গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা এক তরুণ দম্পত্তি ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের ৫/৬জন নরপশু দ্বারা কি নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা ভিকটিম দম্পত্তির গত দুই দিনের সংবাদ মাধ্যমে আসা জবানবন্দি থেকে আমরা জেনেছি। গণমাধ্যমে ঘটনার যে বর্ণনা এসেছে তা যে কোন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে দেবার জন্য যথেষ্ট।
‘ধর্ষণ নেই এমন কোন দেশ নেই। আমাদের দেশে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটছে, সব অপরাধীই কিন্তু ধরা পরছে’। এটি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের দ্বারা কোন অপরাধ সংঘটিত হলেই মন্ত্রীরা এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন যে সব দেশেই এসব হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ভুলে যান সব দেশে অপরাধীদের বিচার হয়, কোন দেশের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর বা ডরমেটারি ধর্ষকদের জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য হয় না। তাদের ধরতে পুলিশকে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় গেটে অপেক্ষা করতে হয় না। আর ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী এবং তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় এইসব অপরাধ সংগঠনে সাহস যোগায় এমনটাও অন্য দেশে দেখা যায় না।
সিলেটের নিপীড়ন ঘটনায়ও আমরা দেখেছি ধর্ষকদের স্থানীয় রাজনৈতিক পিতা প্রথমেই বলেছেন ‘এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই সেহেতু ধর্ষক যুবকরা বহিরাগত কেউ’! ভিক্টিম দম্পতির সাহায্যে এগিয়ে আসা ব্যক্তির বক্তব্য থেকে জেনেছি ‘গেটে ফিরে দেখি ওসি কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি সেখান থেকে একজন এসআইকে নিয়ে আবার ছাত্রাবাসে যাই। কিন্তু এরই মধ্যে আসামিরা সবাই পালিয়ে যায়।’ এমনটি পৃথিবীর কোন দেশে ঘটে জনাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
আজ থেকে প্রায় দুযুগ আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন মানিকের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? যে শততম ধর্ষণ শেষে কেক কেটে সেলিব্রেট করেছিল বন্ধুদের নিয়ে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নেতা এই ধর্ষকের কোন শাস্তি তো হয়নি বরং সেঞ্চুরিয়ান এই মানিক ধর্ষককে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানিক কি এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিল যাকে শাস্তি দেয়া যায়নি ? বরং এ ঘটনা এই বার্তাই দেয় যে সব আকাম-কুকামের জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনটিকে তারা অঘোষিত ভাবে লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে!
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গণহারে দলীয় নিয়োগ তৈরি করেছে একগুচ্ছ ব্যক্তিত্বহীন মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক যারা সদা অন্যায়ের সাথে আপোষ করে চলেছে। মান-সম্মান-লজ্জাহীন এমন আপোষকামি শিক্ষক সম্প্রদায় শিক্ষাঙ্গনে দলীয় অপরাধীদের রক্ষায় প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সম্পৃক্ত হয়ে পরে। ২০১২ সালে এমসি কলেজের দৃষ্টিনন্দন আজকের এই আলোচিত ছাত্রাবাসটি পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের উম্মত্ততার আগুনে পুড়ে ভস্মিভুত হয়েছিল। সে ঘটনারও হয়নি কোন বিচার।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক বিচার সমাজের যে কোন অপরাধই কমিয়ে আনতে সহায়ক হয়। এজন্য দেশে আইনের শাসন থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আমরা চলেছি বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে। সুশাসন কতদূর জানা নাই। এমনকি নাই আলোচিত কোন নিপীড়নমূলক অপরাধের ঘটনায় ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির একটিও উদাহরণ ! অন্য যে কোন ভয়ানক অপরাধ সংগঠিত হলেও ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’র তকমা লাগিয়ে দায় এড়িয়ে যাওয়া হয়।
জনাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমসি কলেজ চত্বরে আপনাদের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নিপীড়নের বীভৎস ঘটনায় নিজেদেরকে একবার চিন্তা করে দেখুন, নিজের মেয়ে বা স্ত্রী বা বোনকে ভাবুন। ভাবতে পারছেন? বুঝতে কি পারছেন এ সংবদ্ধ নিপীড়ন যন্ত্রণার তীব্রতা?
– এন আফরোজ রোজী: লেখক