আবারও সেই কথা। ক্রস চায়। এরা অনেকে ক্ষুব্ধ। অস্বীকার করি না। তাহলে একটু বলি, এই যে ক্রস ফায়ার সংক্রান্তি বিভ্রান্তি এটা কিন্তু আসল সমস্যাকে আড়াল করে দিচ্ছে। দিনের পর দিন একটা বাহিনীর নামে তারা দৌরাত্ন চালিয়ে গেছে নইলে এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস পেত না। এই যে দৌরাত্ন চালিয়ে যাওয়া এটা কিসের আশ্রয়ে হয়েছে জানেন রাজনীতির আশ্রয়ে। তাই সগৌরবে দেলোয়ারের কাভার ছবিতে সরকার দলীয় সাংসদের ছবি স্থান পাচ্ছে। সাংসদকে ফুল দেয়া, দলের আরো নেতার সাথে ঘনিষ্ঠতার রাজনৈতিক ঢাল। এরপর আসেন থানায়। থানা থেকে বড় জোর মাইল চার/পাঁচ মাইলের মধ্যে ঘটনা। যোগাযোগের দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন বলা যাবে না। বরং অপেক্ষাকৃত ভালো রাস্তাঘাট। কোানাকুনি হাঁক দিলে খুব বেশি হবে না। আপনি কি মনে করেন এই এক ঘটনাতেই দেলোয়ার নামের বিষবৃক্ষ হঠাৎ মহীরুহ হয়ে উঠেছে, মোটেই না। খবর নিয়ে দেখেন কাছাকাছি এমন অনেক বর্বর ঘটনা ঘটিয়ে হাত পাকা হবার পরই সাধারণ এক দেলোয়ার লাইম লাইটে এসেছে। সাংসদ থানা বড় ভাই সব কিছু ম্যানেজ করেছে বলে সমসাময়িকরা মামা বলে সম্মান করেছে, বা করতে বাধ্য হয়েছে। মামার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। আর বেশি যাবো না, এসপি অফিস থেকে দেলোয়ার মামার বাড়ির দূরত্ব থানা থেকে দেলোয়ার মামার বাডির দূরত্বেরও কম। এ রকম কত জনের কথা বলবো যারা মামাকে লালন করেছে পালন করেছে। তাই লন্ডন থেকে লং ডিসটেন্সের কলেও অনেককে কথা বলতে পাইনি। এরা কেউ দেলোয়ারকে গণ্য করার মত নয়। কিন্তু দেলোয়ার মামাদের নিয়ে এক ধরণের বিব্রত, হয়তো যুগ পাল্টেছে স্বগতোক্তি করে ভেবেছে কী দরকার এ সবে ( মূলত: বিপদ) জড়িয়ে।
তাহলে এখন বলেন ক্রস ফায়ার আপনি কাকে দিতে চান? দেলোয়ারকে? রহীমকে? কালামকে। এরা তো আসল হিসেবে একেকটা টোকাই। রাজনীতি এ টোকাইদের ক্ষমতা দিয়েছে, পুলিশ প্রশাসন এদের সমীহ করেছে, পুষ্ঠ করেছে। সময় সময় সবই চলেছে কম বেশি সমঝোতায়। যে সাংসদ যে পুলিশরা এতদিন দেলোয়ারদের রক্ষা করেছে তাদেরকে ক্রস ফায়ারের দাবি তোলা দূরে থাক। কাল যখন তারা বিবৃতির নামে সত্য চাপা দিয়ে বলবে এদের চিনি না জানি না, আপনি সত্য জেনেও চুপ থাকবার ব্রতই পালন করবেন। আসলে এ ভাবে কিন্তু দেলোয়ার নয়ন বন্ড সাইফুর রিফাতদের উৎপাদনের ফ্যাক্টরী বন্ধ হোক আপনি তা চান না। কারণ নয়ন বেঁচে থাকলে তো গুরুর নাম জানতে পারতেন। দেলোয়ারকে ঠিকমত জিজ্ঞাসাবাদ করলে কিংবা রহীম কালাম বলতে পারবে কেমন করে তারা দেলোয়ার মামার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। এখন আপনি সেই ফ্যাক্টরী চালু রাখার স্বার্থে ফ্যাক্টরী মালিকদের রক্ষায় তাদের চেলাদের সাথে বা আপনার মত নানা কারণে ক্ষুব্ধ অনেকের সাথে সুর মিলিয়ে ক্রস ফায়ারের সমাধান চাইছেন! অথচ এক ভাবে এই সব পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় এইসব সাংসদ, ওসির, এদের ক্রস ফায়ার দূরে থাক এদেরকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা এদের আইনের আওতায় আনার কথা ভাবতেও আপনি সাহস পান না! যদিও প্রকৃত আইনের শাসন থাকলে আপনি তা পারতেন।
সময় থাকতে বুঝুন ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১৮০০ বিচারকও কেন থাকে না? এত উন্নয়ন বিচার বিভাগের উন্নয়ন কেন হয় না? কেন আইনের কাছে আশ্রয় চাইতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে নিত্য হয়রানি দুর্নীতির শিকার হতে হয়? কেন ওসি এসিদের সম্পদ শত কোটি হয়? কেন কোন রূপ জনরায়কে বাদ দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব বেছে নেয়ার এত ঝোঁক? কেন প্রশাসন থেকে তদন্ত আলাদা হয় না? এ প্রশ্ন সব গুলো আপনার কাছে যৌক্তিক মনে নাও হতে পারে, তবে এ গুলোর পরস্পরায় আপনি ক্রস ফায়ারের অলীক ও অসভ্য বিচারে কারা সত্যিকার লাভবান হয় আর পক্ষান্তরে দেশ জনতার কেমন জনতার কেমন ক্ষতি হয়, তা হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। আপনি যা চান বুঝে শুনেই চান প্লিজ!