মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের কোন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড থাকে না। ওদের একজন ভালবাসার মানুষ থাকে। চাইলেই যখন তখন তাকে নিয়ে কোন ফাস্ট ফুডে যাওয়া যায় না।
চাইলেই দুজনে সারারাত মোবাইলে কথা বলতে পারে না। ওদের মোবাইলে সারারাত কথা বলার মত ব্যালেন্স থাকে না। কিছুক্ষন কথা বলার পরই লাইন কেটে যায়। তারপর সারারাত আর ঘুম আসে না। ফোনের ব্যালেন্স শেষ তো কি হয়েছে? ওরা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে। ওদের কথা হয় মনে মনে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের স্বপ্নগুলো ওদের মতই সাধারন। ওরা বড় কোন স্বপ্ন দেখে না। ওরা স্বপ্ন দেখে একদিন ওদের দুই রুমের একটা ছিমছাম বাসা হবে। ছেলেটা সারাদিন কাজ করবে। আর মেয়েটা বাসার কাজ সেরে ছেলেটার জন্য প্রতীক্ষা করবে।
রাতের দিকে ছেলেটা হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসায় ঢুকবে। ব্যাগ খুলে মেয়েটা দেখবে আলু কয়েকটা পঁচা। পটল পোঁকা খাওয়া। ছেলেটার বোকামি দেখে মেয়েটা ছেলেটার উপর রাগ করবে। ওকে বকা দিবে। ছেলেটা অসহায় ভঙ্গিতে ঘাঁড় চুলকাবে। একসময় মেয়েটার রাগ কমবে। এক কাপ চা এগিয়ে দিবে ছেলেটার দিকে।
ছেলেটার হাত খোলা। টাকা জমাতে পারে না। যা পায় তাই খরচ করে ফেলে। মেয়েটা ঠিক তার উলটো। সে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে। সংসার খরচের কিছু টাকা সে আলাদা করে রাখে। ওই টাকা দিয়ে একদিন সে ছোট্ট লাল রঙ এর একটা ফ্রিজ কিনবে। পাশের বাসার ভাবী কেমন করে যেন তাকায় অল্পকিছু মাছ মাংস রাখতে গেলে। হুট হাট যাওয়াও যায় না তাদের বাসায়।
ছেলেটার মাসের বেতন পেয়ে জোর করে মেয়েটাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যায়। বাসায় ফেরার পথে কোন একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোনার দিকে একটা টেবিলে জড়সড় হয়ে বসে দুজনে। কাঁটা চামচ নিয়ে কিছুক্ষন খুটখাট করে ছেলেটা। চামচ দিয়ে খেয়ে অভ্যাস নেই কিনা। মেয়েটা তখন হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করে। ছেলেটাও তখন লজ্জা ঝেড়ে হাত ডুবিয়ে সবজির সাথে রাইস মাখায়। চিকেনটা নিয়ে একটা কামড় বসায়। চাইনিজ খাওয়ার অভ্যেস নেই বলে অনেক খাবারই বেঁচে যায়। কিন্তু ওরা প্যাক করে বাসায় নিয়ে যায়না। খাবার বেঁচে গেলে প্যাক করে বাসায় নিয়ে যায় বড়লোকেরা। মধ্যবিত্তরা কেন যেন এই সংকোচের বৃত্ত থেকে বের হতে পারে না কোনদিন।
মধ্যবিত্ত জীবনে এটা সেটা অনেক কিছুরই অভাব থাকে। সবচেয়ে বেশি অভাব থাকে টাকা পয়সার। কিন্তু ওদের জীবনে একটা জিনিসের কোনদিন অভাব হয় না। সেটা হল ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জন্য শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও ওরা প্রান খুলে হাসতে পারে। একজন আরেকজনকে পাগলের মত ভালোবাসতে পারে।
– আকবর দীপু, সিডনী প্রবাসী লেখক