হাবিব খান: করোনা তাণ্ডবে যখন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা লন্ডভন্ড তখনও সুখ নিদ্রায় দেশের শত শত কোটিপতিরা! দেশের এই দুর্দিনে
তাদের দৃশ্যমান কোনও কার্যক্রম নেই সমাজের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু সরকারের প্রণোদনার জন্য প্রথম সারিতেই দেখা যাচ্ছে সেই সকল কোটি পতিদের! কিন্তু সমাজের করুণ অবস্থায় অন্ধ-বদির হয়ে বসে থাকতে পারেনি ভিক্ষুক-মুচি হতে শুরু করে স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। যার যা সামর্থ্য আছে তা দিয়ে এগিয়ে আসছে বিপন্ন এই মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রথমে হতদরিদ্র ভিক্ষুক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (৮০) দান করেন তার ঘর তৈরির জমানো ১০হাজার টাকা। এরপর রংপুরের মিঠপিুকুর উপজেলার পেশায় মুচি মিলন রবিদাস ২০ হাজার টাকা দেন। এমন ভালো মানবিক কাজে এবার এগিয়ে আসলেন পিরোজপুরের পাঁচ খুদে শিক্ষার্থী। পিরোজপুর পৌর এলাকার মরিচাল গ্রামের একটি কিন্ডার গার্টেনের পাঁচ থেকে সাত বছরের পাঁচ শিশু মাটির তৈরি ব্যাংকে জমানো ১৪২২ টাকার এই অর্থ আজ সোমবার জেলা প্রশাসকের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়।
এই শিশু দাতারা হলো মাশরাফি ইমরান আরিয়ান, বুশরা আক্তার, রেজভি হোসেন, সিনথিয়া ইসলাম ও শামীম মিনা।
করোনা দুর্গতদের প্রতি এই শিশুদের সহানুভূতি প্রশংসা করে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এদের কাছ থেকে সকলের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই দুঃসময় শিশুরাও যে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই ঘটনা দেখে বিত্তবানদের উচিত এগিয়ে আসা।
উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম মাজেদ জানান, শিশুদের জমানো এই সামান্য অর্থের সাথে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ আরো ১৪,১০০ টাকা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দান করেছেন। যা শিশুদের এই মহানুভবতাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
পিরোজপুর উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে হতদরিদ্র ভিক্ষুক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (৮০)। তার তিন ছেলে তিন মেয়ে। কিন্তু ভিক্ষে করেই জীবন চলে তার। গত দুই বছর ধরে তিনি ৫-১০ টাকা করে জমিয়ে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন। ইচ্ছে ছিল এবার বর্ষাকালের আগেই ঘর ঠিক করবেন। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে ওই বৃদ্ধ ঠিক থাকতে পারলেন না। তাদের কষ্ট দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ওই টাকা করোনা তহবিলে দান করবেন। যাতে গরিব মানুষের কাজে লাগে।
এ সময় ভিক্ষুক নজিমুদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বলেন, আমি ভিক্ষা করে খাইয়ে-খুইয়ে দুই বছরে এ টেহা জড়ো করছি। আমার ঘরডা ভাঙে গেছে গ্যা। এহন আর ঘর-দরজা দিলাম না। দশে এহন (মানুষ) কষ্ট করতাছে, আমি এ টেহ্যা ইউএনও সাহেবের হাতে দিলাম। দশেরে দিয়ে দেখ, খাইয়ে বাঁচুক।
রবিদাসের দীর্ঘ দিন থেকে মনের বাসনা ছিল ভাল কিছু করার। সেই ইচ্ছেতে গত ৮ বছর থেকে প্রতিদিন ৫ /১০ টাকা করে জমা করতেন। করোনা দুর্যোগ ভাল কিছু করার সেই সুয়োগ এনে দিল মিলন রবি দাসকে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে নিজের কষ্টে জমানো ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। জানাগেছে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের পাশে জুতা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করেন মিলন রবিদাস। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে মা,স্ত্রী, একছেলে ও মেয়ে নিয়ে সংসার চলে যায় তার। মেয়ে চতুর্থ শ্রেণি এবং ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ভাল কোথাও দান করার বাসনায় প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ টাকা জমা করতেন তিনি। মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, মিলন রবি দাস জানিয়েছে এই টাকা ভাল কোথাও দান করার জন্য তিনি জমা করেছিলেন। তিনি করোনা দুর্য়োগে সহায়তার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৮২ জনের মৃত্যু হলো। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৮৮ জন। এতে দেশে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ১৪৩ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১৪৭ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন এক হাজার ২১০ জন।
সোমবার (৪ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।