‘…গাছতলায় পাঠশালা খুলেছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনার শিক্ষিকা স্বাগতা কর্মকার। বিস্কুট, লজেন্স থেকে মাস্ক-স্যানিটাইজার-পেন্সিল– পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করছেন এ সবও। কচিকাঁচাদের পাশাপাশি, তাঁর ক্লাসে হাজির হচ্ছেন এলাকার কিছু স্কুলছুট থেকে শুরু করে পড়াশোনা না জানা মহিলা।
বাঘনাপাড়ার মুক্তারপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা স্বাগতার বাড়ি কালনা শহরে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে, একাই থাকেন। তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জিউধারা তালতলা এলাকায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাস। সপ্তাহ দু’য়েক আগে সেখানে গিয়ে স্বাগতা ছোটদের পড়ানোর প্রস্তাব দেন। জানান, ক্লাস করলে মিলবে বিস্কুট-লজেন্স। তার পর থেকে এক বটগাছের তলায় সপ্তাহে দিন চারেক বসছে পড়ার আসর।
ইতিহাসে স্নাতকোত্তর স্বাগতা জানান, পড়াতে যাওয়ার আগে কোনও দিন বিস্কুট, কোনও দিন লজেন্স, পেন্সিল বা মাস্ক কেনেন। সে জন্য নিজের পকেট থেকে দৈনিক পাঁচশো টাকা করে বরাদ্দ রাখছেন। উপহার পেয়ে উৎসাহ বাড়ছে পড়ুয়াদেরও। ক্রমে তাদের সংখ্যা বেড়ে এখন পৌঁছেছে জনা পঞ্চাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রাথমিকের নানা বিষয় পড়ানোর পাশাপাশি, করোনা সম্পর্কে সচেতনতা, নানা মণীষীর কথা আলোচনা করেন স্বাগতা।.
…
বছর পঁয়ত্রিশের স্বাগতাদেবী বলছেন, “নিজের স্কুল বন্ধ। টানা ছাত্রছাত্রীদের ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়। স্কুল না খোলায় সব পড়ুয়াই কষ্টে রয়েছে বলে মনে করি।” তিনি জানান, সবাইকে দূরত্ব-বিধি মেনে বসানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু খুদেরা সব সময় তা মানছে না। তবে তাদের মুখে যাতে মাস্ক থাকে, তা খেয়াল রাখার চেষ্টা করছেন।…'(আবাপ ১৮ সেপ্টেম্বর ‘২০)
স্বাগতা নিশ্চয়ই আমার মতো ফেসবুকে দৈনন্দিন স্ট্যাটাস পোস্ট করেন না। লাইক-ফুটেজ ভিখিরি প্রতিবাদজীবী নন, ফেবু সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও তাঁর নেই, সম্ভবত। ‘ত্রাণ’ করছেন মনেও করেন না, নিশ্চিতভাবেই।
আরও কিছু স্বাগতা নিশ্চয়ই আছেন, আমাদের সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। নীরবে, গোপনে। যে কোনও অজুহাতে আত্মপ্রচারের সচ্ছল নাগরিক মধ্যবিত্তসুলভ অসুস্থতার ভাইরাস সংক্রমণে যাঁরা এখনও আক্রান্ত হননি।
ফেসবুকের বন্ধুদের মধ্যেই এমন দু’চার জনকে জানি, মাদ্রাসা বা স্কুল শিক্ষক, হতদরিদ্র পরিবারের ছাত্রী-ছাত্রদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন, নিজস্ব উদ্যোগে বা সমমনস্কদের সঙ্গে নিয়ে। পড়ুয়াদের বিপর্যস্ত হয়ে পড়া যাপনে সাধ্যমত সহযোগিতা করছেন। এবং অবশ্যই ‘ত্রাণ’ করছেন না।
স্বাগতা-দের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলুক!
– কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়