গিলবার্টের স্বামীর মত স্বামী পেলে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিবৎসর নোবেল প্রাইজ আনতে পারতো। সামাজিক এবং পারিবারিক বাধা অতিক্রম করে বাঙালী তরুনীরা বিভিন্ন পেশায়, সৃজনশীল কর্মে যেভাবে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছে সেটা এক বিস্ময়। রাজনীতি অর্থনীতি শিক্ষা , ক্রীড়াঙ্গন, সামরিক বাহিনী চিকিৎসা শাস্ত্র- বিমান চালিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নারীরা আজ বাংলাদেশের রেমিটেন্সি যোদ্ধা। বলছি এই কারনে আমার অতি প্রিয় একজন সাংবাদিক ভাই রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী এই অনলাইনে লিখেছেন এত সুযোগ সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা কেন বৃটিশ মহিলা গিলবার্টের মত গবেষক হতে পারেনা। বাংলাদেশের কিছু মেয়েরা শুধু পার্লারে যায়। আর সাজ সজ্জা নিয়েই শুধু ব্যস্ত থাকে। এরা ব্রেন লেস। উনার কথার প্রসঙ্গে বলতে চাই কেউ যদি নিষিদ্ধ এলাকায় ঘোরাফিরা করেন অথবা শুধু অসৎ শিল্পপতিদের মিডনাইট ডিনার-পার্টিতে গিয়ে তরুনীদের গেটআপ দেখেন আর যদি ভাবেন বাংলাদেশের মেয়েরা শুধু সাজ গোজ করে তাহলে উনাকে বলার কিছুই নেই। শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঙালী মহিলারা দক্ষতার সাথে কাজ করছে। আমাদের স্বদেশী কয়েকজন সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন যারা অন্য দেশের নারীদের অর্জন খুব উৎসাহ নিয়ে প্রচার করেন। কিন্তু নিজ দেশের মহিলাদের কৃতিত্ব দক্ষতা উনাদের দৃষ্টি গোচর হয় কম। এমন কি নিজের দেশের বঙ্গ নারীদের নিয়ে বিদ্রুপ কটাক্ষ করতেও উনারা পারদর্শী। কিছু সংখ্যক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি আর কবিরা নারীদেরকে ভাবেন শুধু প্রেমের বার্তাবাহক। কাহিনীর প্রয়োজনে চটকদার রোমান্টিক চরিত্র।
বাংলাদেশের মেয়েদের মেধা আর ব্যক্তিত্ব দেখলে ঐ বিশেষ শ্রেণীর বুদ্ধিজিবীরা কেন জানি আতংকিত হন। এক ধরনের সুপিরিওটি কমপ্লেক্সে ভুগেন। গিলবার্ট তার স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছিলেন, তিনটি যমজ প্রিম্যাচিউর বাচ্চাকে গিলবার্টের স্বামী দেখা-শুনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাই গিলবার্ট গবেষণার কাজে মন দিতে পেরেছিলেন। এই রকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বামী হলে বলতেন আগে বাচ্চা সামলাও। তারপর তোমার কনফারেন্স, মিটিং আর গবেষণা। বিবাহিত মেয়েদের মেধা এবং প্রতিভার প্রতিনিয়ত মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। আরও কিছু কিছু দেশেও সমাজে। আর কিছু সংখ্যক সাংবাদিকরা পরের বউয়ের স্বাধীনতার ব্যপারে খুবই শ্লোগান আর ফিচার লিখেন, কিন্তু ঘরে নিজের বউকে ভীত সন্ত্রস্ত রাখেন কি জানি স্বামীত্বের দাপট যদি কমে যায়। বাংলাদেশী স্বামী তিনি বাংলাদেশেই থাকুন আর সুইজারল্যান্ডেই থাকুন বেশীরভাগ বাঙালী স্বামীরা কখনোও স্ত্রীকে বন্ধু, সহযোগী পার্টনার প্রেমিকা ভাবতে পারেননা। তারা ভাবেন বউ মানে অধীনন্থ , আজ্ঞাবহ এক অনুভুতিহীন প্রাণী।
গিলবার্ট স্বামীর সহযোগিতা না পেলেও গবেষনা করত, হয়তো পারিবারিক অসহযোগিতার জন্য গবেষনা কর্ম করতে একটু বেশী কষ্ট হত, স্বামীর বাধার সম্মুখীন হলে হয়তো স্বামী সংসার ত্যগ করত। এতে গিলবার্ট সামাজিকভাবে নির্যাতিত হত না। বাংলাদেশের কোনো মহিলা যখন ক্যারিয়ারের কারনে সংসার ত্যাগ করে সমাজ সেই মহিলাকে অপবাদে জর্জরিত করে। বলে এই মহিলা লোভী। অতিামাত্রায় প্রফেশনাল। যে সব মহিলা স্বামী ও পরিবারের প্রতিবন্ধকতার কারনে বিরক্ত হয়ে চাকুরীর জন্য ডিভোর্স নেয় সমাজ তাকে ইমশোনালী টর্চার করে।
যে কোনো সৃষ্টির পেছনে সামাজিক ও পারিবারিক প্রেরনা খুবই সহায়ক। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে সাপোর্ট করলে অনেক কঠিন কাজ সহজতর হয়। বাংলাদেশের নারীদের জাগরন ঘটেছে কিন্তু নারীদের প্রতি পরিবর্তন হয়নি সমাজের মনস্তত্ব সংস্কৃতি। এরই দরুন ওয়াজ মাহফিল থেকে শুরু করে শিক্ষিত সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিরা সংবাদপত্রে, সভা সমিতিতে মাঝে মধ্যে নারী সমাজকে নিয়ে বিদ্রুপ ও কটাক্ষপূর্ণ উক্তি করেন।
– নাজরাতুন নাইম ইসলাম
লেখক সাবেক লেকচারার মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, নারী নেত্রী লন্ডন
৩০/০৪/২০২০ ইংরেজী