হে গণতন্ত্রের রণতূর্য,
আপনার জন্ম পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জে। আপনি সেই অনন্য গোপালী যিনি সহমত পাল বংশকে হাজার বছরের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছেন। যে ফরিদপুরের নদীভাঙ্গনের মানুষ; সারা দেশে ভিক্ষা করতো; আপনার পবিত্র লাইলাতুল ইলেকশন সেইসব ভিক্ষুককে আজ রাজা করেছে। কার্ল মার্কসও আপনাকে অভিবাদন জানাচ্ছে দেখুন, দুর্নীতি বসন্তের মাধ্যমে শ্রেণী সংগ্রামকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়ায়। শুধু ফরিদপুর কেন, গোটা বাংলাদেশের সহমত ভাইদের ‘গলি থেকে রাজপথে তুলে আনার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ আপনার।
হে সিভিল সার্ভিসের গর্ব,
আপনি রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদের তৈরি করা মেধা তালিকার উজ্জ্বল সেই তরুণ। দেশ স্বাধীন করেছেন যুদ্ধ করে; ক্ষমতার চেয়ার যে আপনার প্রাপ্য ছিলো স্যার। ১৯৪৭-সালের স্বাধীনতা যারা এনেছিলো; তারা তো সিএসপির চেয়ারে বসেছিলো; ১৯৭১ সালের চূড়ান্ত স্বাধীনতার পর বিসিএস-এর চেয়ার তো আপনার প্রাধিকার বা এনটাইটেলমেন্ট মহাত্মন। কে কবে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে অথচ স্বাধীনতার সুফল কুড়ায়নি!
হে রবিনহুড,
আপনি রাতের আঁধারে বড় লোকের ভোট চুরি করে গরীব সহমত ভাইদের মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন সমাজে ধনী-গরীবের নকশা বদলাতে। লাইলাতুল ইলেকশনে জিতেছে যারা; তাদের সম্পদ আজ কমপক্ষে ৩৩ গুণ থেকে ১০০ গুণ বেড়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সব নদীর পানিকে কলমের কালি বানিয়ে আপনার সুকৃতির আয়াত লিখলে; সে কালি ফুরিয়ে যাবে; তখন কালি আনতে হবে ভারত-পাকিস্তানের সিন্ধু নদীর পানি থেকে। ইলেকশনের রাতে আজিজের ঘোড়াগুলি নিয়ে যে রবিনহুড ভোটচুরি করেছে; সেতো থাগস অফ ইন্ডিয়ার অমিতাভ বচ্চনের মতো দেখতে এক ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির থাগস অফ বেঙ্গলের রবিনহুড। ফইন্নি-দরবেশ বিপ্লবের রাজা; লও নীল সালাম।
হে একদলীয় স্বপ্নপূরণের কারিগর,
মিকেল এঞ্জেলের নৈপূণ্যে এঁকেছেন, এক নেতা এক দেশ, মুনতাসির মামুনের ফার্মার্স ব্যাংকের পক্ষের এক একদলীয় তক্ষশিলা। মখা আলমগীর খালকাটা নিয়ে পিএইচডি করে; গণতন্ত্রের স্তম্ভ ধরে নড়াচড়া বন্ধ করেছেন। আর আপনি সে স্তম্ভকে একদলীয় কুতুব মিনার হিসেবে গেঁথে দিয়েছেন। এই সুকৃতির জন্য দেশ স্বাধীন করেছে যে দল; এই দেশ তার উন্নয়নের উপনিবেশ; এই চিরন্তন সত্যকে প্রাতিষ্ঠানিক করেছেন; ভোটের রাতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। আপনি আপনার অমরতার আয়োজন করেছেন; “গণতন্ত্র মানে যেমন ইচ্ছে লেখা ভোটের ফলাফলের খাতা” সোনালী কাব্যে।
“কুচ তো লোগ কাহেঙ্গে, লোগকো কাম হ্যায় কাহেনা, ছোড়ো বেকার কী বাত!
আপনাকে রাজেশ খান্নার মতো জিদ্দি প্রেমিক মনে হয়; নির্বাচন কমিশন যেন শর্মিলা ঠাকুর। গণতন্ত্রের প্লাটিনামমাণ্ডিতে লোকলজ্জার ভয়ে আপনি লুকাননি প্রেম। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেছেন, সাহসী পুরুষ প্রেমিকের মতো। তাই তো ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে আপনাকে খোলাচিঠি লিখছি। আপনি বাংলাদেশের ভোটের কিউপিড; গণতন্ত্রের মাখন চোর শ্রী কৃষ্ণ আপনি। প্রেম কিয়া তো ডারনা কিয়া!
নির্বাচন প্রকৌশল শাস্ত্রের গুরু,
কী করে নির্বাচনী ফলাফলপত্রে একদলের প্রাপ্ত ভোট ৪০০০ লিখে অন্যদলের প্রাপ্ত ভোট ০ লিখতে হয়; এই যে থিওরি অফ ভিক্টরি; এ যে ধ্রুপদী ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সূত্র হয়ে রইলো। বিশ্বব্যাপী এক মত এক নেতা এক দলের যে মাদকতা; পৃথিবী আপনারে চায়। নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে রাশিয়া ঘুরে পুতিনের একদলীয় গণতন্ত্রের জানিপপ হয়েছেন আপনি। আপনার আর অবসর নেই স্যার। উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক, মিশর, ভারত; আপনার ফ্যানেরা আপনার জন্য এসো এসো সুরে করুণ মিনতি মাখা।
যেতে নাহি দেবো; তবু যেতে দিতে হয়, ২০৪১ সাল পর্যন্ত ঐখানে আপনার গণতন্ত্র দাদীর কবর; একে আমরা ভিজিয়ে রাখবো দুই নয়নের জলে।
আপনার সুন্নতি ভাগ্নেকে আপনার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে রেখে গেলেন লাইলাতুল ইলেকশনের ফজিলতে। আপনি এখন গণতন্ত্রের অশ্বমেধযজ্ঞে দিল্লি-পিয়ং ইয়ং-নূর সুলতান ঘুরের বেড়ালেও; আপনার ভাগ্নের মাঝে বেঁচে থাকবে আপনার স্মৃতি; গণতন্ত্রের কবরে ফুলমাল্যের মতো সে সুগন্ধ আর রঙ ছড়াবে। আপনি সুস্থ থাকুন; ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। মাইলস টু গো মনিটরিং লাইলাতুল ইলেকশন; বিফোর ইউ স্লিপ।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই সাউথ এশিয়া