ডেস্ক রিপোর্ট: প্রথম মৃত্যুর চার মাসের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বৃহস্পতিবার ৩ লাখ ছাড়াল। রোগীর সংখ্যাও প্রায় ৪৫ লাখ।মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ থেকে দেড় লাখ পূর্ণ হয়েছিল মাত্র সাত দিনে। সেখান থেকে ২ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল আট দিন। ২ লাখ থেকে মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই লাখ হয় ৯ দিনে, ৪ মে। এরপর মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়াল গতকাল। অর্থাৎ এবার ১০ দিনে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক দেশে কমছে তো বাড়ছে অন্য দেশে। এরই মধ্যে এই ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর চার মাসের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বৃহস্পতিবার ৩ লাখ ছাড়ালো। রোগীর সংখ্যাও প্রায় ৪৫ লাখ।
সংক্রমণের ধারা কোন মতেই কমছে না । এপ্রিল মাসের শুরুতে দৈনিক সংক্রমণের হার ৮০ হাজার পেরিয়ে যায়, এরপর থেকে গড়ে সেই ধারাই চলছে। কোন দিন ২ হাজার কমলে তো পরের দিন ৫ হাজার বাড়ে। সর্বশেষ গত বুধবারও রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮৮ হাজার ২৮০ জন।
বিশ্বে গত ১১ জানুয়ারি করোনার সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু হয়।
করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১০টা নাগাদ বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যু ৩ লাখ ছাড়ায়। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি।
১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুর পর বিগত ৫০ বছরে করোনাই এখন সবচেয়ে প্রাণঘাতী মহামারি। হংকং ফ্লু কেড়ে নিয়েছিল ১০ লাখ মানুষের প্রাণ। ওই মহামারির পর এবং করোনার আগে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় মহামারি দেখা দিয়েছিল ১০ বছর আগে, ২০০৯-১০ সালে। ওই সময় সোয়াইন ফ্লুতে মারা যায় ২ লাখ মানুষ। তবে বিগত ১০০ বছরে সবচেয়ে বড় মহামারি ছিল ১৯১৮-১৯ সালের স্প্যানিশ ফ্লু। বৈশ্বিক এই মহামারিতে প্রাণ গিয়েছিল ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষের। এ ছাড়া ১৯৫৭-৫৮ সালের এশিয়ান ফ্লুতে মারা যায় ১১ লাখ মানুষ।
করোনা মহামারির সূত্রপাত চীনে হলেও এখন আর এই দেশটি সংক্রমিত শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে নেই। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৯২৯। এর মধ্যে গতকাল শনাক্ত হয়েছেন ৩ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন। তবে গত কয়েক দিনের মধ্যে দেশটিতে একজনেরও মৃত্যু হয়নি।
চীনের বাইরে পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি খারাপ হয় ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। আর এখন দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারতসহ কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দেশটিতে গত বুধবারও ১ হাজার ৭৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ৮৫ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
রোগীর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থানে এখন রাশিয়া। গতকাল দেশটিতে রোগীর সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়ায়। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৭৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে ২ লাখ ৫২ হাজার রোগী শনাক্ত হলেন। মারা গেছেন ২ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছেন ৯৩ জন।
রোগীর সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্য। তবে মৃত্যুর দিক থেকে এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় অবস্থানে। বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যে ২ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল দেশটিতে মারা গেছেন ৪২৮ জন। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে মৃত্যু হলো ৩৩ হাজার ৬১৪ জনের।
রয়টার্স জানায়, স্পেনে কয়েক দিন দৈনিক মৃত্যু কম থাকার পর গতকাল আবারও বেড়েছে। এ দিন মারা গেছেন ২১৭ জন। ৮ মের পর এই প্রথম দেশটিতে দৈনিক মৃত্যু ২০০ জনের ওপরে উঠল। দেশটিতে করোনায় মোট মারা গেছেন ২৭ হাজার ৩২১ জন, রোগী ২ লাখ ২৯ হাজার। ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে বুধবার করোনায় মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে।
এদিকে ব্রাজিলে বুধবার ১১ হাজার ৩৮৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগী ১ লাখ ৮৯ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ হাজারের বেশি রোগী। বুধবার দেশটিতে মৃত্যু হয় ৭৪৯ জনের।
এনডিটিভি জানায়, ভারতে রোগীর সংখ্যা গতকাল ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকালও শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি রোগী। মারা গেছেন আরও ১৩৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু আড়াই হাজার ছাড়াল। ডন জানায়, পাকিস্তানে রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ছুঁই ছুঁই। মারা গেছেন ৭৮৮ জন।