সাহেদ হলেই সবাইকে নিয়ে আলোচনা হয় না। আমাদের পাড়াতেও এক সাহেদ আছে, বেচারা ভাল মানুষ। বাক সংযত, মাঝে মাঝে না পেরে দু চার কথা বলে ফেলে। সাহেদরা আগেও ছিল, তবে গত এক দশকে আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম ও সাহেদদের ফলন ও বিকাশ হয়েছে ব্যাপকমাত্রায়। কিন্তু রাতের পর রাত টকশোতে গেছেন যে সাহেদ, দলের আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য হিসেবে স্ক্রলে তার পরিচিতি যেত।
কিন্তু আজ বলা হচ্ছে সাহেদ নাকি দলের কিছুই না। যিনি এটা বলছেন তিনি মন্ত্রী হলেও তিনিও একজন সাহেদ। প্রত্যক্ষদর্শী নির্ভবযোগ্য একজনের সাক্ষ্য- ছাত্র জীবনে সমসাময়িক ছাত্র বন্ধু পরিচিতরা সিগারেটের শেষ টানটুকু দিতে পারতেন না তার জন্য। ওটা হামলে পড়ে চেয়ে নিতেন এই সাহেদ। সব ক্লাসে তৃতীয় শ্রেণী পাওয়া সিস্টেমে পিএইচডি কেনা! ব্যক্তিগতভাবে এ রকম মানুষ নিয়ে আগ্রহ নেই। এক সাহেদের কথা বলতে গিয়ে একই সুতোয় বাঁধা আরেক সাহেদও প্রসঙ্গক্রমে এসে গেলো।
তথ্য যখন বাঁধা গ্রস্ত হয় তখন একই ঘটনার বিষয়ে নানা সত্য অসত্য তথ্য, বর্ননা ভার্সন বাজারে চাউর হয়। এ যাত্রায়ও নানা কথা শোনা যাচ্ছে দুই সাহেদই নাকি একই ঘরানার ঘনিষ্ঠ। আগে যারা ধরা পড়েছে তাদের মত। এই সাহেদদের কারখানা থেকে প্রতিদিন একটি করে সাহেদের যদি সন্ধান মেলে তাহলে কয় বছর লাগবে সাহেদ মহাকাব্যের শেষ চরিত্রটি দেখার? এর আগে ক্যাসিনোর এক সর্দারের সাথে বিজিবির প্রধানের ছবিই নয়, তার ঘাড়ে হাত দেয়া ছবি ভিডিও আমরা দেখেছি, কী মধুর করে সেই ক্যাসিনো সর্দার সেই ‘সাহেদ’ ভিডিও কলে কাকে যেন বলছিল – শাফিন খুব দুষ্টু। এবার সেনা প্রধানের সাথে হালের সাহেদের ছবি দেখা গেলেও তা ওরকম মাখামাখি ধরণের নয়, বরং সৌজন্য করে তোলা বলে মনে হয়েছে। সত্যাসত্য তো জানার উপায় নেই। সেলিব্রেটিদের সাথে ছবি নানা জনে তোলে, কিন্তু যে সব পরিচিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সাহেদের সাথে প্রগাঢ় আন্তরিকতায়, প্রাণে প্রাণে মিলেমিশে যাবার অভিব্যক্তি; সে গুলো মিথ্যা? না অভিনয় করে তোলা?
রাস্ট্র যখন জবাবদিহিতাশূন্য থাকে, জবাবদিহিতা যাদের নিশ্চিত করার তারা যদি অনুগত হয়ে ধন্য হয়, যখন জোড়াতালি দিয়ে নিজেদের মত করে রাস্ট্রবিজ্ঞানের অনুচ্ছেদ আলোচনায় আইউব ইয়াহিয়া কিংবা মুসোলিনীদের অনুগতদের মত ব্যাখ্যাতে রাস্ট্র পৃষ্ঠপোষক হয়, তখন সাহেদদের বিকাশ ঘটে দ্রুত হারে। খোঁজ নিয়ে দেখেন প্রতিটি গ্রামে না পান অন্তত: প্রতি ইউনিয়নে আপনি দু চারজন সাহেদ নিশ্চিত খুঁজে পাবেন। মাঝারি শহর বা জেলা সদরে দলের ও দলের স্রোতে মিশে যাওয়া সাহেদদের একেকজনের শতকোটি টাকার স্ফীতি একটু গলা নীচু করে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই বা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে খালি চোখেই দেখতে পাবেন।
এই সাহেদের খোঁজ নাকি মিলছে না। দুর্মুখরা বলে প্রায়শ: এ সব ক্ষেত্রে যারা তাদের সন্ধান করে তাদের সে সব জায়গায় খোঁজ করার সাহস হয় না যেখানে সাহেদরা আশ্রয় নেয়। শিকদার ভাইদের পুলিশ খুঁজেছিল আমরা শুনেছি কিন্তু দিনে দুপুরে এয়ারপোর্ট দিয়ে তারা উড়াল দিয়েছিল। যাদের ধরার কথা তারা ধরে নি। সাহেদদের বিভিন্ন গ্রেড আছে। এয়ারপোর্ট দিয়ে ভাগা সাহেদ তথা শিকদার ভাইদের গ্রেড একটু উপরে।তাদের বিদেশী সিকিউরিটি ছিল। এই সাহেদ কোন গ্রেডের তা শিগগির বোঝা যাবে।
রাস্ট্র যতদিন এই সাহেদদের পৃষ্ঠপোষকদের হাতে থাকবে ততদিন প্রতি মুহুর্তে নতুন নতুন সাহেদদের দেখে যেতে হবে, সাথে সাথে কালে ভদ্রে দু একটা কুমির ছানার মত ধরা হবে- তারপর চমক আসবে সংলাপের- দেখো চোর আমগো, তাও আমরাই কিন্তু ধরছি।
এমন আশ্বাসে উত্তেজনায় আমাদের চোখ চকচকে হবে, কিছু জলও এসে যেতে পারে। অশ্রুসিক্ত আশাবাদী মন আবার মাথা দুলিয়ে বলবে-ঠিকইতো! কিন্তু দিনের পর দিন যাবে সাহেদ থাকবে, যারা সাহেদ বানায় এবং তাকে যারা ধরেছে তারা থাকবে। আমূল উৎপাটন হবে না সাহেদ তৈরির কারখানাগুলো। স্বীকার করি না করি- এই সব সাহেদ এবং সাহেদ তৈরির কারখানার মালিকদের নিবৃত্ত করা না গেলে দেশ জাতির মুক্তি নেই।
- শাহ আলম ফারুক :
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী
সম্পাদক (অবৈতনিক), সোজা কথা ডটকম
লন্ডন ১০ জুলাই ২০.৩০