– শাহ আলম ফারুক
১. সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা। এখনো হয়তো আপনাদের মনে আছে। ৪ এপ্রিল রাস্তায় ছিল ঢাকামুখী অভিযাত্রা। হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক। কম বেশি এক শ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে ওরা ছুটেছে ঢাকার দিকে। পরদিন ফ্যাক্টরী খোলার কথা। তাদের যে করেই হোক চাকুরি বাঁচাতে হবে। বকেয়া মজুরীও পেতে হবে। ২৫ মার্চ ১০ দিনের ছুটি ঘোষণার পর এরা ছুটে গেছে গ্রামের বাড়িতে। ৫ এপ্রিল কাজে যোগ দিতে হবে তারা জানে। তাদেরকে তাই বলা বা ধারণা দেয়া হয়েছিল। উদ্বিগ্ন প্রাজ্ঞজনরা দেখলেন দলে দলে লাখ লাখ শ্রমিকের নিজ গ্রামে ফেরা এবং সেখান থেকে পায়ে হেটে ঢাকার পথে নির্মম পদযাত্রা। করোনার মত মহামারী যখন প্রাণহানিতে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে তখন কেন এ রকম বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে যাওয়া আসার ঝুঁকি নিতে হলো?
২. এ নিয়ে আঙ্গুলটা উঠল সরাসরি মালিক পক্ষ তথা বিজিএমইএ এর প্রতি। স্বভাবতই বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুবানা হকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। পপুলিস্ট ধারণার বাইরে কথা বলা বিপদজনক। কেউ কেউ আক্ষেপ করে বলেন বলে থাকেন- আমরা গোল্ড ফিশ মেমোরি সম্পন্ন জাতি। রুবানা হককে যার কারণে আমরা বেশি করে চিনি তিনি হলেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। গত কবছরে যে ধারায় নির্বাচন হয়েছে সে ধারায় আনিসুল হকের নির্বাচিত হওয়াও প্রশ্নবিদ্ধই ছিল। তবু অনেক ক্ষমতাবানদের বাঁধা র মুখেও রাস্তা দখল করে থাকা তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদসহ তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ নাগরিকদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল। তবে ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে সব সময় শ্রমিক বান্ধব দূরে থাক বরং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ছিলেন তিনি। শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি সহ তাদের অধিকারের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, শ্রমিকের শ্রম অধিকারের জন্য কোন আন্দোলন হলে তিনি সবসময় বাইরের ষড়যন্ত্রের কথা বলতেন। যারা শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে কাজ করতেন তাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলতেন এরা বিদেশি ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক, দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। ২০০৫-২০০৬ সালে বিজেএমইএ সভাপতি এবং পরবর্তীতে এফবিসিসিআই সভাপতি হিসেবে, বরাবরই তিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে তিনি কখনও আপামর জনসাধারণ এবং শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা করেননি, শ্রমিকদের অধিকার দেওয়ার চিন্তা করেননি, সে বিষয়ে তাঁর ভাবনা ছিল না। স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে মনে পড়ে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হলে তিনি বলেছিলেন ৮ হাজার দূরে থাক ৫ হাজার টাকা করা হলেও তিনি তাঁর সব ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেবেন। তবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তরের মেয়র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এটাও একটা বাস্তবতা ছিল, যা অস্বীকার করার জো নেই এবং তাঁর অকাল মৃত্যু তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা দিয়েছিল। যার সূত্র ধরে রুবানা হকের উত্থান এবং তিনিও ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে প্রয়াত স্বামীর পদাংকই অনুসরণ করে যাচ্ছেন বলে কারো কারো যে অভিযোগ তা যে অমূলক নয়, তা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একভাবে প্রমাণিত। তারপরও সার্বিক দায় নিয়ে কথা থেকে যায়। কথা উঠেছে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকার ঘোষিত যে সফট লোন যাকে প্রণোদনা বলা হচ্ছে সে অর্থটা গার্মেন্টস মালিকরা সরাসরি অর্থ সাহায্য হিসেবে পাবার আশা করেছিলেন। সে আশাভঙ্গের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা দরিদ্র শ্রমিকদের অসহায় অবস্থানকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।
৩. সে যাক এমনকী ভুটানের মত দেশও যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নিজ নাগরিকদের দেশে ফেরা আসাকে উৎসাহিত করেছে এবং ফিরে আসার পর তাদেরকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য ব্যবস্থা করেছে এবং এখনো পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সফল হয়েছে। সেখানে প্রথম থেকেই আমাদের মনোভাব, প্রস্তুতি ও কর্মকান্ডের মধ্যে দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতার ছাপ দেখা গেছে। আমরা অনেকে নিজ নাগরিকদের দেশে ফেরাকে সঠিক মনে করিনি। বিশেষত ইউরোপ ফেরতদের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে আমিও এ পক্ষে। এই স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের বিশ্বময় আশংকাজনক পরিস্থিতির মধ্যে কারো কারো ফেরা অনিবার্য অর্থাৎ আইনগত কারণে আবশ্যক হলেও যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরেছেন, তাদের কান্ডজ্ঞান নিয়ে আমিও কনফিউজড। এই ধরুন ইটালী জার্মানী বা ইউকে যেখানে এখন অবস্থান করছি, দিনে হাজারের কম বেশি মারা গেলেও আক্রান্ত হলে প্রয়োজনমত যে চিকিৎসা সুবিধা এখনো পাওয়া যাচ্ছে তার কাছাকাছিও পরিস্থিতি সামাল দেবার মত স্বাস্থ্য সেবা, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমাদের দেশে নেই এটাই বাস্তবতা। ইউকে তে বিন ব্যাগ গায়ে লাগিয়ে যে নার্স পিপিই বানিয়েছিলেন, বা মাথায় পলিথিন বেধে ডাক্তারের চিকিৎসা দেবার কিছু ঘটনাকে সাধারণ স্বাভাবিক বলে আমাদের যে সব লোকজন আত্নতৃপ্ত হচ্ছেন তারা হয়তো জানেন ই না ইতিমধ্যে কত লাখ পিপিই বিলি করা হয়েছে।
৪। ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে গত শুক্রবার একটি টিভি চ্যানেলের সেখানকার প্রতিনিধি বলছিলেন নারায়ণগঞ্জে এখনো করনা চিকিৎসার জন্য কোন হাসপাতাল নির্ধারিত হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে পাঁচটি করে আইসোলেশন বেড নির্ধারিত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের দুটি সরকারি হাসপাতাল এর মধ্যে একটি 200 শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগ সহ জরুরী অসম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ আছে গত তিনদিন ধরে। ওই হাসপাতালে একজন ডাক্তার, একজন নার্স এবং একজন ওয়ার্ড বয় করোনা পজিটিভ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। 300 শয্যা বিশিষ্ট অপর এক হসপিটালের বহিঃবিভাগ কার্যক্রম চললেও অনেক রোগী সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আছে।বেসরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিক গুলো কার্যত শুরু থেকেই তাদের চিকিৎসা সেবা দান বন্ধ রেখেছে।সর্বশেষ জানা গেছে 200 শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় সাদ্দাম হোসেন ইতিমধ্যেই করণ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। হ্যাঁ গত শুক্রবার দুপুরে একাত্তর সংযোগ দেখছিলাম সেখানে নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধির পাশাপাশি কথা বলছিলেন ডিজি হেলথ এর একজন সহকারী পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল আরসালান। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ের তথ্য উল্লেখ করে বলেন- ডিজি হেলথ বলেছেন করোনা চিকিৎসা র জন্য বর্তমানে বাংলাদেশে পরিপূর্ণ আইসিইউ ইউনিট রয়েছে মাত্র ১১২টি। এখানে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ বলতে বোঝানো হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটকে। যেখানে বিশেষ ধরণের শয্যা, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর, টিউব, পাম্প, হার্টরেইট, ব্লাড প্রেসারসহ অন্যান্য শারীরিক পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক চিত্র পাবার মনিটরসহ নানা আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম থাকে। বিশেষজ্ঞ দক্ষ জনবল লাগে আইসিইউ পরিচালনা করার জন্য। যাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন বিশেষ সুরক্ষা পোশাক।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন তিন শতাধিক আইসিইউ করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত আছে। একই দিনের এক রিপোর্টে বিবিসি বাংলা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সাড়ে পাঁচশটির বেশি ভেন্টিলেটর আছে। ক্রয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৩৮০টি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ দাবি নিয়েও সংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন আছে।
৫। শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়ে আসছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি এবং তাঁর কিছু সহকর্মী এমনও বলেছেন উন্নত দেশের চাইতে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। পিপিই ভেন্টিলেটর হসপিটাল বেড, সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করা নিয়ে উন্নত অনুন্নত সব দেশই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে এটা সবার জানা। লক্ষ্যনীয় বাংলাদেশের মত এত বাগাড়ম্বর উন্নত দূরে থাক অনুন্নত কোন দেশ করেছে কিনা তা চোখে পড়েনি। বিমান বন্দর স্থল বন্দর সমুদ্র বন্দর দিয়ে আসা লোকজনের স্ক্যানিং কতদূর হয়েছে তা নিয়ে প্রথম থেকেই একটা উৎকন্ঠা ছিল। এক হিসেবে বলা হয়েছে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কমপক্ষে সাড়ে ৬ লাখ যাত্রী বিভিন্ন বিমান বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ৩ টি স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যানিং শুরু হলেও পরে সে মেশিনগুলোও সমানভাবে কার্যকর ছিল না। যেখানে বিদেশ থেকে বিশেষত: করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত প্রতিটি ব্যক্তিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখার দরকার ছিল সেখানে অতি দেরীতে এসে মার্চের শেষদিকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরিমধ্যে ইতালি থেকে আসা ১৪৭ জন যাত্রীকে আশকোনা হাজী ক্যাম্পে নেয়া হলে ক্যাম্পে র আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাদি এবং দীর্ঘ সময় তাদের সাথে থাকা শিশুদের অভূক্ত অবস্থায় থাকার সূত্র ধরে প্রবাসীরা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও তাদের আচরণকে অনেকে যথাযথ মনে করেননি। এর সূত্র ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নবাবজাদা বলে প্রবাসীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে যাক অবশেষে দু একদিন পর নাকি এদেরকে নিজ বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছিল। এমনও অভিযোগ আছে ৫০০ টাকা দিয়ে একটা হেলথ সার্টিফিকেট এয়ারপোর্ট থেকে ম্যানেজ করে নিয়ে অনেক প্রবাসী বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। এবং এদের অনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে যত্রতত্র ঘোরাঘুরি করে কান্ডজ্ঞানহীনতার প্রমাণ রেখেছেন।
৬। শুধু ওই প্রবাসীরাই নয় সবাই মিলে যেন জাতীয়ভাবে কান্ডজ্ঞানহীনতার যথেস্ট পরিচয় দেয়া হয়ে গেছে। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশ এখনো পরিপূর্ণ লকডাউন করা হয়নি। ছুটি দিয়ে মানুষ কে ঘরে থাকতে বলা হলেও অতিউৎসাহী লোকজন কারণে অকারণে ঘর থেকে বের হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল সহ অনেক সরকারী হাসপাতালেও জ্বর সর্দি কাশি শ্বাস কষ্টের সিনড্রোম দেখলেই তাদের চিকিৎসা প্রদানে অনীহা প্রকাশ করা হচ্ছে। ডাক্তার নার্স সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য পিপিই তিন মাসেও নিশ্চিত করা যায় নি। ৫০/১০০ দৈনিক টেস্ট করে ২/৩ থেকে ৪/৫ জন রোগী এমনকী কোন কোনদিন কোন রোগী চিহ্নিত না হওয়াকে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বোঝাতে গিয়ে আরেক বড় রকমের ভুল করেছি। আমাদের মন্ত্রীরা কেউ কেউ একে সাধারণ সর্দি কাশি, কেউ কেউ অপ্রতুল প্রস্তুতিকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে বলে শোরগোল করেছি। এদিকে এক শ্রেণীর মোল্লা করোনা মুসলমানদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না বলে হুজুগ তোলে সাধারণ মানুষ কে বিভ্রান্ত করেছে। আইইডিসিআরের পরিচালক সহ ডিজি হেলথ, সচিব থেকে মন্ত্রী সবাই নামতার মত করে কারণে অকারণে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী‘র দোহাই দিয়ে অতীত বীরত্বের গৌরবগাঁথা র উল্লেখ করে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। যেখানে স্বাস্থ্য সেবা স্বাস্থ্য সরন্জামাদির প্রস্তুতি, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ দরিদ্র হতদরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য সাহায্য নিশ্চিত করার বিষয় জড়িত, সেখানে এমন আশাবাদ সহজে ব্যক্ত করার বিষয় নয়। ৭২৪০০ কোটি টাকার মোট প্রণোদনা যা মূলত স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের প্যাকেজ। সর্বশেষ কৃষকের জন্য নতুন প্রণোদনা হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ তহবিল থেকে কৃষকদের ৫ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সে যাক, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চিকিৎসার মূল উপকরণ পিপিই, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বৃদ্ধি জরুরী। উন্নত দেশ গুলোও প্রধানতঃ সে চাপই অনুভব করেছে। এখনো করছে। গতকাল ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রী অনেকে পিপিই এর অপচয় করছেন বলে অনুযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্যের কিছুকিছুক্ষেত্রে সত্যতা স্বীকার করে নিলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এতে সরকারের দায়িত্ব কমে যায় না, বরং আরো বৃদ্ধি পায়। MarketWatch নামের এক ব্যবসাভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল সপ্তাহ দুয়েক আগে (২৭ মার্চ, ২০২০) প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানায়, তখন পর্যন্ত এনএইচএস এর কাছে ৮ হাজারের উপর ভেন্টিলেটর ছিল যা তারা ৩০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ইউকে‘র তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা অন্তত: ১০০ মিলিয়ন বেশি। ব্রিটেনের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন অন্তত: ৩০ % করোনা রোগীর ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দরকার হতে পারে। গত ক বছরে ব্যাপক ঋণনির্ভর উন্নয়ন কর্মকান্ড, উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাপক দুর্নীতি, বিপুল হারে ঋণের নামে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের টাকা লোপাট এবং দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর পাচার সবমিলিয়ে অর্থনীতি যে চাপের মুখে আছে এবং ছিল তা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থায় করোনা বা কোভিড-১৯’র বর্তমান প্রভাব এবং পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ৫টি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছে ২৬০ কোটি ডলার জরুরি অর্থ সহায়তা ঋণের আবেদন জানিয়েছে।
৭. কতিপয় প্রস্তাব:
* এক দু চিমটি নয় পূর্ণাঙ্গ লকডাউন চালু করুন।
* কথিত গুজব ছড়ানোর অজুহাতে বাকরুদ্ধ করার অপচেষ্টা বন্ধ করা হোক।
* জরুরী সেবা, কাঁচা তরকারী কৃষি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বিশেষ ব্যবস্থায় নিশ্চিত করুন।
* বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টারকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এনে করোনা ও অন্যান্য চিকিৎসা নিশ্চিত করুন, অপারগতা য় কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য জাতীয়করণ করুন।
* বেসরকারী ক্লিনিক, হাসপাতালের বিষয়ে ডাক্তার নার্স নয় মালিককে দায়ের আওতায় আনতে হবে।
* কোন খোলা স্থানে জনসমাগম করে নয় ঘরে ঘরে সেনাবাহিনী ও সব দলের প্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে ত্রাণ পৌছিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
* জনগণকে ঘরে রাখতে প্রয়োজনে তাদের প্রয়োজনীয় ঔষধ ও খাবার স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।প্রতি ওয়ার্ড ও এলাকাভিত্তিক হটলাইনে মানুষ চাহিদার কথা জানাবে। স্বচ্ছলরা টাকা দিয়ে সব কিনবে।
* ত্রাণের সাথে ত্রাণ টোকেন থাকবে, যাতে সব তথ্য থাকবে।
* কোন অবস্থাতে কোন হসপিটালে নিতে হবে তা জনগণকে জানানো।
* জরুরী রফতানীমুখী শিল্প খোলা থাকলে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
* অন্তত: ছয় মাস হতদরিদ্র ১ কোটি এবং দরিদ্র ২/৩ কোটি মানুষকে ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
* ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মী স্টাফদের জন্য কমপক্ষে ৫০ লাখ এবং পুলিশ সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য মাথাপিছু অন্তত: ২৫ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দেবার জন্য আপদকালীন বীমা/ বরাদ্দ করা হোক।
* সর্বপ্রকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সাধারণ খুচরা ব্যবসায়ী যারা করোনার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা।
* ত্রাণ চুরির সাথে জড়িত দের সংক্ষিপ্ত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
* দরকার ছাড়া বাইরে আসা ব্যক্তিদের প্রথমবার সতর্ক এবং ২য় বার ধরা পড়লে স্টেডিয়াম বা বড় মাঠে নিয়ে কোয়ারান্টাইনে রাখতে হবে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ।
* টেলিফোনে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।
* কমপক্ষে ৫ লাখ স্বেচ্ছাসেবক তালিকাভূক্ত করা। যারা ত্রাণ, স্বাস্থ্য সেবা, লকডাউন অবস্থায় ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌছিয়ে দেবে। তারা ওয়ার্ড ভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকবে।
* কৃষি ও কৃষক কে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ ও উপযুক্ত মূল্যে কৃষিপণ্য কৃষকের ক্ষেত বা বাড়ি থেকে কিনে সরকারী ব্যবস্থাপনায় টিসিবি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী চ্যানেলে পৌঁছিয়ে দিতে হবে।
– শাহ আলম ফারুক :
লন্ডন প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী
আইনজীবী,
সাবেক সিনিয়র তদন্ত কর্মকর্তা,
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
faruk69@gmail.com