প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধারার মালিক/পরিচালকদের বিচার প্রকৃত পক্ষে আইনের জগতে অকল্পনীয়।
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞাপন মডেল মোসারাত জাহান মুনিয়া (২১) নামে একজন তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে (৪২) আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর সিনেমা নাটকের মতোই ঘটনা। সবশেষে জীবনের বিনিময়ে সবকিছুর মূল্য পরিশোধ করে গেলো মিষ্টি মুখশ্রীর তরুণী মেয়েটি।
পরিবার যথারীতি বিচার চেয়েছেন। নিজেদেরকে আওয়ামী পরিবারের সদস্য দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত আবেদনটি মনজুর করেছেন। সেই সঙ্গে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন— সায়েম সোবহান আনভীর যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে তিনি ইতিমধ্যেই দেশ ত্যাগ করেছেন।
বেশ আগের ঘটনা সকলের না হলেও আশা করি অনেকেরই মনে আছে। ২০০৬ সালের ৪ জুলাই রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে খুন হয়েছিলেন বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশসন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক সাব্বির। তিন দিন পর নিহতের ভগ্নিপতি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০০৮ সালের ১২ মে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন। এতে বলা হয়, গুলশানের ১০৪ নম্বর সড়কে বসুন্ধরা গ্র“পের মালিকানাধীন ৩/জি নম্বর বাসার ছাদ থেকে সাব্বিরকে ফেলে দেওয়া হয়। বসুন্ধরার মালিকের গুণবান ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবীর ছিলেন এ মামলার প্রধান আসামি। সাব্বির খুন হওয়ার কিছুদিন পর সানবীর দেশ ছেড়ে চলে যান। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন ২০১১ সালে দেয়া রায়ে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বস্তুনিষ্ঠ, প্রকৃত ও বাস্তব সাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।
রায়ে বলা হয়েছিলো এ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী যৌনকর্মী সাদিয়া আক্তার রাত্রি ও পাপিয়া গাইনকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। অথচ তারাই ছিল এ মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন তারা।
এছাড়াও ১/১১ পরবর্তী আরও বহু মামলায় তাঁদের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও সেগুলি কবে কখন শেষ হয়ে গিয়েছে তার খবর বসুন্ধারা গ্রুপ নিজেরাও হয়তো রাখেনি। কারণ তাঁরা জানেন তাঁদের হাত অনেক লম্বা !
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শতবর্ষ পূর্বে যে অমূল্য বক্তব্যটি লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন, আইনের জগত যুগে যুগে তার সত্যতা বহন করে চলছে ‘আমি-যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’ অবশ্য আমাদের দেশে বিচারের বাণী সরবে প্রকাশ্যেও কাঁদে। মুনিয়া হত্যার ক্ষেত্রে বলা যায় এ বিচার আইনের জগতে অকল্পনীয়!
– এন আফরোজ রোজী, লেখক