হাবিব খান : অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং আইটি স্পেশালিস্ট দিদারুল ভূঁইয়াকে তাঁর বাসা থেকে মংগলবার সন্ধ্যায় RAB পরিচয় দিয়ে কয়েকজন তুলে নিয়ে গেছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে ।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী আইন ও সালিশ কেন্দ্র ( আসক) এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন এ ব্যাপারে স্ট্রেইট ডায়ালগকে বলেন- জাতি যখন করোনা সংকট মোকাবেলায় ব্যস্ত সে সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং সমর্থকরা সাম্প্রতিককালে গরিব মানুষের সাহায্যের চাল চুরি থেকে শুরু করে নানাবিধ অপকর্মের সাথে যুক্ত হচ্ছেন বলে আমরা পত্র-পত্রিকায় সোশ্যাল মিডিয়াতে জানতে পারছি। যে কারণে সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীন দলের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের ছত্রছায়ায় পালিত গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা এ সব বিষয়ে লেখালেখি করেন তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক আইসিটি এ্যাক্টে মামলা এবং সর্বশেষ দিদারুল ভূঁইয়াকে RAB কর্তৃক তুলে নেয়ার যে অভিযোগ পরিবারের থেকে আমরা জানতে পেরেছি, এই ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে রাস্ট্রের পৈশাচিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন এই ধরনের গুমের সংস্কৃতি বহমান রাখার অর্থই হচ্ছে যাতে সাধারন জনগনের ভেতরে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বহমান রাখা যায়, যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষের ভিতর জমে ওঠা ক্ষোভ কোনভাবেই যাতে প্রকাশ না হয় সেই কারণেই রাষ্ট্রের এক ধরনের কার্যক্রম আমরা লক্ষ্য করছি।
এদিকে হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের এক কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান অনলাইন এক্টিভিস্ট দিদারুল ভূঁইয়াকে তুলে নেয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্ট্রেইট ডায়ালগকে বলেন- হতদরিদ্রের ন্যায্য অধিকার হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের লাগামহীন চুরি ডাকাতির জামানায় হাতেগোনা কয়েকজন তরুণ তাদের সাধ্যের মধ্য থেকে অনাহারী মানুষের কাছে একমুঠো খাবার পৌঁছানোর কাজে ছুটে চলছে দিনরাত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে। ডাকাত সর্দারের সরকারের এমন টুকরো টুকরো ভালো কাজ আদৌ পছন্দ হওয়ার কথা না, সেটা দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। তিনি বলেন, সরকারের যা করার ক্ষমতা আছে, সেটা হলো খুনে বাহিনী ব্যবহার করে এইসব নিবেদিত প্রাণ মানুষকে গুম করে দেয়া। এই ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের পতন অনিবার্য!
আসকের সাবেক সিনিয়র তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত মানবাধিকার কর্মী শাহ আলম ফারুক বলেন- যথেষ্ট প্রস্তুতির বদলে সরকার ১৮ কোটি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এমনটি দেখা যায়নি। এখন সমালোচনা এমনকী গঠনমূলক হলেও এই জনবিচ্ছিন্ন সরকার সহ্য করতে পারছে না। তিনি আরো বলেন একের পর এক ভুল ও হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার এখন করোনা মোকাবেলার বদলে জনস্বার্থে কথা বলা মানুষজনের মুখ বন্ধ করার ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে। তিনি অবিলম্বে দিদারুল ভূঁইয়া সহ গুম ও নির্বতনমূলক মামলার আসামী সাংবাদিকদের বিশেষত: শফিকুল ইসলাম কাজলের অবিলম্বে মুক্তি দাবী করেন।
এদিকে রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক এডভোকেট হাসনাত কাইউম বলেন- বিনা পরোয়ানায় দিদারুলকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা দ্রুত দিদারুলকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য দিদারুল ভূঁইয়ার ফেইসবুক প্রোফাইলে করোনা মহামারী মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয় কিছু সিদ্ধান্ত ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম নিয়ে সাধারণ সমালোচনামূলক কিছু পোস্ট দেখা গেছে।