ব্যবসায়ীরা আজকাল সরাসরি কোন ব্যবসা পায় না। তাঁরা পায় সাব কন্ট্রাক্ট। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িতরা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি চাকুরীজীবী বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বনামে বা বেনামে ব্যবসা পাচ্ছে/আনছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেরা সে সব কাজ করছেন না। ২-১০% কমিশনের বিনিময়ে সেটি আসল ব্যবসায়ীদের কাছে ছেড়ে দিচ্ছেন। কদিন আগে ইউটিউবে আসা একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের সাক্ষাৎকারে অনেক বিষয়ের সাথে সামনে এসেছে সামরিক বাহিনীর কর্পোরেট হাউস হয়ে ওঠার বিষয়টিও।
একটি দেশের অর্থনীতি এভাবে সচল থাকে না। বলা হয়ে থাকে আমাদের মাথাপিছু আয় ১৯৪০ ডলার অর্থাৎ গড় হিসাবে মাসিক মাথাপিছু আয় সাড়ে ১৩ হাজার টাকার কিছু বেশি। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১০ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৭ কোটি মানুষের অ্যাকাউন্টে গড়ে আছে মাত্র ৬১০ টাকা ! এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে শুধু আলু- ভাত খেলেও তো একটা সপ্তাহ চলতে পারবে না একটা পরিবার। আমাদের উন্নয়নের গল্প এমনটাই !
কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা গেছেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ২৩শে মে সেনাসদরে ফিরে যাবার আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লেখা এক চিঠিতে সিএমএসডিসহ গোটা স্বাস্থ্য খাতকে ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্যমুক্ত’ করার অনুরোধ জানান। চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদার চক্রের ইশারায় বদলি, পদায়ন হয়ে থাকে। সিএমএসডির কেনাকাটাও তাদের কবজায়। তিনি চিঠিতে ঠিকাদারদের নামও উল্লেখ করেন। এই ঠিকাদার কারা এবং এদের আনুগত্যের খুঁটি কোথায় বাঁধা তা বুঝতে খুব বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন নাই।
আসলে সরকার ও সরকারি চাকরিজীবীরাই এখন বাংলাদেশ। পাবলিকের কাজ খেয়ে না খেয়ে কর দেয়া ও বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানো। জনগণকে নিয়ে অবশ্য সরকারের মাথা ব্যথাও নাই। প্রশাসন, পুলিশ, সেনা, সাংবাদিক, চিকিৎসক এদের হাতে রাখতে পারলেই দেশ ঠান্ডা। আজ্ঞাবহ চাটার দল এই জবাবদিহিবিহীন ও দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসন দেশকে ভোগাবে দীর্ঘ মেয়াদে।
যখন কোনো মহামারি আসে তখন তা ক্ষতি করার পাশাপাশি অনেক শিক্ষাও দিয়ে যায়। করোনা মহামারীও অনেক শিক্ষা দিয়েছে। সবচেয়ে যে বড় শিক্ষা তা হোল বৈষম্যহীন উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা শিক্ষা। কাউকে পেছনে ফেলে, বঞ্চিত রেখে এগিয়ে যাওয়াটা উন্নয়ন নয়। উন্নত হতে হলে সবাইকে সাথে নিয়েই এগোতে হবে। উন্নয়ন শুধু অর্থনীতির একটা সূচক নয়, বরং সবার মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জীবনের সার্বিক নিশ্চয়তার নাম উন্নয়ন। ৫% মানুষের হাতে ৯৫% সম্পদ থাকলেও তাঁরা যে নিরাপদ নয় সেটা আজকের এই মহামারী খুব ভালো মতো বুঝিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি,অনাস্থা ও করোনা আজকে সর্বত্র যে স্থবিরতা তৈরি করেছে তাতে এ শিক্ষা ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগাতে না পারলে আমজনতা কোন লক্ষণ ছাড়াই দীর্ঘদিন জিইয়ে রাখবে এ জীবাণু, বারবার আপনাদেরই ধরাশায়ী করতে।
এন আফরোজ রোজী: লেখক