খুব বেশী দিন আগের কথা নয়। ইংরেজ আমলে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, উইলিয়াম কেরির মত কয়েক জন শিক্ষানুরাগী মানুষ বাংলা ভাষায় গদ্য সাহিত্যের প্রচলন করেন। তার মানে এর আগের যা কিছু সাহিত্য ছিল সবই ছিল পদ্য সাহিত্য। গল্পগুলোও তখন কবিতার আকারে লেখা হত। কাক এবং কবির সংখ্যা নিয়ে নানান কথা আছে। শিক্ষিত কোন মানুষ জীবনে একটাও কবিতা লেখে নাই এমনটা নাই বললেই চলে। সে হিসেবে অতীত কালেও অনেক কবি ছিল ধরে নেয়া যায়। কিন্তু আমরা কি সবার নাম জানি ? জানিনা। কালের আবর্তে তারা হারিয়ে গেছেন। কারো কারো লেখা হয়ত মুখে মুখে ঘুরে বেড়িয়েছে, তারপর নাই হয়ে গেছে। যে সব ভাগ্যবানদের লেখা এখনও টিকে আছে, তারা কারা? এরা সবাই ছিলেন ঐ সময়কার রাজ রাজাদের সভাকবি। উনারা রাজ সভায় রাজাদের গুণগান গাইতেন এবং বেশীর ভাগ সময় রাজার পছন্দের দেব দেবীদের নিয়ে কাব্যগ্রন্থ লিখতেন। আধুনিক কবিদের মতই উনারা ছিলেন নরম মনের এবং কিছুটা বিলাসী মানুষ এবং তাদের প্রায় সবাই ছিলেন সুরাসক্ত । লেখালেখি ছাড়া উনারা অন্য কোন কাজ জানতেন না বলে অন্যের দয়ার বেঁচে থাকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। শেখ সাদি, হাফিজ, ওমর খৈয়াম,ফেরদৌসি, মির্জা গালিব এদের সবারই ছিল ছন্নছাড়া জীবন। এঁদের সবাই স্বাধীন চেতা হলেও পেটের দায়ে তাদের আপোষ করতে হয়েছে, ফরমায়েশি লেখা লিখতে হয়েছে। যে সিপাহী বিপ্লব নিয়ে উপমহাদেশের মানুষ গর্ব বোধ করে সেই সিপাহী বিপ্লবের বিরোধিতা করতে হয়েছিল মির্জা গালিবকে। শুধুমাত্র ইংরেজদের ভাতা যাতে বন্ধ না হয় সে জন্যে। (অনেক হয়ত বিদ্রোহী কবির কথা বলবেন। আ রে ভাই সবাই কি নজরুলের মত গোয়ার গোবিন্দ হতে পারে?) ।
বর্তমানে কবি সাহিত্যিক, শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রীরা অনেক সচ্ছল হলেও কিছু দিন আগেও এঁরা না খেয়ে , যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মরতেন। যারা অন্য পেশায় থেকে সাহিত্য চর্চা করেন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল হলেও বাস্তব জীবনে অনেকটা অকেজো স্বভাব কবিদের অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন কিন্তু হয় নাই। এঁদের মধ্যে কিছু গোঁয়ার গোবিন্দ ছাড়া অনেকই হয়ত নিজের প্রয়োজনে, নিজের পরিবারের প্রয়োজনে আধুনিক রাজ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে থাকেন। রাজাদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেন। হয়ত আগ বাড়িয়ে রাজায় ক বললে কাঁঠাল বলেন, শ বললে শালা বলেন ( সরকার বিরোধীদের) । কেউ হয়ত নিতান্তই পেটের দায়ে করেন, কেউ হয়ত ছেলেপুলে, বউদের তাড়া খেয়ে করেন আবার কেউ হয়ত সুরা কেনার পয়সার জন্য। মির্জা গালিব তাঁর উত্তরপুরুষ কবিদের মধ্যে যে জিন ঢুকিয়ে দিয়েছেন তা হয়ত অনেকেই অস্বীকার করতে পারেন না। হয়ত ভুলে যান ,অনেকের মত সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মত তারও একটা মেরুদণ্ড ছিল। বেচারা !!!
( এই লেখায় কোন জীবিত বা মৃত ব্যাক্তির পক্ষ বা বিরুদ্ধাচরণ করা হয় নাই। কোন ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় )
– শরীফ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী ছড়াকার