মানুষ যখন কোন কিছু করতে না পেরে চরম হতাশায় ভোগে, তখন হয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবে। রাগ, ক্ষোভ দু:খে এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যাচ্ছি।
ভিয়েতনামে ভাগ্য বদলানোর আশা নিয়ে যাওয়া প্রবাসীদের সঙ্গে গত এক মাস ধরেই যোগাযোগ হচ্ছিলো। নির্যাতনের শিকার এ প্রবাসীদের একটা দাবি ছিলো, তারা দেশে ফিরে আসতে চায়।গরু, জমি বেচে, ঋণ করে ৪/৫ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়েছিলো। কিন্তু প্রতারকদের কারণে তারা আজ নি:স্ব হয়েও দেশে ফিরতে চায়।
দূতাবাস ফিরে আসতে ইচ্ছুকদের অনলাইনে আবেদন করতে বলে। অনেক অনিশ্চয়তায় আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ে। অনলাইন আবেদনে যদি কাজ না হয়, সেজন্য দূতাবাসে গিয়ে হাজির হয়। তাদের পরিস্থিতির কথা সরাসরি বললে, যদি দূতাবাসের মায়া হয় !
দূতাবাসকে বাংলাদেশ ভাবাটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাড়ালো। তারা দেশ ফিরতে পারলো ঠিকই কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ না থাকার পরও তারা আজ জেলে।
খুব বেশি মনে পড়ছে সুমনের কথা। দেশে ফেরার কয়েকদিন আগে তার সাথে কথা হয়। তাকে জিম্মি করে, মেরে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করে প্রতারক মানব চাপারকারী চক্র । সেই সুমনও আজ জেলে।
কারা মানব পাচারে জড়িত, অর্থ পাচার করেছে সেই তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করেছি আমি, আরও অনেকে। তারা যে দিন দেশে ফিরে, বিমানবন্দরে তাদের কাছ থেকে তথ্য নেয় বিভিন্ন সংস্থার লোকজন। আশা করেছিলাম, শিগগির দায়ী এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু তা হয়নি, মিথ্যা অভিযোগে হতদরিদ্র লোকগুলো জেলে পাঠানো হলো। অবশ্য তারা জেলের বাইরে থাকলে দায়ী এজন্সির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতো।
আদালতে অভিযোগপত্রে পুলিশ বলেছে, ভিয়েতনাম ফেরতরা নাকি দিয়াবাড়ির কোয়ারেন্টিন সেন্টারে থাকাকালে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত থাকার উদ্দেশ্যে তারা সলাপরামর্শ করিত।
সেনা বাহিনী নিয়ন্ত্রিত কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে রাষ্ট্র বিরোধী সলাপরামর্শ হতো ? পুলিশ শুধু এই প্রবাসীদের না, সেনা নিয়ন্ত্রিত কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প সম্পর্কেও বিরূপ অভিযোগ তুলেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এরা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
তাহলে যারা মানব পাচার করেছে, অর্থ পাচার করেছে, তাতে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে?
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে তাদের বাংলাদেশে অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা রহিয়াছে। তাই জেলখানায় রাখা দরকার।
সম্ভাবনাময়ী এই অপরাধীদের কেন জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র দিয়েছে?
সম্ভাবনাময়ী এই অপরাধীরা যখন দেশ ত্যাগ করলো, তখন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ কি করেছে?
উপরে বসে ঈশ্বর আল্লাহ্ দেখছে তামাশা
নিচে তোরাই মোদের হর্তাকর্তা আর ভাগ্যবিধাতা
আমি আমার নিজের মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলতে চাই
আবার ভাবি নিজের বেলাও এ বড্ড হালকা শাস্তি হয়ে যায়।
– চৌধুরী আকবর হোসেন, সাংবাদিক
ঢাকা ১ সেপ্টেম্বর ২০২০