রাষ্ট্রক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীতে হেফাজতকে খাসজমি দিয়ে ও শোকরানা মেহেফিল করে প্রশমিত করে রাখলেও; সরকার তাদের প্রশমিত করে রাখতে পারেনি মোদির সফরকালে। নিজেরই পোষা প্রাণীকে তাই ‘নারী’সহ রিসর্টে ধরে সংসদে পোষা প্রাণীর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
এটা আওয়ামী লীগের নিতান্ত দলের ভেতরের ব্যাপার; কারণ হেফাজত সরকারের গদি টিকিয়ে রাখতে অনুভূতি দণ্ড নিয়ে সরকার সমালোচককে নাস্তিক ট্যাগ দেবার ও দেশছাড়া করার দায়িত্বে নিয়োজিত। আর স্বাধীনতার চেতনার অনুভূতি দণ্ড নিয়ে সরকার সমালোচককে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ট্যাগিং ও কারাগারে নেবার জন্য তালিকা করার দায়িত্বে আছে সহমত লীগ।
একটি দলের অভ্যন্তরীণ কর্মীকে কীভাবে শাসন ও শিক্ষা দেবেন দলপ্রধান; তা নিয়ে পেশাদার মিডিয়া নিউজ করার কথা নয়! পেশাদার মিডিয়া কোথায় কীভাবে নিউজের ট্রিটমেন্ট দেবে এটা পিএম অফিসে বা সহমতযন্ত্রের কাছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে না। আজকের সরকারের সেবাদাস বাতাবি লেবু মিডিয়ার ভিড়ে পিপলস নিউজ বা জনস্বার্থে খবর প্রকাশ করে; এমন দু’একটি পেশাদার মিডিয়া হাউজ আছে; আমরা সাধারণ পাঠকেরা এটুকু বুঝতে পারি। সেরকম পেশাদার মিডিয়া এই তৈরি করা যৌন রগরগে খবর তাই বড় করে প্রকাশ করেনি।
হেফাজতযন্ত্র মামুনুলের ঘটনাটা তো বে-আইনি একটি ঘটনা। রিসর্ট থেকে পুলিশ-প্রশাসনসহ বিরাট বহর নিয়ে ব্যক্তি-নাগরিককে তার প্রাইভেট স্পেস থেকে গ্রেফতার করা; তার কাছে নিকাহনামা দেখতে চাওয়া; এতো আদিম ঘটনা তো এখন সৌদি আরবেও ঘটেনা। আর ব্যক্তির টেলিসংলাপ ফাঁস যে বে-আইনি; সাংবাদিকতা নৈতিকতায় দণ্ডনীয় অপরাধ; সেটুকু কমনসেন্সসম্পন্ন যে কোন সাংবাদিকের জানার কথা। কাজেই এটা একটা বে-আইনি স্টিং অপারেশান; ফ্যাসিস্টেরা কাউকে শায়েস্তা করতে যেরকম কাজ জার্মানি বা রাশিয়ায় ‘মাতাহারি’ বা ‘রেড স্প্যারো’ বা নারী স্পাই পাঠিয়ে করতো। তাই আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতার কোড অফ এথিকস মানতে গেলে; এ খবর প্রকাশযোগ্যই না।
এটা নিউজ নয়। ক্ষমতা-কাঠামোর সৃষ্ট নেসেসারি ইলিউশান। মহামারীতে আইসিইউ না পেয়ে চলা অসুস্থতার মড়ক; মৃত্যুর ট্র্যাজেডি; করোনার প্রথম বছরে কোন শিক্ষা না নিয়ে সরকারের একইরকম স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিপর্যয় থেকে জনগণের মনোযোগ লিবিডোজনিত ‘যৌবনজ্বালা’ একটিভিস্টদের তৈরি করা যৌন সুড়সুড়ির গল্পে নিয়ে যাওয়া এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো। আর নরেন্দ্র মোদি ভারতে ফিরে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার সফরকালের হেফাজতের বিক্ষোভে। ঢাকা এই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে; নতুন দিল্লির এমন আশা প্রকাশের খবর জি-নিউজ-এ এসেছে।
সুতরাং এই কথিত জঙ্গিনেতা মামুনুল বিন লাদেনকে ‘নারীসহ’ গ্রেফতার ও সাইজ করে দেয়ার সামাজিক পুলিশিযজ্ঞ খুশি করেছে মোদিকে বলাই বাহুল্য। যৌবন জ্বালা ভিত্তিক এই হেফাজতযন্ত্র ধরার খবরটা মূলধারার মিডিয়ার বড় জোর সামাজিক-যোগাযোগ মাধ্যম কর্নারে যেতে পারে। কিন্তু নিউজ বলতে যা বোঝায় এটা তা নয়।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া