মৌ
সুমীর বাবা মারা গেলে মা তিনটি সন্তান লালন করেন কষ্টে-সৃষ্টে। পুলিশের এস আই মৌসুমীকে কাজ করতে নিয়ে যায়; পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বাসায়। লোভ দেখায়, মৌসুমী সেখানে কাজ করলে উচ্চ বেতন পাবে; তা দিয়ে এপার্টমেন্ট কিনে দেয়া হবে।
সেই মৌসুমী ফিরেছে লাশ হয়ে; তার নিথর দেহ সামনে নিয়ে মা বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন, দালান চাইনা; সন্তানকে ফেরত চাই।
মাত্র ৮ বছর বয়েসে মৌসুমীকে অনেকটা জোর করে নিয়ে যায় পুলিশে এস আই। তিন বছর কাজ করার পর ১১ বছর বয়সে তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়; উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
এদিকে সমাজ ব্যস্ত রাজকাজ নিয়ে। কে টপস-জিনস পরেছে কিন্তু হিজাব পরেনি, কে হিজাব পরেছে! হিরো আলম কেন রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে রবীন্দ্র অনুভূতিতে আঘাত দিলো; কোথায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি হয়েছে; কোথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আহত; কোথায় ধর্মীয় চেতনা আহত! এই সব ধর্ম-চেতনা-আধুনিকতা-সংস্কৃতির ম্যানেজারি করার পরে থাকে পুলিশের কে কোথায় প্রমোশন পেলো; তাদের অভিনন্দন স্যার বলে প্রগলভ হয়ে ওঠা। সাধারণ কোন মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর লাশ পাওয়া গেলে না হয় সে বাড়ির গৃহকত্রীর গুষ্টি উদ্ধার করে মানবতার পালোয়ান হওয়া যেতো।
কিন্তু মৌসুমীর লাশ ঝুলছিলো পুলিশের বাসায়; তা নিয়ে উচ্চ বাচ্য কিংবা জবাবদিহির প্রত্যাশা; কাভি নেহি কাভি নেহি! দরিদ্র মানুষ হঠাত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা কিংবা ধর্ম ও সংস্কৃতি কিংবা দলচিল হলে; দরিদ্রের বেদনা তাকে আর স্পর্শ করে না।
তাই মৌসুমীর মৃত্যু জগত সংসারের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা হয়ে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়; এও আবার জীবন; যেখানে মৃত্যুর মালিক আর খোদা নন; দুর্নীতিমুখর নিষ্ঠুর সমাজের ছোট খাট ঈশ্বরেরাই এখন মৃত্যুদূত।
– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া