সোজা কথা ডেস্ক রিপোর্ট
এশিয়ান লিটারেচার অ্যাওয়ার্ডের তৃতীয় আসরে পুরস্কৃত হলেন বাংলাদেশের শাহীন আখতার। ‘তালাশ’ উপন্যাসের জন্য তিনি এই পুরস্কার পেলেন। ২০২০ সালের এশিয়া লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে ১ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যৌন সহিংসতার শিকার ও বেঁচে থাকা নারীদের যন্ত্রণার কথা তুলে আনা হয়েছে এ উপন্যাসে।
এ পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষক এশিয়া কালচারাল সেন্টার, যা দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র আন্দোলনের তীর্থ গোওয়াংজুতে অবস্থিত। ওই আন্দোলনগুলোকে সম্মান জানাতে পুরস্কারটির প্রবর্তন হয়েছিল।
মহামারির কারণে এ সাহিত্য উৎসব এ বছর অফলাইন ও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে এশিয়ার ২৯ জন লেখক অংশ নেন, যার মধ্যে ম্যান বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক হান কাংসহ কোরিয়ার ১৯ জন লেখক ছিলেন।
এশীয় সাহিত্যের নান্দনিক মূল্য তুলে ধরতে ২০১৭ সালে এ পুরস্কার চালু হয়। যা এত দিন ধরে পশ্চিমা সাহিত্যের চোখ দিয়ে দেখা হতো। তবে পাশ্চাত্য সাহিত্যকে প্রত্যাখ্যান নয়, এশীয় সাহিত্যকে অনুপ্রেরণা ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরায় আয়োজকদের লক্ষ্য।
পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী লেখক পেয়ে থাকেন ২ লাখ ওন বা সাড়ে ১৭ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। এ ছাড়া বিজয়ী সাহিত্য কর্ম অবলম্বনে উৎসবের পরের আসরে বিশেষ একটি উপস্থাপনা থাকে।
প্রথম আসরে পুরস্কারটি পান মঙ্গোলিয়ার কবি ইউরিয়ানখাই ডামডিনসুরেন, দ্বিতীয়বারের অর্জনকারী ভিয়েতনামের লেখক বাউ নিন।
এবারের আসরে শাহীন আখতারের ‘তালাশ’ ছাড়াও সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলো চীনা ও তাইওয়ানিজ দুই লেখিকার তিন উপন্যাস।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উৎসবের এবারের আসরে কিছু পরিবর্তন এসেছে। সে হিসেবে নারী লেখিকাদের ‘ফেমিনিস্ট থিম’-এর দিকে ছিল মূল মনোযোগ।
যুদ্ধের উন্মাদনা ও পুরুষকেন্দ্রিক সমাজের ভ্রান্ত চেতনাকে লক্ষ্য করে ‘তালাশ’ উপন্যাসে এসেছে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপন ও সমালোচনা। এ দুর্দান্ত ঢংয়ের প্রশংসা করেন কমিটির কিম নামিল।
সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ, যুদ্ধ ও সহিংসতা, যুদ্ধাপরাধীদের প্রতারণা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং ধর্ষণের শিকার নারীদের সঙ্গে চলমান দুর্ব্যবহার সবই এ উপন্যাসে আছে। ইতিহাস নিয়ে তালাশ মৌলিক প্রশ্ন তুলেছে। ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দিয়ে কীভাবে ওই প্রান্তিক নারীদের ব্যথা আড়াল করা হয়েছে সে বিষয়টি এসেছে।
বিচারকদের ভাষ্য, আমরা বিশ্বাস করি যে উপন্যাসটি আমাদের সময়ের এশীয় লেখকের অন্যতম সেরা নারীবাদী ও যুদ্ধবিরোধী ডকু-উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার। আমাদের সময়ের যন্ত্রণা ও সাহসের দলিল।
একে তুলনা করা হয় সভেতলানা আলেক্সিয়েভিচের ‘দ্য আনওম্যানলি ফেইস অব দ্য ওয়ার’, রুথ ক্লাগারের ‘স্টিল অ্যালাইভ’ বা মার্থা হিলারের ‘আ ওম্যান ইন বার্লিন’-এর সঙ্গে। তারা আশা করেন শাহীন আখতার লেখনির মাধ্যমে সামনেও অনুপ্রেরণা জোগাবেন।
শাহীন আখতার গল্প উপন্যাস লেখার পাশাপাশি কয়েকটি সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতিতে। তার জন্ম ১৯৬২ সালে, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার হারং গ্রামে।
শাহীন আখতার বাংলাসাহিত্যে অবদানস্বরূপ ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। তার ‘ময়ূর সিংহাসন’ উপন্যাসের জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার ও আইএফআইসি ব্যাংক পুরস্কার পেয়েছেন। ‘অসুখী দিন’ উপন্যাসের জন্য ২০১৯-এ পেয়েছেন জেমকন সাহিত্য পুরস্কার। পেয়েছেন কলকাতার আনন্দবাজর গ্রুপের টিভি চ্যানেল এবিপি আনন্দ থেকে ‘সাহিত্যে সেরা বাঙালি’ সম্মাননা। ‘তালাশ’ প্রকাশিত হয়েছে মাওলা ব্রাদার্স থেকে ২০০৪ সালে। একই বছরে প্রথম আলো বর্ষ সেরা বই হিসাবে তালাশ পুরস্কৃত হয়।২০১১ সালে ‘দ্য সার্চ’ নামে তালাশ-এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে দিল্লিস্থ প্রকাশনা হাউজ জুবান। ‘তালাশ’ কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন প্রফেসর সিং হি জন ও ফারহানা শশী, বইটি কোরিয়া থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।