নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা থেকে
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক বিগত সময়ে গুমের শিকার হওয়া বেশ কয়েকটি পরিবারের স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে অথবা পরিবারের সদস্যদের থানাতে ডেকে এনে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষরের জন্য চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করার মতো ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমএসএফ সরকারের এ ধরনের বেআইনি, নিষ্ঠুর ও অমানবিক তৎপরতা বন্ধের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।
প্রথম আলো সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুব হাসান ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ। মাহবুবের ছোট ভাই শাকিল খানের সাথে ১০ জানুয়ারি সবুজবাগ থানা যোগাযোগ করলে সে যাবতীয় কাগজপত্রসহ থানায় যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা তাঁর সঙ্গে বাসায় আসেন এবং পুলিশ সদস্যরাএকটি বিবৃতিতে তাঁদের ৭৫ বছর বয়সী বাবার কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাবা আবদুল জলিল সই দিতে অস্বীকৃতি জানালে সাত–আটজন পুলিশ সদস্য তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন, পুলিশের দেওয়া কাগজে সই করবেন না। অবশেষে রাত ১১টার কিছু পরে পুলিশ তাঁদের বাসা থেকে চলে যায়।
প্রায় ১০ বছর আগে পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধ থেকে পুলিশ পরিচয়ে ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বর, বুধবার রাতে তাঁর স্ত্রী বেবি আক্তারকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়।বেবি আক্তার প্রথম আলোকে জানান, তারা তরিকুলের খোঁজ করে এবং পল্লবী থানায় রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাঁদের বসিয়ে রাখে।১৩ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ এসে তাঁদের কাছ থেকেতরিকুল গুম হওয়ার পর থানায় করা সাধারণ ডায়েরি, পুলিশেরগোয়েন্দা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকারকমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে পাঠানো চিঠির অনুলিপি নিয়ে যায়।
বিএনপির তৎকালীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলামের বোন সানজিদা ইসলাম জানান, তাঁদের বাড়িতেও পুলিশ কয়েক বার এসেছে। নোয়াখালী থেকে গুম হওয়াআলমগীর হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার প্রথম আলোকেজানান, তাঁকে থানায় ডেকে পুলিশ কথা বলেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জেরা বা সাদা কাগজে সই নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের বাসায় বাসায় পুলিশের যাওয়া সম্পর্কে তিনি অবহিত নন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা গুমের শিকার হওয়া ভীতসন্ত্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে কিংবা তাঁদের থানায় নিয়ে এসে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে যে হয়রানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে তা অন্যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকারের চরম লংঘন। গুমের শিকার পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্রমবর্মান অবক্ষয়ের যে চিত্র প্রতিদিন উঠে আসছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, এবং গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি তা চরম নিষ্ঠূরতা। এমএসএফ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরণের অগ্রহণযোগ্য অপতৎপরতা যা বেআইনীও বটে বন্ধসহ বিগত দিনে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে।