শতছিদ্রের ঝাঁঝর এসে একটি সূঁচকে তার একটি মাত্র ছিদ্রের কথা দাঁত কেলিয়ে বলার মতো ব্যাপার হচ্ছে; যখন শত ভুলের সরকারের সহমত ভাইয়েরা মিডিয়ার একটি ভুল নিয়ে পোকিত পুলকে হুটোপুটি খায়।
ত্রাণ বিতরণের একটি খবর ডেইলিস্টারে ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছিলো। সিলেটের এক সিনিয়র সাংবাদিক জানালেন, ইদানিং ফটোগ্রাফারের ছবির সঙ্গে পাঠানো খবর ছাপানোর একটি চল হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতার অভিঘাত মূলধারার মিডিয়ায় এসেছে বলে ধারণা করা যায়। সিনিয়র সাংবাদিক জানালেন, সিলেটে বন্যাদুর্গতের মাঝে ত্রাণ বিতরণের বিশৃংখলায় বিস্মিত সরকারি মন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ না করে ঢাকায় চলে এসেছেন। প্রবীণ মানুষটি আজকের এই বিশৃংখলার সংস্কৃতির সগে খাপ খাওয়াতে পারেননি। কাজেই একটি ভুল খবরের চেয়ে ভয়াবহ শতভুল ঘটছে; সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়; এটা অত্যন্ত স্পষ্ট।
সাংবাদিকতা একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র; যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ এ কাজটি করলে তার ভুল হবেই। যে কোন খবর ডাবল চেক না করে ছাড়লেই ভুল হবে। ডেইলিস্টারের যে সিনিয়র সাংবাদিক রয়েছেন সিলেটে; তার মাধ্যমে ডাবল চেক করে খবরটা ছাপলে এই ভুল হতো না। ফটোগ্রাফার খবর পাঠানোর অনুমতি পেলে খুব খুশী হয়ে ভুল হবার আশংকা শতভাগ। ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সেরা দৈনিক, তারা ভুল স্বীকার করেছে। এই ডিনাইয়াল বা অস্বীকার প্রবণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমাজে ভুল স্বীকারের সভ্য সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন মাহফুজ আনাম ও তার টিম।
ডেইলি স্টারের ভুল স্বীকারের পর কান্দাকাটি ভবনের সহমত ভাইদের জীবনে অনেক দিন পর ঈদুল মাহফুজ আনাম এসে পড়ে। মাহফুজ আনামের অপরাধ কেন তিনি সুদর্শন, শিক্ষিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক তারকা ছিলেন! কেন জাতিসংঘের চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে থিতু হলেন। কেনইবা ডেইলি স্টারকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল একটি মিডিয়া হিসেবে গড়ে তুললেন। কেন বাতাবী লেবু মিডিয়া হয়ে অদৃশ্য সাবানে হাত কচলাচ্ছেন না।
মাহফুজ আনামের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ক্লাসমেটরা; যারা ভালো ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন না, আকর্ষণীয় ছিলেন না, কোন সুকৃতি নেই যাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে; তারা ঘষে মেজে পরে রুলিং এলিট হয়ে লক্ষ্য করে; মাহফুজ আনামকে যেন কিছুতেই অতিক্রম করতে পারছে না তারা। তখন তারা সুইপার পল্লীর ছেলেদের কাঙ্গালি ভোজের বিরিয়ানি খেতে দিয়ে তারপর অনুরোধ করে, যাও বাবারা ডেইলি স্টারের গেটে দলীয় ‘গু’ ঢেলে দিয়ে এসো। গ্রামের এই ‘গু’ ঢালা পরিবেশ দেখে আনাম লেখালেখি ছেড়ে দেন। নিও রুলিং এলিটদের জঙ্গলের শাসন মেনে নিয়েই কাজ করতে থাকেন। আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করানো থেকে ভিলেজ পলিটিক্সের সব রকম নির্যাতন চলেছে তার ওপরে; চেষ্টা চলেছে, ফইন্নিদের গান্ধা কইরা দেয়ার সব “কইয়া দিমু” টেকনিক। অশিক্ষিত লোকেদের শিক্ষিত লোকের প্রতি যে বিদ্বেষ; তার শিকার মাহফুজ আনাম।
ভারত ও পাকিস্তানে সার্বভৌম সাংবাদিকতার পথিকৃতদের একইভাবে কষ্ট দিয়েছে সে দেশগুলোর কলতলার রুলিং এলিটরা। প্রবাদ প্রতিম সাংবাদিক খুশওয়ান্ত সিং-এর আত্মজীবনীতে তাঁর ওপর মানসিক পীড়নের চিত্র পাওয়া যায়। পাকিস্তানে জিও টিভির প্রধান মীর শাকিলুর রহমানের সঙ্গে একইরকম নিবর্তনমূলক আচরণ পাকিস্তানের জলপাইতলার কুখ্যাত কলতলার ছেলেরা।
ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যের জায়গাটা ফেসবুকে। ওসব দেশেও সরকার সমালোচক সাংবাদিকদের সমালোচনা করে সরকারের সহমত ভাইয়েরা; শিক্ষায় অনগ্রসর অংশটি। কিন্তু বাংলাদেশের সহমত ভাইয়েরা গালাগালে এই বিশ্বে অনন্য; এটা ভারত-পাকিস্তানের ফেসবুকে ও সমাজে কম।
এই গালাগাল প্রবণতা পশ্চিমে একমাত্র প্রকট আফ্রিকীয় বংশোদ্ভুত পশ্চিমাদের মাঝে। যে কোন কথায় পট করে রেগে গালি দিয়ে দেয়ার সঙ্গে কালো মানুষের শত শত বছরের দাস হিসেবে ব্যবহৃত হবার বেদনা কাজ করে।
দক্ষিণ এশিয়াতে যে চারটি এলাকা থাকে মানুষ এসেছে, তার মধ্যে আফ্রিকা অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার আদিম দাম্ভিক ফর্সা মানুষেরা এদের শূদ্র বা আতরাফ হিসেবে চিহ্নিত করে, সুইপার হিসেবে নির্দিষ্ট করেছে। ডোম-মুচি-চন্ডাল বানিয়ে তাদের দলিত হিসেবে দলাই মলাই করা হয়েছে। পরে ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে, ও চর দখলের রাজনীতিতে এদের ফুট সোলজার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার জমিদারি টিকিয়ে রাখতে এদের ভাগ্য পরিবর্তনের নামে নতুন ঠগী সম্প্রদায় হিসেবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে।
এরাই পালা করে হাওয়া ভবন ও কান্দাকাটি ভবনের মিটিং-এ বসে; শিক্ষিত-চিন্তায় অগ্রসর মানুষদের গালাগাল করে। এদের কাছে এটা একরকমের শ্রেণী সংগ্রাম। আর ক্ষমতাসীনের কাছে এরা ফেসবুক ডোম, যারা সরকার সমালোচকদের ফেসবুক আইডিতে চিন্তামল ঢেলে দেয়, গালাগালিভার্স ট্রাভেলস করে; আর ছদ্ম জাতে ওঠার ভুল স্বপ্ন দেখে।
অথচ পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে শিষ্টাচার সম্পন্ন মানুষেরা আফ্রিকীয় বংশোদ্ভুত। সব পেশার সবচেয়ে দায়িত্ববোধ সম্পন্ন মানুষগুলো তারা। এরা অতীতের জ্বালা নিয়ে পড়ে নেই; সামনে এগিয়ে যায় সভ্যতার মশাল হাতে।
আর দক্ষিণ এশিয়া হচ্ছে; ক্ষমতাসীনের টাইমমেশিনে করে ইতিহাসের নির্যাতনের রুপালী চলচ্চিত্র দেখানো; যাতে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম নিবর্তনমূলক বর্তমান হতে পারে বাধা বন্ধহীন; অনালোচিত নীরবতার।