইসবুক পোস্টটি প্রথম দেখি বুধবার ভোরে। সেখানে তিনি ঐ লেখার লিংক শেয়ার করে লিখেছিলেন ‘সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখার অপরাধে ‘উনাকে ভুল বুঝিয়ে’ কৃষ্ণ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে গুম করা হয়েছে সৌখিন আলোকচিত্রী মুশতাক আহমেদকে।‘ নতুন পোর্টালের কাজের চাপে এর মধ্যে বেশ কদিন সেভাবে ফেইসবুকে আসা হয়নি। পরে জানতে পারি সোমবার সন্ধ্যায় মুশতাক আহমেদ কে উনার বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এ খবর জানার পর থেকে চরম অস্বস্তি ও অসুস্থ বোধ করছি। এ লেখাটি ২৪ এপ্রিল তিনি ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন। দুদিন পর চোখে পড়লে আমাদের পোর্টালে ছাপাবার কথা মাথায় আসে।শেষ পর্যন্ত তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে ঐদিন( ২৬ এপ্রিল ২০২০) ছাপিয়ে দেই। গতকাল শুক্রবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বৃহস্পতিবার দেয়া প্রেস স্টেটমেন্টের সপ্তম প্যারায় চোখটা আটকে গেল। Ahmed had recently published an article criticizing the shortage of personal protective equipment for doctors. এখানে an article criticizing এ লিংক পাওয়া গেল ‘করোনা: জনপ্রতিনিধিদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও বাস্তবতা‘ শীর্ষক আমাদের পোর্টালে ছাপা সেই লেখাটি। বুধবার সকাল থেকে স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না, যদিও হংকংয়ে থাকা সহকর্মী নিশ্চিত করেছিলেন তিনি এক সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে মুশতাক আহমেদ কে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে তিনি এই লেখাটির লিংকই তাকে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছিলেন। তারপরও ভেবেছি হয়তো কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। নিজেকে বার বার এ জন্য দায়ী করছি – শুধু শুধু কেন উনার মত একজন মানুষের বিপদ ডেকে আনলাম। এর আগে দেশে থাকার সময় যখন আসকের তদন্ত টীমে কাজ করতাম তখন নানা পরোক্ষ প্রায় প্রত্যক্ষ হুমকি ধামকি সব সময় ছিল। ইউকে তে আইন নিয়ে পড়তে আসার পর খুব একটা লিখতে ইচ্ছে করতো না প্রথমে। ব্লগিং কিছু করেও আর মন বসাতে পারিনি। ফেইসবুকে কিছু লিখলেই অনেকে অনেকভাবে নিরুৎসাহিত করতেন। ২০১৬/১৭ এর দিকে সোশ্যাল মিডিয়া র পাশাপাশি কাছের কিছু মানুষের চাপ ও অনুপ্রেরণায় অনলাইন পোর্টালে লিখতে শুরু করি। এরপর শুরু হয় এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। যে অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিয়মিত লিখতাম তার সম্পাদককে মৃত্যুসহ নানা হুমকি দেয়া হয়। টেলিফোনে, ম্যাসেঞ্জারে আমাকেও একইভাবে হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে লেখার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি, সম্পাদকও লেখা ছাপতে চাইতেন না। সম্পাদকীয় বোর্ডের প্রভাবশালী একজনের অনুরোধে লেখা কিছু ছাপলেও ঐ পোর্টালে লেখা প্রায় সব লেখা হাইড করে ফেলা হয়েছে। সম্পাদক ভদ্রলোককে নানা দরকারে দেশে যাওয়া আসা করতে হয়। অগত্যা অন্য পোর্টালে লেখা দেবার পর দেখি সিলেটের দুটো সদাশয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। স্পেনের একটা ইউকে‘র টার মত প্রায় সব লেখা হাইড করে রেখেছে।নিতান্ত বাধ্য হয়েই কাছের দু একজন মানুষের অনুপ্রেরণা য় নিজেরাই একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল করার চিন্তা করি। অবশেষে কিছুদিন পরীক্ষামূলক প্রকাশনার পর এই পোর্টালের আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছি । মুশতাক ভাইকে যে দিন তুলে নেয়া হয় কাকতালীয়ভাবে সেদিনই আমাদের পোর্টালে র আনুষ্ঠানিক যাত্রা। লেখক হিসেবে যা লিখতাম বা সম্পাদক হিসেবে যা ছেপেছি তার কোথাও কোন গুজব, ভুয়া তথ্য উদ্দেশ্য মূলক কোন যুক্তি তর্কের অবতারণা পরিহারের বিষয়ে সব সময় সতর্ক ছিলাম, এখনো তাই আছি। তিনি লিখেছিলেন স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি, অনুগত তোষামুদে পেশাজীবী ও আমলাদের দৃষ্টি ভঙ্গি ও করোনার মত মহামারীকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা নিয়ে, তা লিখে মুশতাক আহমেদ অন্যায় করেননি। শাহ আলম ফারুকরা তা নিজ আগ্রহে তা ছাপিয়ে ও অন্যায় করেনি। তারপর ও দিদারুল, মুশতাক, কিশোর কিংবা হাতে পিচমোড়া বেঁধে আদালতে নেয়া নিজভূমে পরবাসী সাংবাদিক কাজলকে আজ কারাগারে থাকতে হচ্ছে। দেশে থাকা সুহৃদ প্রিয়জনরা শাহ আলম ফারুকদের নিষেধ করে দেশে আসতে। সব ক্লাসে তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া তথ্যমন্ত্রী বিদেশে থেকে লেখা গঠনমূলক সমালোচনা বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়। আজ দেখলাম পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছে আমেরিকাতেও বাক স্বাধীনতা নেই। সরকার সরকারী কর্মচারীদের পরিপত্র দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক থাকতে বলছে। বিশ্বব্যাপী যখন দলমত নির্বিশেষে দেশে দেশে সবাই মিলে করোনা মোকাবেলা করছে, তখন ভিন্নমতকে কোণঢাসা করে, প্রমানিত ব্যর্থতার জেরে আগামীতে যে ধূমায়িত ক্ষোভ বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাকে অংকুরেই স্তব্দ করে দিতেই যেন সরকার বদ্ধপরিকর হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জনগণকে বাঁচানোর মূল এজেন্ডা থেকে তাদের কাছে দমন পীড়ন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকাই মুখ্য হয়ে দাড়িয়েছে। যে সময় নাগরিক সমাজ অবদমিত, বুদ্ধিজীবী সমাজ রাজানুগ্রহের লোভে নিশ্চুপ, সব মিডিয়া বিটিভির মত বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন আর উন্নয়নের অনেক সংবাদ দিয়ে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যতার শেষ প্রান্তে, সে সময় বিকল্প মিডিয়ায় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক কাঁচা ধান কাটার দৃশ্য, ত্রাণের চাল চুরি, এক চিমটি ছুটি দু চিমটি লকডাউনের অবস্থা বুঝাতে কিংবা নিজেদের ক্ষোভ বিক্ষোভ একটু প্রকাশ করলে কি এমন ক্ষতি হয়? সবচে কস্ট হচ্ছে সহমত ভ্রাতা ভগ্নিদের জন্য যারা সব অন্যায় অপকর্ম কে সমর্থন দিয়ে লাভবান হয়েছে বা হবার আশায় আছে। করোনার আগ্রাসনে তারা কি সহজ ইশারায় রেহাই পাবে? মহামারী কি ইশারা মানে? না মহামারী করোনার চেয়ে শক্তিশালী কোন ফাঁকা আওয়াজের মানব মিসাইলে তা দমন হবার মত কিছু??
পুনশ্চ: লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট কিশোর, সাংবাদিক কাজলসহ সব অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে ন্যূনতম শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়া হোক।
শাহ আলম ফারুক:
সম্পাদক (অবৈতনিক), স্ট্রেইট ডায়ালগ ডটকম