আইনস্টাইন বার্লিনে হিটলারের নাৎসি কর্মকাণ্ডের কারণে খুব বিচলিত। স্ত্রী এলসা তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিভিন্ন ফোরামে একটু বুঝে শুনে বক্তৃতা দিতে। সময় ভালো যাচ্ছিল না চারপাশে। নাৎসি যুবকেরা ইহুদীদের দেখলেই ‘শাইস’ বলে গালি দিচ্ছিল। এলসার যুক্তি বিজ্ঞানীর এতো রাজনীতিতে নাক গলানোর দরকার কী?
থিওরি অব রিলেটিভিটি আইনস্টাইন এলসা আর হিটলার ছাড়া আর সবাইকে বোঝাতে পেরেছিলেন। বাংকারে আত্মহত্যার ব্রাহ্ম মুহূর্তে হিটলার আইনস্টাইন-এর কথা ভেবেছেন। এতো অস্ত্র হাতে নিয়ে হিটলার পৃথিবী জয় করতে পারলেন না, আর কতগুলো থিওরি দিয়ে একটা লোক ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হবার উপক্রম। হিটলার জেনে যেতে পারেননি যে আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হবার অফার ফিরিয়ে দিয়ে গবেষণায় ফিরে গিয়েছিলেন।
১৯৩২ সালের ডিসেম্বর। পদসদামারপ্লাতজে আইনস্টাইন বসে কফি খাচ্ছিলেন। মনে তীব্র বিবমিষা, সিটিজেনশীপ ক্যানসেল হবার আগের আশা ভঙ্গের দিন। এখন এমেরিকায় পালানো ছাড়া উপায় নেই। আইনস্টাইন এটাকে খুব অপমানজনক ভাবছেন। নাৎসি ক্যাডাররা আউসলান্ডার বলে টন্টিং করে চলে গেল। স্টাইনের গবেষণা সহকারী ক্লওডিয়াকে দেখে ‘জুপার ফ্রয়েন্ডেন ইস লিবে ডিস’ বলে শিস দিয়ে চলে গেল এক মাথা ন্যাড়া নরখাদক।
ক্যাফের বাইরে এক ইন্ডিয়ান উঁকি ঝুকি মারছে, সম্ভবত বার্লিনে নতুন। স্টাইন লোকটাকে ইশারা করলেন। লোকটা চেয়ারে না বসে দাঁড়িয়ে রইলো। একটা চিঠি এগিয়ে দেয়, সেখানে লেখা, ‘টু হুম ইট মে কনসার্ন। দিস ম্যান ইজ হার্ড ওয়ার্কিং অ্যান্ড অনেস্ট। প্লিজ হেল্প হিম টু হেল্প দ্য ডিসট্রেসড হিউম্যানিটি অব ইনডিয়া। হি হ্যাড বিন আপরুটেড ফ্রম হিস হাউজ বাই দ্য টাইর্যান্ট জমিনডার। দিস ইস আ ফাইনাল কল টু সেভ আ ডাইং ম্যান। রিগার্ডস, জীবনানন্দ দাশ, লেকচারার, ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট বিএম কলেজ, বরিশাল,ইস্ট বেঙ্গল, ইন্ডিয়া।‘
ছিপছিপে গড়নের লোকটার চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছিল। ক্লওডিয়া ব্রোডশেন নিয়ে আসে কাউন্টার থেকে। তুলসী চক্ষু মুদিয়া উহা ভক্ষণ করে। হামবুর্গ থেকে অনেক শীতের কামড়,পুলিশের চোখ আর পোলিতজাইয়ের শেফার্ডদের তাড়া খেতে খেতে বার্লিনে পৌছেছে। তুলসী মনুর দেশের লোক। ‘আইতে শাল জাইতে শাল’ দেয়া ছাড়া আর কিছুই পারে না।
মিষ্টান্নের দোকানে বসিয়া জমিদার বাড়ীর অন্দর মহলের গুমোর ফাঁক করিয়া দিতো সে, তার আগে ঝাড় বাতি পরিষ্কার করা আর জমিদার বাবুকে হুঁকা সাজাইয়া দেয়া,মাঝে মধ্যে চামর দোলানো, দাসী মহলে তুলসী রায় ছিলো হার্ট থ্রব। বড় রস করিয়া কথা বলিতে পারিতেন তিনি, তাহাতে রগড় থাকায় দাসীরা মিটমিটাইয়া হাসিত। তুলসী আড়ালে আবডালে উহাদের কদমা উপহার দিয়া জমিদারের শয়ন প্রক্রিয়ার খবর জানিত।
প্রভাত লক্ষী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে গিয়ে নৌকা ডাকুদের সামনে মরিচ মসল্লা পরিবেশন করিয়া বাহবা কুড়াইতো। তুলসী এইভাবে তুলসী দাদা হইয়া ওঠে কীর্তনখোলার জলদস্যুদের।জমিদারের নায়েব তুলসীকে বারণ করিলেও তুলসী ডোন্ট কেয়ার, ‘কিয়া হইবেয়ানে,আড্ডি উড্ডি বাঙ্গি সব গুড়া করি দেবে। হুইয়া থাকমুয়ানে আর চুলকাবানে।‘ পরিণতি জমিদার বাড়ী থেকে গলাধাক্কা। তারপর ভেনিসের খালে ভেসে যাওয়া অর্ধমৃত শোষিত নিপীড়িত তুলসী। বরিশাল থেকে কলকাতা তারপর সুয়েজখাল হয়ে ডুকে পড়া সাদা কুষ্ঠ রঙ মানব মহাদেশে।
আইনস্টাইন বুঝতে পারছিলেন না হের তুলসীকে কোন কাজে লাগাবেন। উনি দাস প্রথার ঘোর বিরোধী, সমকক্ষ মর্যাদায় তুলসীকে গবেষণা সহকারীর কাজ দিলেন। তুলসীর নেত্র অশ্রুসজল হইল। এইবার একটু ক্লউডিয়ার দিকে তাকিয়ে বিহবল হয়ে গেল, ‘জমিদার গিন্নীর চাইতে দামকুড়া। পর জনমে হইয়ো রাধা।‘ তুলসী দাস ‘গুটেন মগেন, গুটেন টাগ’ দিয়ে তার বেশীর ভাগ কথোপকথন চালাইয়া লইবার ফাঁকে ফাঁকে ডাইরী লিখিতে শুরু করিল।
আজ আইনস্টাইন বা তুলসী কেহই বাঁচিয়া নাই। আইনস্টাইনকে লইয়া যাহারা নাচিয়া নাচিয়া আকুল হন তাহাদের জন্য আজিকার ব্রেকিং নিউজ নারী আর মোহরের ফাঁদে আইনস্টাইন।
২৫ ডিসেম্বর ১৯৩২,
বার্লিনআজ বরফ পড়িতেছে। বরফ পড়িতে দেখিলে আইনস্টাইন খুশী হন। এলসার বাতের বেদনা বৃদ্ধি পায়। উনাকে হানিমানের ছবি অলা শিশির ওষুধ খাওয়াইয়া ঘুম পাড়াইয়া শ্রীকৃষ্ণ আইনস্টাইন তাহার তিন গোপিনীরে লইয়া কি যেন পদার্থ,আলো,শক্তি লইয়া গবেষণা করে। পদার্থ মাটির ঢিলা, আলো কুপ্পি বাত্তি জালাইলে পাওন যায় আর শক্তি পাওন যায় মহাদ্রাক্ষারিস্ট পান করিলে। ইহা লইয়া ব্ল্যাক বোর্ডে e=mc লিখিয়া উপরে দুই লিখিয়া দিবার মাহাত্ম্য কী। মোগো বাড়ি বরিশাল। কি দেখিলাম কি হেরিলাম, গেলাসে মদ ঢালিয়া ক্লওডিয়া,সিনথিয়া আর মারিয়ানের গেলাসের লগে ঠুক্কাঠুকি। ‘ইনুর সঙ্গে কিনুদের কিসের সম্পর্ক’, আমি বুঝি। e মানে আইনস্টাইন দ্রাক্ষারস খাইয়া শক্তি অর্জন আর সমান সমান m মানে মারিয়ান দুইডা c মানে বুঝতে হইবে ক্লওডিয়া আর সিনথিয়া। E = mc2 ব্যাপার বুঝছেন নি। এই ব্যাডা বইশাইল্যা জমি দারের চাইতে খারাপ। ওই ব্যাডা বউরে গয়না দিয়া খুশী কইরা কলিকাতা হাড় কাটা গলিতে যাইতো, আর এই বেটা বউডারে ঘুম পাড়াইয়া ব্ল্যাক বোর্ডে চুরুট মুখে খস খস করিয়া লিখে, কি লেখে, কি করে কইলাম তো।
পুনশ্চ: তুলসী রায়ের দৌহিত্র চুলকানি রায় উনার কালচার ফ্রম এগ্রিকালচার (২০১০, ক্যাচাল প্রকাশনী) গ্রন্থে ‘তুলসী রায়ের চোখে আইনস্টাইনের দুইশো একুশ দিন’ নামক প্রতিবেদন লিখিয়াছেন। এই মারফত উনি বাঙ্গি-লিকসের নিকট হইতে যে রয়্যালটি পান তাতে তুলসীলিক্স নামের একটি ‘কইয়া দিমু’ মেটাব্লগ-ফেসবুকিং চালুর সিদ্ধান্ত নিয়াছেন। বিখ্যাত ব্যক্তিদের বেড রুমের কাহিনী ছবি ও পিডিএফ লিঙ্ক সহ আপলোড করিলে সেরা কুৎসা-শিল্পীকে কইয়া দিমু অল্টারনেটিভ নোবেল পদকে ভূষিত করা হইবেক।