হি
জাব বোরখা পরা নারীটির পাশে যে পুরুষ আপনজন দাঁড়িয়ে, হয়ত তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামী, তার পরনে সাধারণত কী থাকে? লক্ষ্য করেছেন কি কখনো? শার্ট প্যান্ট, থ্রি কোয়ার্টার টিশার্ট, স্যুট কোট নাকি আলখাল্লা টুপি?
সম্প্রতি ক্রিকেটার তাসকিনের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি ফুলেল হাফ শার্ট ও হাফপ্যান্ট পরা এবং তার পাশে একজন নারী আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা, শুধু চোখ খোলা। সে নারী কে, সে পরিচয় জানা না গেলেও ছবিটি ভাইরাল ও রীতিমতো বিতর্কিত। শুধু তাসকিন কেন? ঘরে বাইরে, পথে ঘাটে, বাজারে সব খানেই এখন এই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগক্ষেত্রেই আমরা দেখি পুরুষ তার নিজের পছন্দমতোপোশাক পরছেন। লুংগি হোক বা থ্রি কোয়ার্টার, যেকোনোপোশাকই তিনি পরতে পারেন। এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা।এমন কি কোনো কোনো পুরুষ ইদানীং হিজাব বোরখাকালো হাত মোজা, পা মোজা সহ পরছেন। এটাও তারাপরতে পারেন, ব্যক্তি স্বাধীনতার সূত্রে (তবে নাগরিক নিরাপত্তা লংঘিত হলে আইনের চোখে বিষয়টি দেখতে হবে)।
পুরুষ নিজের ইচ্ছেয় পোশাক পরলেও, নারী যে পোশাকপরে, সব সময় নিজের ইচ্ছেয় নয়। এমন কি যেই ছেলেটিটিশার্ট হাফপ্যান্ট (এমন পোশাক সে পরতেই পারে, এটাতার পছন্দ ও ব্যক্তি স্বাধীনতা) পরে বসে আছে, সেওফেসবুকে এসে নসিহত করে মেয়েদের কেন পর্দা করে চলতেহবে, কোন মেয়ের ড্রেস খারাপ এবং ড্রেস খারাপ দেখেকোন মেয়েকে ধর্ষণ করা জায়েজ হয়ে পড়েছে!
মেয়েটা হিজাব বোরকায় ঢাকা আর ছেলেটা টিশার্টহাফপ্যান্ট। এমন তো প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু মেয়েটা টপসজিন্স আর ছেলেটা টুপি, সুন্নতি দাঁড়ি জোব্বা, এমন কেনআমাদের দেশে দেখা যায় না?
পোশাক প্রসঙ্গে ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চাটা তাহলে কি শুধুপুরুষের অধীনে? ব্যক্তি স্বাধীনতার এত্ত রকম ফের!
আবার যেই নারী হিজাব বোরখা পরছেন ব্যক্তি স্বাধীনতারধোঁয়া তুলে, তিনিও কিন্তু আরেক নারীকে টিশার্ট জিন্স, টপস স্কার্টে দেখলে হায় হায় করে উঠেন, কেয়ামতের আরবেশি দেরি নেই! যেন ব্যক্তি স্বাধীনতা শুধু তার নিজেরবেলায় প্রযোজ্য! অথচ তার পাশে স্বামী বা বাবা ভাই শার্টপ্যান্ট, টিশার্ট হাফপ্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনভাবে!
সম্প্রতি অসূর্যস্পর্শা স্টাইলে এক ধরনের পর্দানশীননারীদের দেখা যায়, যাদের চোখটাও অন্ধকারে ঢাকা। ধর্মীয় তথ্যসূত্র স্পষ্ট করে তুলে দেখা দরকার, আসলেধর্মে কী বলা আছে! হাদিস অনুযায়ী কেবলমাত্র চাদরদিয়ে মাথা ও বক্ষদেশ ঢেকে রাখার নির্দেশ রয়েছে।কোরানে নারী পুরুষ সবাইকে লজ্জাস্থানের হেফাজত করতেবলা হয়েছে। এর পরেও কেউ যদি ধর্মীয় নির্দেশের উপরেগিয়ে আরো এক কাঠি সরেস হয়ে যায়, নাক মুখ চোখঢেকে ফেলে, কালো হাত মোজা পা মোজা পরে অসূর্যস্পর্শা হয়, সেটাকেও তার ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবেই আজ গণ্য করতে হচ্ছে। তা তিনি নারীই হন আর পুরুষই হন। তবে কিনা এমন উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার বাংলাদেশে অমন কালো হাত মোজা, পা মোজা সহ বোরকা হিজাব পরার শখ কোনো পুরুষের হবে না। পুরুষদেরকে যেহেতু যৌনপণ্য ভাবা হয় না, বরং সে যৌনপণ্যের ভোক্তা তাই পোশাকের স্বাধীনতা একান্তভাবে পুরুষেরই থাকবে। সেই পুরুষ প্রচণ্ড গরমে নিজে আরামদায়ক টিশার্ট ও হাফপ্যান্ট পরে পাশে আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা নারীকে সাথে নিয়ে চলবে, ছবি তুলে শো অফ করবে। আর নারী তো যৌনপণ্য, তার নিজের আরাম বা স্বাস্থ্য বিবেচনা করার স্বাধীনতা থাকতে নেই। পুরুষের মতো অমন আরামদায়ক টিশার্ট পরার অনুমতি এ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাকে দেয় না। যত কষ্টই হোক, এমন আরোপিত ও কষ্টকর পর্দাপ্রথাকে নারীরা আজ নিজের চয়েজ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কেননা, ‘’কষ্ট সহ্য করিতে না পারিলে অবরোধবাসিনীদের আর বাহাদুরি কিসের?’’ সেই বাহাদুরির কিছুটা ক্রেডিট তার সঙ্গী পুরুষও নিজের বলে শো অফ করে, তাসকিনের মতো ছবি শেয়ার করে, ‘’দেখো, দেখো, আমার নারী কত কষ্টসহিষ্ণু পর্দানশীল!’’
– তানিয়া কামরুন নাহার, লেখক ও শিক্ষক
–