সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকার সাভারে চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্রী নীলা রায় (১৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিজানুর রহমান মিজানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকয়ার একটি বাড়ি থেকে মাদকাসক্ত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা জেলা পুলিশের একটি দল। এসময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সময় তার দুই সহযোগী সাকিব (২০), ও জয়কেও (২০) গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এই মামলায় মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহত নীলা রায় স্থানীয় অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক গ্রামের নারায়ণ রায়ের মেয়ে। তবে পরিবারের সঙ্গে সে সাভার পৌরসভার কাজিমুকমাপাড়া এলাকায় থাকত।
শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকার কর্নেল ব্রিক ফিল্ডের পাশে জনৈক পারভেজের টিনশেড বাড়ির একটি কক্ষ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে নীলা রায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান চৌধুরী সাভারের দক্ষিণপাড়া এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে, সাকিব একই এলাকার সিরাজুল ইসলাম সিরুর ছেলে। গ্রেফতার জয়ও একই এলাকার। গ্রেফতারকৃত সবাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিল মামলার প্রধান অভিযুক্ত মিজান। এর আগে মিজানের এক সহযোগীকে আটক করা গেলেও, বারবার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে মিজানের নাগাল পেতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে সাভার মডেল থানা ও ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি উত্তর) যৌথ অভিযান চালিয়ে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে মিজানসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা দুটি ছুরিও উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মিজানুর রহমানের মা ও বাবাকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের চারীগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট এলাকা থেকে নীলা রায় (১৪) হত্যায় কিশোর গ্যাং সদস্য মিজানুর রহমানের সহযোগী সেলিম পালোয়ানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন।
পরিবার সূত্র জানায়, নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন মিজান। নীলা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে নীলাকে নিয়ে তার ভাই অলক রায় রিকশায় হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। এ সময় অস্ত্রের মুখে নীলাকে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে পালপাড়া এলাকায় নিয়ে যায় মিজান। সাভার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উল্টো দিকের একটি গলির ভেতরে নিয়ে নীলার গলায়, পেটে, মুখে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
নীলার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা রোডের প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানেই চিকিৎসাধীন থেকে নীলার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নীলার বাবা নারায়ণ রায় সোমবার রাতে সাভার মডেল থানায় মিজানুর রহমান, তার বাবা আবদুর রহমান ও মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিকাসহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।