স্ট্রেইট ডায়ালগ প্রতিবেদন : রাজধানীর তালতলা সিটি কর্পোরেশন কবরস্থানেই হচ্ছে করোনায় মৃতদের দাফন । যেখানে থাকছে না মৃত মানুষটির নাম-পরিচয়। সেখানে কেবল একটি নম্বর দিয়ে রাখছে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। এদিকে বৃষ্টির কারণে কবরস্থানের পরিবেশও নাজুক হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির মধ্যেই চলছে করোনায় মৃতদের কবর খোঁড়া থেকে শুরু করে দাফন কার্যক্রম। এদিকে কবরস্থানের পাশে গিয়ে দেখা গেছে কবরস্থানের শেষ অংশে প্রবেশের সাথে সাথেই বাতাসের ঝাপটায় নাকে আসে লাশ পঁচা গন্ধের। সারি সারি কবরে চোখ বুলাতেই দেখা যায় এক বিভৎস দৃশ্যের। বেশ কিছু কবরের উপর ভেসে উঠেছে ছোপ ছোপ রক্ত এবং মৃত মানুষের গলিত চর্বি। চর্বিগুলো গা গুলানো হলুদ আবরণ তৈরী করেছে কবর গুলোর চারপাশে।এরই মাঝে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বেশ কিছু কুকুরকে।নরম কাদা মাটিতে তাদের পায়ের ছাপ স্পষ্ট।
গত কয়েকদিনের তুমুল বৃষ্টি কবরস্থানে আগে থেকে খুঁড়ে রাখা কবরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।এছাড়া নির্ধারিত স্থানটি ঝিলপাড়ের সাথে হওয়ায় মাটির নিচ থেকেও কবরে উঠছে পানি।ফলে দাফনকাজে তৈরী হয়েছিল জটিলতা।যারফলে পানির মাঝেই দাফন করা হয় কয়েকজনের মরদেহ। ফলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় মৃতদের স্বজনদের মাঝে।তাদের প্রিয়জনদের এভাবে শেষ বিদায় যেন কিছুতেই তারা মেনে নিতে পারেন নি।ফলে বন্ধ করা হয় দাফন কার্য।ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ তালতলার বদলে রাজধানীর রায়ের বাজার কবরস্থানকে নির্ধারণ করে করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য।তবে পানিতে লাশ দাফনের পরিনতি প্রকাশ পাচ্ছে এখন।কবরে ভেসে উঠছে রক্ত ও মৃতদেহের গলিত চর্বি।
কবরের উপর রক্ত, চর্বি কেন ভেসে উঠছে জানতে চাইলে কবরস্থানের একজন গোরখোদক বলেন, আমরা যখন লাশ দাফন করি তখন কবরে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ দিয়ে তারপর মাটি চাপা দেই। যেহেতু কবরে পানি ওঠে কবর ভেঙ্গে যাচ্ছে, সেহেতু বাঁশগুলোও এখন আর আগের অবস্থায় নেই। ফলে পানির সাথে লাশ কিছুটা উপরে আসতে পারে।আরেকজন গোরখোদক বলেন, যে পলিথিনের ব্যগ সহ লাশগুলো দাফন করা হয়,সেই ব্যগ কোন কারনে মাটির নিচে ফেটে যেতে পারে।ফলে পানির সাথে রক্ত এবং চর্বিও উঠে আসছে কবরের উপরে।
এদিকে এই ঘটনায় আশংকাও প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।কবরস্থানের সাথেই বসবাসরত একজন বাসিন্দা “আমির হোসেন রনি বলেন” কবরের উপর ভেসে উঠা এই রক্ত-চর্বি প্রচুর দূর্গন্ধ সৃষ্টি করছে। তাছাড়া এই কুকুরগুলি এখান থেকে আমাদের এলাকায় (রিয়াজবাগ)এও যাচ্ছে। এখান থেকে করোনা না হোক অন্য যে কোন কিছুই হতে পারে। বা করোনাও যে ছড়াবে না তার নিশ্চয়তা কি? আমরা এই দিকে কর্তৃপক্ষের একটু বিশেষ নজর আশা করছি। তিনি বলেন,আর কিছু না হোক অন্ততপক্ষে দিনে এক বার কবরস্থানের এই অংশটিতে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানোর প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, গোরখোদকরা প্রতিটি কবরে পুনরায় কিছু কিছু মাটি দিয়েও বেশ সুবিধা করতে পারছেন না।বৃষ্টি হলে বা বৃষ্টি ছাড়াও মাটির নিচ থেকে পানি উঠে তৈরি হচ্ছে এই ভয়াবহ অবস্থার।
তালতলা কবরস্থানে করোনায় মৃতদের দাফন করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর গত ২২ মার্চ থেকে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৯১টি লাশের দাফন হয়। এর মধ্যে কতজন করোনায় মৃত তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে কবরস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিএনসিসির সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আগে কবর দেওয়ার পরই স্বজনরা কবরে প্রয়াতের নাম-পরিচয় লিখে ফুল দিয়ে যেতেন। গত প্রায় দেড় মাসে যতগুলো দাফন হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে শুধু একজনের কবরে নাম লেখা আছে। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কবরস্থানের রেজিস্টারে নম্বর অনুযায়ী নাম-ঠিকানা লিখে রাখা হচ্ছে।
কবরস্থানের এক কর্মচারী জানান, আগে কবর দেওয়ার পরপরই স্বজনরা কবরের রসিদ নিয়ে যেতেন। গত দেড় মাসে একজনও কবরের রসিদ নেননি। আগে কবর দেওয়ার পরপর বেশ কিছু দিন প্রয়াতের স্বজনরা কবরে যেতেন। এখন কেউ যায় না।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, রাজধানীতে ৯টি কবরস্থান রয়েছে। যেগুলোর ছয়টি ডিএনসিসিতে এবং তিনটি ডিএসসিসিতে। এগুলোর মধ্যে আটটি কবরস্থানেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি লাশ দাফন হয়। সবচেয়ে কম লাশ দাফন হয় খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে। লোকসমাগম কম হওয়ার কারণেই ওই কবরস্থানটিকে করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য বেছে নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এলাকাবাসী আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু ডিএনসিসির কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে এলাকাবাসী পিছু হটে। তবে তালতলার পাশাপাশি এখন রায়েরবাজারেও করোনায় মৃতদের দাফনের সুযোগ দেওয়ায় খিলগাঁওবাসী খুশি।