আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমারা কিছুটা হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল পাচ্ছি। গতকাল আমার স্ত্রীকে নিয়ে, নিজের একটি কাজের জন্য, ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম। ওখানে কর্তব্যরত সেবাদানকারী সরকারি কর্মচারী, আমায় প্রশ্ন করলেন, কাজটি কি আপনি নিজে করবেন! আমি বুঝেও, না বোঝার ভান করে বললাম, আমি বুঝিনি!আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
তিনি কাচুমাচু করে বললেন, এখানে লোক আছে তো! ওনরা আপনার কাজ করে দেবে।
আমি আমার পকেট থেকে স্মার্ট, মাল্টি মোবাইল ফোনটি বের করে,তাঁর ছবি তুললাম। মুহুর্তেই তার চেহারা এবং কথার সুর পাল্টে গেলো।
তিনি তার আসনে বসা ছিলেন, লাফিয়ে,তার চেয়ার থেকে উঠে তিনি এবং তার লোকজন আমাকে ঘিরে ফেললেন। বলতে থাকলেন, আপনি কেনো আমার ছবি তুললেন? এখনই ডিলেট করুন। আমি বললাম, আমার কাজটি না হওয়া পর্যন্ত, এটা থাকবে।
ওই অফিসের লোকজন তখন, দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আমার ফাইলপত্র, নাড়াচাড়া করতে থাকলেন।
উল্লেখ্য, গত চার মাস ধরে, ওনারা আমাকে নানা অজুহাতে, অবৈধ ভাবে, টাকা নেয়ার ধান্ধায় হয়রানি করে আসছিলেন।
সম্প্রতি আর একটি ঘটনার বাস্তব প্রমাণ, আমি নিজেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফলে, পুলিশের ঘুষের টাকা চুরি করছে, রিকশাচালক।
আমি শাহবাগ থেকে রিকশা নিয়েছিলাম, খিলগাঁও নন্দীপাড়া যাত্রার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় এখন বেশ কিছু রাস্তায়,রিকসা চলাচল নিষিদ্ধ। আমাকে বহন করা রিক্সাটি হোটেল রূপসী বাংলার পাশ থেকে, রমনা পার্ক মিন্টুরোড, বেইলি রোড হয়ে, খিলগাঁও আসছিলো। পথে পুলিশ আটকে দেয়। রিকশা চালক আমাকে রিকশায় বসিয়ে, কিছুটা দূরে পুলিশের সাথে কথা বলে, তিনি আরো একটু সামনে এগিয়ে, একটি লাইট পোষ্টের পাশে বসলো। আমি ভাবছিলাম, রিকশাচালক হয়তো, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। তিনি একটু বসেই, আবার উঠে এসে, দ্রুত রিকসা চালাতে শুরু করলেন।
খিলগাঁও রেল ক্রসিং পেরিয়ে, আমাকে এক গাল হেসে বললেন, স্যার! পুলিশের টা হা চুরি করেছি😂😂😂
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, কিভাবে! রিকশা চালক আমায় উত্তরে বললেন,ঐ যে কতা কইলাম! ঐ খানে, পুলিশ, দশ টাহা আমারে ইটের নিচে রাইখা যাইতে কইলো, আমি রাস্তার পাশে ইট তুলে দেখি, ওখানে অনেক টাহা! ইটের নিচে, আমি সবগুলো টাহা লইয়া আইয়া পরছি।
উল্লেখ থাকবে, বিভিন্ন রাস্তায় ইদানীং সিসি ক্যামেরা থাকায়, পুলিশ ও সব এলাকা থেকে, সরাসরি হাতে টাকা নেয় না।
আমার মতো, হতদরিদ্র মানুষরা বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের কিছুটা হলেও সুবিধা ভোগ করছেন। অপরদিকে একটা শ্রেণী ডিজিটাল সুবিধা নিয়ে, কিছু পোস্ট দিয়ে, মানুষের মধ্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। নানান প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে গলাকাটা ছবি দিয়ে, নানা ধরনের লেখা পোস্ট করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন। ভাইরাল হচ্ছে অনেক পোস্ট ও ছবি। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, সাধারণ নাগরিকরা সুবিধা পাবেন। উপকৃত হবেন। সমাজে সম্মানিতও হবেন।
মানুষের মধ্যে এখন, সাংবাদিক আতংক।দেশের শীর্ষ দৈনিক এবং চ্যানেল গুলোতে কর্মরত সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ, বিনা বেতনে কাজ করছেন। এসব সাংবাদিকদের বেতন ভাতার প্রয়োজন নেই। এরা একটি পরিচয় পত্র আর নিয়োগপত্র পেলেই, থানা সদরে তাদের, লাখ টাকা আয় হয়। টিভি ক্যামেরা দেখেই বা সাংবাদিক পরিচয় পেলে, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা তঁাদের চাহিদা মিটিয়ে দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে, প্রেসক্লাব আর রিপোর্টার ইউনিটি। জানা যায়, এসব ক্লাব বা ইউনিটিতে প্রশাসনের দুর্নীতিবাজরা প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা পৌঁছে দেয়। এ টাকা ঐ ক্লাবের সাথে জড়িত সবাই ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়।
বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক এবং চ্যানেলগুলোর সবাই বড় সাংবাদিক/ সম্পাদক, তবে দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, এরা কেউই বাংলাদেশের তৃণমূলে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে, ভাবেন না। একটি নিয়োগপত্র ও পরিচয়পএ ধরিয়ে দিয়েই, দায়িত্ব শেষ করে ফেলেন। ওনাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো সাংবাদিক যখন বিপদের মুখোমুখি হন, তখন আর এ সম্পাদক সাহেবরা ফিরেও তাকান না। উল্টে ফেলেন চোখ।
যে সকল সাংবাদিক সচ্ছল পরিবারের, তাঁরা চলছেন, নিজের খেয়ে। সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজসেবা করছেন, সমাজ উন্নয়নে নানামূখি কাজ করছেন। সম্মানও পাচ্ছেন। আর যারা অসচ্ছল, তারা পেটের তাগিদে কি করছেন! তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন নয় কি?
– নাসিম আনোয়ার, সাংবাদিক, লেখক
ঢাকা ২০ আগস্ট ২০২০